বাংলাদেশে পাকিস্তানের আইএসআই সম্প্রসারণ: ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য ক্রমবর্ধমান হুমকি

বাংলাদেশে পাকিস্তানের আইএসআই-এর দ্রুত সম্প্রসারণ ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি তৈরি করছে। পাকিস্তান–ডিজিএফআই যৌথ গোয়েন্দা কাঠামো, রোহিঙ্গা জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির, শিলিগুড়ি করিডর নজরদারি ও বঙ্গোপসাগরে সামরিক তৎপরতা ভারতের উত্তর-পূর্বে অস্থিতিশীলতা বাড়াতে পারে।

Pakistan ISI activity in Bangladesh map  Bangladesh India border security  Siliguri Corridor strategic map  Bay of Bengal maritime surveillance


বাংলাদেশে 2024 সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন বাস্তবতা তৈরি হয়েছে। সেই বাস্তবতার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI)—যারা বর্তমানে বাংলাদেশে নিজেদের উপস্থিতি দ্রুত ও সুসংগঠিতভাবে সম্প্রসারণ করছে। এই সম্প্রসারণ শুধু একটি দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ইস্যু নয়; বরং এটি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা বলয়ের ওপর অভূতপূর্ব চাপ সৃষ্টি করতে পারে—বিশেষ করে উত্তর-পূর্ব ভারত, শিলিগুড়ি করিডর, এবং বঙ্গোপসাগরীয় সামুদ্রিক অঞ্চল।

শেখ হাসিনা দীর্ঘ ১৫ বছর ক্ষমতায় থাকাকালে পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গি নেটওয়ার্কগুলোকে নিষ্ক্রিয় বা দমন করে রাখেন। কিন্তু তার পতনের পর যে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেছে—মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে—তাদের রাজনৈতিক অবস্থান এবং পররাষ্ট্রনীতি বাংলাদেশকে পাকিস্তানের নিরাপত্তা স্থাপত্যের দিকে ধীরে ধীরে টেনে নিচ্ছে। এই প্রেক্ষাপটে আইএসআই-এর নতুন কৌশলগত বিস্তার ভারতের জন্য আঞ্চলিক নিরাপত্তার দিক থেকে বড় উদ্বেগের কারণ।


১. বাংলাদেশে আইএসআই-এর নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো

ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনে আনুষ্ঠানিক আইএসআই সেল

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অফ স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মির্জার নেতৃত্বে একটি উচ্চ-পর্যায়ের সামরিক প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। সেই সফরে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ আইএসআই কর্মকর্তা। সফর শেষে পাক হাইকমিশনের ভিতরেই একটি আনুষ্ঠানিক আইএসআই সেল গঠিত হয়, যেখানে—

  • একজন ব্রিগেডিয়ার
  • দুইজন কর্নেল
  • চারজন মেজর
  • পাকিস্তান বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীর অফিসার
  • বিশেষ যোগাযোগ ও সিগন্যাল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট

সহ একাধিক সদস্য নিয়োগ করা হয়েছে।

এই কাঠামো দেখায় যে পাকিস্তান বাংলাদেশকে আর কেবলমাত্র কূটনৈতিক সম্পর্কের দেশে হিসেবে নয়, বরং একটি পূর্ণাঙ্গ গোয়েন্দা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করেছে।

যৌথ গোয়েন্দা-বিনিময় ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠা

এর থেকেও গুরুতর বিষয় হলো—আইএসআই-এর সঙ্গে বাংলাদেশের NSI (ন্যাশনাল সিকিউরিটি ইন্টেলিজেন্স) এবং DGFI (ডিরেক্টরেট জেনারেল অফ ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স)-এর মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক Joint Intelligence Sharing Mechanism গড়ে উঠেছে।

এটি শেখ হাসিনার আমলের তুলনায় এক ঐতিহাসিক মোড় পরিবর্তন। তখন পাকিস্তানপন্থী নেটওয়ার্ক দমন ছিল অগ্রাধিকার। এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।

গোপনীয় সফর: ভুয়া পরিচয়ে পাকিস্তান সফর

২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে DGFI-এর একটি গোপন প্রতিনিধি দল সম্পূর্ণ নতুন পরিচয় নিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করে। তাদের বাংলাদেশে প্রদত্ত পাসপোর্ট সংগ্রহ করা হয় এবং পাকিস্তানে পৌঁছানোর পর নতুন পরিচয়সহ প্রতিস্থাপন পাসপোর্ট দেওয়া হয়।

এ ধরনের কার্যক্রম সাধারণত দুই দেশের মধ্যে গভীর গুপ্তচর সহযোগিতা ছাড়া সম্ভব হয় না। এটা কেবল বন্ধুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের মধ্যে তথ্য বিনিময় নয়—বরং উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ গোপন সামরিক-গোয়েন্দা কার্যক্রমের ইঙ্গিত

বিদ্যুৎ চুক্তি, রাজনৈতিক উপনেতা ও বাতিল-বিবাদী বিপর্যয়: আদানির বড় ধাঁধা


২. যে এলাকাগুলোকে লক্ষ্য করছে আইএসআই: ভারতের জন্য কৌশলগত বিপদ

ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাগুলির তথ্য অনুযায়ী আইএসআই তাদের নেটওয়ার্ক বিস্তারের জন্য যেসব এলাকাকে বেছে নিয়েছে, তার বেশিরভাগই পূর্ব পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ঘাঁটি ও গোয়েন্দা নোড ছিল:

  • কক্সবাজার
  • উখিয়া
  • টেকনাফ
  • মৌলভীবাজার
  • হবিগঞ্জ
  • শেরপুর

এই এলাকাগুলো তিনটি প্রধান কারণে ভারতের জন্য বিপজ্জনক:

(ক) শিলিগুড়ি করিডর নজরদারি

শিলিগুড়ি করিডর, যাকে ভারতের "চিকেনস নেক" বলা হয়, মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া। এই অংশ দিয়ে ভারতের প্রধান ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব ভারত সংযুক্ত করে।

মৌলভীবাজার, সিলেট, হবিগঞ্জ এলাকা থেকে—

  • শিলিগুড়ি
  • উত্তরবঙ্গ
  • ভুটান ও নেপালের সীমান্ত
  • উত্তর পূর্ব ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থা

সহজে নজরদারি করা যায়।

১৯৯৯ সালের নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন বোমা হামলা—যেখানে মাত্র ১ কেজি বিস্ফোরকে ৯ জন নিহত হয়—এটি ছিল পাকিস্তানের আইএসআই পরিচালিত একটি অপারেশন। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আবার সক্রিয় হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।

(খ) উত্তর-পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেটওয়ার্ক পুনরুজ্জীবন

২০শ শতকের শেষভাগে ULFA, NSCN, Naga ফ্যাকশন, Bodo গ্রুপসহ প্রায় সব বড় বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনের প্রশিক্ষণ শিবির বাংলাদেশে ছিল।

শেখ হাসিনার সময় এগুলো নিষ্ক্রিয় করা হলেও ধ্বংস করা হয়নি।

এখন আইএসআই আবারও—

  • পুরোনো নেটওয়ার্ক
  • আত্মগোপনে থাকা নেতারা
  • লোকাল সাপোর্ট বেস
  • চোরাচালান রুট
  • অস্ত্র ডিপো

এসব সক্রিয় করার চেষ্টা করছে।

(গ) বঙ্গোপসাগর ও ভারতের পূর্ব উপকূল নজরদারি

কক্সবাজার ও টেকনাফ উপকূলকে আইএসআই ব্যবহার করছে—

  • ভারতীয় নৌবাহিনীর নড়াচড়া ট্র্যাক
  • আন্দামান–নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ পর্যবেক্ষণ
  • ভারতীয় বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল নজরদারি

এগুলোর মাধ্যমে পাকিস্তান প্রথমবারের মতো বঙ্গোপসাগরে সুপরিকল্পিত টেকনিক্যাল ইন্টেলিজেন্স অপারেশন শুরু করেছে।


৩. গোয়েন্দা-শেয়ারিংয়ের প্রধান লক্ষ্য: ভারতের দুই দুর্বল অঞ্চল

(১) ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল

উত্তর-পূর্ব ভারতে সক্রিয় বা অক্রিয় মিলিয়ে ১৪০টিরও বেশি বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন রয়েছে। আইএসআই-DGFI যৌথ নেটওয়ার্ক—

  • ঘাসফুল সীমান্ত (Meghalaya)
  • দাউকি রুট
  • ত্রিপুরা–বাংলাদেশ সীমান্ত
  • মিজোরাম সীমান্ত

ব্যবহার করে নতুনভাবে ইনফিলট্রেশন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

ইন্দো–বাংলাদেশ সীমান্তের ১,৮৮০ কিলোমিটারের একটি বড় অংশ এখনো—

  • অসম্পূর্ণভাবে বেড়াবিহীন
  • পাহাড়ি
  • বনাঞ্চলপূর্ণ
  • নদীঘেরা

যা অনুপ্রবেশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।

(২) বঙ্গোপসাগরের সামুদ্রিক অঞ্চল

বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হলো—আইএসআই ও বাংলাদেশের মধ্যে বিমান ও নৌসীমান্ত নজরদারি সংক্রান্ত তথ্য এখন যৌথভাবে ভাগ হচ্ছে।

এতে পাকিস্তান পাবে—

  • পূর্ব নৌঘাঁটি ভিশাখাপত্তনম সম্পর্কে তথ্য
  • আন্দামান–নিকোবরের সামরিক তৎপরতার সংকেত
  • ভারতীয় সাবমেরিন প্যাটার্ন
  • বাণিজ্যিক শিপিং ডেটা
  • ভারতীয় উপকূল রাডার সিস্টেমে আংশিক প্রবেশাধিকার

৪. জঙ্গি অবকাঠামো বিস্তার: রোহিঙ্গা যোদ্ধা নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ শিবির

বাংলাদেশে তিনটি প্রধান মিলিট্যান্ট প্রশিক্ষণ শিবির সক্রিয় হয়েছে—

(১) নাইখংছড়ি ক্যাম্প (বান্দরবান)

  • ৫০+ রোহিঙ্গা যুবক
  • অস্ত্র প্রশিক্ষণ
  • IED বানানো
  • মানচিত্র পড়া
  • ইনফিলট্রেশন কৌশল
  • গেরিলা যুদ্ধ

শিবিরটি পরিচালনা করছেন—

  • সাবেক পাকিস্তান SSG অফিসার
  • অবসরপ্রাপ্ত বাংলাদেশি প্যারা কমান্ডো ব্রিগেড সদস্য

(২) ব্রাহ্মণবাড়িয়া—টিটাস নদীর ধারে

এখানে প্রশিক্ষণ নিচ্ছে—

  • ১৫ জন ABT (আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) জঙ্গি
  • জামায়াতে ইসলামী সংশ্লিষ্ট নেটওয়ার্ক

মেঘালয়ের দাউকি সীমান্ত এখান থেকে খুব কাছেই—যা ভারত প্রবেশের প্রধান রুট।

(৩) সিলেটের খাদিমনগর ন্যাশনাল পার্ক

এখানে রয়েছে—

  • ভূগর্ভস্থ বাঙ্কার
  • অস্ত্র মজুদ
  • DGFI অফিসারের তত্ত্বাবধান

তাদের টার্গেট: মিয়ানমার নয়, ভারত

রোহিঙ্গা যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ মিয়ানমারের রাখাইন এলাকায় যুদ্ধের জন্য নয় বরং—

  • ত্রিপুরা
  • মিজোরাম
  • আসাম

অঞ্চলে অনুপ্রবেশের জন্য হচ্ছে। তাদের মডিউলে রয়েছে—

  • যোগাযোগ কাঠামো ধ্বংস
  • ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীতে অনুপ্রবেশ
  • লক্ষ্যবস্তু হত্যা
  • ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ

৫. রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: শেখ হাসিনা পতন ও মুহাম্মদ ইউনুসের উত্থান

মুহাম্মদ ইউনুস সরকার প্রকাশ্যেই ভারত-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। এর ফলে পাকিস্তান রাজনৈতিকভাবে নতুন সুযোগ পেয়েছে।

এসব কারণে:

  • ইউনুস বলেছেন, "ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যসমূহ স্থলবেষ্টিত, বাংলাদেশই একমাত্র সমুদ্ররক্ষক।"
  • তার উপদেষ্টারা বলেছে, ভারত থেকে জমি "দখল" করা উচিত।
  • জামায়াতে ইসলামী নেতা তাহের হুমকি দিয়েছেন—ক্ষমতায় এলে ভারত আক্রমণ করবেন।
  • সাবেক BDR প্রধান ফজলুর রহমান বলেছেন—যুদ্ধ লাগলে বাংলাদেশ ভারতের সাতটি রাজ্য দখল করে নেবে।

এই পরিবেশ আইএসআই-কে বাংলাদেশে উন্মুক্ত আশ্রয় দিয়েছে।

ভারতের চাপের সামনে আড়াইহাজার কোটি টাকার প্রশ্ন: জানেন কি নায়েক ঘটনাটির পেছনের সত্য?


৬. ইতিহাস থেকে শিক্ষা: ১৯৭৫–২০০৮ সময়ে আইএসআই নেটওয়ার্ক

১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশ ছিল—

  • ULFA
  • NSCN
  • Bodo
  • Naga

দ্বারা ব্যবহৃত আইএসআই-সমর্থিত জঙ্গি লঞ্চপ্যাড।

কিছু তথ্য:

  • ২০০ জনের বেশি ULFA সদস্য পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ নিয়েছে।
  • ১৯৮৯ সালে ULFA-র ১৩–১৪টি সক্রিয় ক্যাম্প ছিল বাংলাদেশে।
  • ১৯৯৬ সালে আটক হয়েছিল—
    • ৫০০+ AK-47
    • ৮০ LMG
    • ৫০ রকেট লঞ্চার
    • ২০০০ গ্রেনেড

এই ঐতিহাসিক অবকাঠামোর অনেকটাই এখনো নিস্তব্ধভাবে বিদ্যমান—যা এখন পুনরুজ্জীবনের ঝুঁকিতে।


৭. ভারতের প্রতিক্রিয়া: সতর্কতা বাড়লেও কাঠামোগত দুর্বলতা রয়ে গেছে

ভারতের পদক্ষেপ

  • উত্তর-পূর্বে High Alert
  • BSF, Assam Rifles, স্টেট পুলিশ—রাতব্যাপী নজরদারি
  • ত্রিপুরা, আসাম, মেঘালয় সীমান্তে সাঁড়াশি অভিযান
  • ইলেকট্রনিক নজরদারি বৃদ্ধি

তবে সমস্যা হলো—

  • বড় অংশ বেড়াবিহীন
  • পাহাড়ি জঙ্গল এলাকায় নজরদারি অসম্ভব
  • নেপাল সীমান্ত (১৪৪ কিমি) সম্পূর্ণ খোলা
  • মিজোরাম ও মেঘালয়ে নদীঘেরা সীমান্ত

৮. বঙ্গোপসাগরের নিরাপত্তা: ভারতের ঘেরাওয়ের শঙ্কা

পাকিস্তান-বাংলাদেশ নৌ-ইন্টেলিজেন্স সহযোগিতার ফলে, পাকিস্তান সম্ভবত পাবে—

  • ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজের অবস্থান তথ্য
  • সাবমেরিন ট্র্যাক
  • আন্দামান–নিকোবরের সামরিক তৎপরতার আপডেট
  • পূর্ব ভারতের জ্বালানি নিরাপত্তা সংক্রান্ত তথ্য

আরও বড় উদ্বেগ—চীনের অংশগ্রহণ। চট্টগ্রাম গভীর সমুদ্র বন্দর এবং মিয়ানমারের কিয়াকফিউ বন্দর ইতিমধ্যেই চীনের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাকিস্তান–চীন–বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক মিলে ভারতের পূর্ব ও দক্ষিণ দিককে স্ট্র্যাটেজিকভাবে ঘিরে ফেলার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।


৯. কেন এখন? শেখ হাসিনা পতনের ধাক্কা

২০০৯–২০২৪ পর্যন্ত শেখ হাসিনার সরকার ভারতের নিরাপত্তার জন্য এক নিরাপদ বাফার তৈরি করেছিল। তার সরকারের—

  • আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাস দমন
  • ULFA প্রধান আনুপ চেটিয়া প্রত্যর্পণ
  • JMB ও ABT নেটওয়ার্ক ধ্বংস
  • সীমান্তে যৌথ অপারেশন

ভারতের উত্তর-পূর্বে স্থিতিশীলতা বজায় রেখেছিল।

তার পতনের পর—

  • পাকিস্তান
  • জামায়াত
  • রোহিঙ্গা নেটওয়ার্ক
  • কিছু সামরিক ও গোয়েন্দা গোষ্ঠী

মিলে বাংলাদেশকে নতুন নিরাপত্তা কাঠামোর দিকে টেনে এনেছে।


১০. ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা বাস্তবতা: ভারতের জন্য কৌশলগত চ্যালেঞ্জ

আইএসআই-এর বাংলাদেশ বিস্তার মানে:

(১) উত্তর-পূর্বে বিচ্ছিন্নতাবাদ পুনরুজ্জীবনের ঝুঁকি

ULFA, NSCN-IM, Bodo ফ্যাকশনগুলো আবার সক্রিয় হতে পারে।

(২) শিলিগুড়ি করিডরের ওপর চাপ

ভারতের ভূখণ্ডকে ভৌগোলিকভাবে দুই ভাগে কেটে দেওয়ার আশঙ্কা বাড়ে।

(৩) বঙ্গোপসাগরে পাকিস্তানের নজরদারি

ভারতের নৌসামরিক আধিপত্যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হবে।

(৪) পাকিস্তান–চীন–বাংলাদেশ নতুন অক্ষ

এটি হবে ভারতের জন্য নতুন পূর্বাঞ্চলীয় নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জের উৎস


উপসংহার

বাংলাদেশে আইএসআই-এর বর্তমান সম্প্রসারণ দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ভারসাম্যকে পুনর্গঠিত করছে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, শিলিগুড়ি করিডর এবং বঙ্গোপসাগর—এই তিনটি নিরাপত্তা অঞ্চলে পাকিস্তান এখন একটি সংগঠিত, বহুমাত্রিক ঝুঁকি তৈরি করছে।

ভারতের প্রতিক্রিয়া—

  • সীমান্ত অবকাঠামো শক্তিশালীকরণ
  • উন্নত নজরদারি প্রযুক্তি
  • উত্তর-পূর্বের শান্তি প্রক্রিয়া মজবুতকরণ
  • বঙ্গোপসাগরীয় নৌতৎপরতা বাড়ানো

হতে হবে দীর্ঘমেয়াদী ও কৌশলগত।

দক্ষিণ এশিয়ার পরবর্তী নিরাপত্তা অধ্যায় নির্ভর করবে—ভারত কতটা কার্যকরভাবে এই পুনরুজ্জীবিত পাকিস্তানি নেটওয়ার্ককে প্রতিহত করতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4