![]() |
| ২০২৫ সালে মেসির কলকাতা সফর |
মেসি–কলকাতা কাণ্ড: সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ ও প্রকৃত সত্য
গুরুত্বপূর্ণ স্পষ্টীকরণ: মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আসলে কী বলেছিলেন
এই বিতর্ক বোঝার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল— পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় লিওনেল মেসিকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক মন্তব্য করেননি।
তিনি মেসির সমালোচনা করেননি, অপমান করেননি বা দায় চাপাননি। বরং পুরো ঘটনার দায় স্বীকার করে ইভেন্টের ভয়াবহ অব্যবস্থাপনার জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।
Why Did the Messi Kolkata Incident Turn Into a Major Controversy?
The Messi Kolkata incident escalated into a national and international controversy due to severe event mismanagement, VIP culture blocking fans’ views, and crowd control failures at Salt Lake Stadium. West Bengal Chief Minister Mamata Banerjee did not criticize Lionel Messi; instead, she publicly apologized to him and the fans, ordered a judicial inquiry, and acknowledged organizational lapses. Despite this, the chaos, vandalism, and global media coverage damaged India’s international image as a host for major sporting events.
এই স্পষ্টীকরণটি অত্যন্ত জরুরি, কারণ সোশ্যাল মিডিয়া ও রাজনৈতিক বিতর্কে বিষয়টি অনেক সময় বিকৃতভাবে উপস্থাপিত হয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঠিক কী বলেছিলেন
সল্টলেক স্টেডিয়ামে বিশৃঙ্খলার পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেন, সেখানে তিনি বলেন—
“সল্টলেক স্টেডিয়ামে আজ যে ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে, তাতে আমি গভীরভাবে মর্মাহত ও স্তম্ভিত। আমি নিজেও হাজার হাজার ক্রীড়াপ্রেমী ও ভক্তদের সঙ্গে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলাম, যাঁরা তাঁদের প্রিয় ফুটবলার লিওনেল মেসির এক ঝলক দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন।”
এরপর তিনি প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে বলেন—
“এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে লিওনেল মেসি ও সমস্ত ক্রীড়াপ্রেমী এবং তাঁর অনুরাগীদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।”
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল—
এই বক্তব্যে মেসির প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। বরং তাঁকেই ভুক্তভোগী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও মুখ্যমন্ত্রী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশিম কুমার রায়ের নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা করেন, যার কাজ ছিল ঘটনার দায় নির্ধারণ এবং দোষীদের চিহ্নিত করা।
যে ঘটনা পুরো সংকটের সূত্রপাত করেছিল
২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর, আর্জেন্টিনার ফুটবল মহাতারকা লিওনেল মেসি তাঁর “GOAT Tour” (Greatest Of All Time)–এর অংশ হিসেবে কলকাতায় আসেন।
৭০ ফুট মেসি মূর্তি
সেদিন সকালেই শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাবে মেসির একটি ৭০ ফুট উচ্চতার মূর্তি ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করা হয়।
মূর্তিতে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ ট্রফি হাতে মেসিকে দেখানো হয়।
এই মূর্তিটি:
-
২৭ দিনে নির্মিত
-
৪৫ জন শিল্পী ও শ্রমিক যুক্ত ছিলেন
-
নিরাপত্তাজনিত কারণে মেসি সরাসরি উপস্থিত থাকতে পারেননি
এই ঘটনাটিই ভবিষ্যতের সংকেত ছিল— নিরাপত্তা ও পরিকল্পনার ঘাটতি।
সল্টলেক স্টেডিয়ামের মূল অনুষ্ঠান
মেসির কলকাতা সফরের প্রধান আকর্ষণ ছিল বিবেকানন্দ যুব ভারতী ক্রীড়াঙ্গণ (সল্টলেক স্টেডিয়াম)–এর অনুষ্ঠান।
-
টিকিটের দাম: ₹৩,৫০০ থেকে ₹১৪,০০০
-
হাজার হাজার দর্শক
-
অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছিলেন
-
প্রত্যাশা ছিল:
-
দীর্ঘ সময় মেসির উপস্থিতি
-
অন্তত ১ ঘণ্টা
-
সম্ভব হলে প্রদর্শনী ম্যাচ বা পেনাল্টি শট
-
কিন্তু বাস্তবতা ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
কেন এই অনুষ্ঠান জাতীয় কেলেঙ্কারিতে পরিণত হল
১. অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত উপস্থিতি
মেসি স্টেডিয়ামে ছিলেন মাত্র ১০–২০ মিনিট।
ভিড় ও নিরাপত্তাজনিত কারণে তাঁকে দ্রুত বের করে নিয়ে যাওয়া হয়।
যাঁরা হাজার হাজার টাকা খরচ করেছিলেন, তাঁদের কাছে এটি ছিল একপ্রকার প্রতারণার মতো।
২. VIP ঘেরাটোপ – মূল সমস্যা
সবচেয়ে বিতর্কিত ও ক্ষোভের কারণ ছিল VIP সংস্কৃতি।
মেসির চারপাশে একটি মানব-দেয়াল তৈরি করা হয়, যেখানে ছিলেন—
-
রাজনৈতিক নেতা (তৃণমূল কংগ্রেস)
-
উচ্চপদস্থ পুলিশ
-
নিরাপত্তারক্ষী
-
অভিনেতা শাহরুখ খান
-
অন্যান্য সেলিব্রিটি
এর ফলে সাধারণ দর্শকরা:
-
মেসির মুখও ঠিকভাবে দেখতে পাননি
-
কেউ কেউ বলেন, “চোখের সামনেই ছিল, কিন্তু দেখা যায়নি”
একজন দর্শকের মন্তব্য ছিল—
“আমরা ১২ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি। কিন্তু শুধু নেতাদের পিঠ দেখেছি।”
৩. ক্ষোভ থেকে সহিংসতা
মেসি দ্রুত চলে যাওয়ার পর পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়।
ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়—
-
দর্শকরা মাঠে নেমে পড়ে
-
ফাইবারগ্লাসের চেয়ার ভেঙে ফেলা হয়
-
বোতল, চেয়ার ছোড়া হয়
-
ব্যানার, ত্রিপল ছিঁড়ে ফেলা হয়
-
গোলপোস্টের জাল খুলে নেওয়া হয়
-
মঞ্চের ছাউনি আংশিকভাবে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়
পরিস্থিতি সামাল দিতে:
-
Rapid Action Force নামানো হয়
-
লাঠিচার্জ হয়
মিজোরাম থেকে ১৫০০ কিমি দূরত্ব পাড়ি দিয়ে আসা এক দর্শক বলেন—
“মেসি ভয় পেয়ে চলে গেলেন। আমি ঠিকমতো দেখতেই পেলাম না।”
মানুষ আসলে কীতে ‘শকড’ হয়েছিল
মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যে নয়, ঘটনার ভয়াবহ ব্যর্থতায় স্তম্ভিত হয়েছিল।
চরম অব্যবস্থাপনা
-
পুলিশও পরিস্থিতি সামলাতে ব্যর্থ
-
একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে এক পুলিশ অফিসার মেসির কাছে পৌঁছাতে পারছেন না
-
মেসির নিরাপত্তারক্ষীরা বিরক্ত ও হতভম্ব
প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ
অনেক দর্শক জানিয়েছেন—
-
ম্যাচ হবে বলা হয়েছিল
-
পেনাল্টি শট হবে বলা হয়েছিল
-
বাস্তবে কিছুই হয়নি
একজন বলেন—
“একটাও শট খেলেননি। ১০ মিনিট এসে চলে গেলেন। আমাদের টাকা, সময়, আবেগ—সব নষ্ট।”
AIFF সম্পূর্ণ দায় অস্বীকার
অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (AIFF) স্পষ্ট জানায়—
-
তারা এই ইভেন্টে জড়িত নয়
-
কোনো অনুমতিই চাওয়া হয়নি
ইভেন্ট আয়োজক সতদ্রু দত্ত–কে পুলিশ আটক করে।
কীভাবে এটি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিতর্কে পরিণত হল
ধাপ ১: সোশ্যাল মিডিয়া বিস্ফোরণ
-
কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ভিডিও ভাইরাল
-
টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, রেডিটে তর্ক
-
কেউ ভক্তদের দোষ দেয়
-
কেউ আয়োজকদের
ধাপ ২: রাজনৈতিক আক্রমণ
বিজেপি তীব্র আক্রমণ শুরু করে।
প্রদীপ ভাণ্ডারি বলেন—
“এটি আন্তর্জাতিক স্তরে অপমান।”
অমিত মালব্য বলেন—
“রাজ্য ক্রীড়ামন্ত্রীর পদত্যাগ করা উচিত।”
শুভেন্দু অধিকারী গ্রেপ্তারের দাবি তোলেন।
ধাপ ৩: আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম
বিশ্বের বড় বড় সংবাদমাধ্যমে খবর হয়—
-
BBC
-
The Guardian
-
Reuters
-
New York Times
-
Buenos Aires Times
শিরোনামগুলিতে বারবার উঠে আসে—
“Chaos”, “Angry fans”, “Mismanagement”
ভারতের ভাবমূর্তির ওপর প্রভাব
আন্তর্জাতিক ইমেজ ক্ষতি
বিশ্লেষকরা বলেন—
-
এটি ভারতের জনসমাগম ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা তুলে ধরেছে
-
অলিম্পিক বা বড় ক্রীড়া আয়োজনের যোগ্যতা প্রশ্নের মুখে
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেন—
“ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য এমন ইভেন্ট আয়োজন উল্টো ফল দিয়েছে।”
জনমত ও প্রতিক্রিয়া
সাধারণ মানুষের ক্ষোভ
-
টিকিট ফেরতের দাবি
-
VIP সংস্কৃতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
-
লজ্জা ও হতাশা
তৃণমূলের অবস্থান
কুনাল ঘোষ বলেন—
“আয়োজকদের ব্যর্থতার জন্য সবাই বঞ্চিত হয়েছে।”
রাজ্যপালের হস্তক্ষেপ
রাজ্যপাল সি.ভি. আনন্দ বোস বলেন—
-
আয়োজকের গ্রেপ্তার
-
টাকা ফেরত
-
ক্ষতিপূরণ
বৃহত্তর প্রভাব
ভবিষ্যৎ ক্রীড়া ইভেন্ট
এই ঘটনা প্রশ্ন তোলে—
-
ভারত কি বড় ক্রীড়া ইভেন্টের জন্য প্রস্তুত?
মেসির ভারতের স্মৃতি
যদিও তিনি অন্য শহরে যান,
কলকাতার স্মৃতি সম্ভবত নেতিবাচকই থাকবে।
Messi Kolkata Incident – Key FAQs Explained
Why did Lionel Messi leave the Kolkata event so quickly?
Messi stayed only 10–20 minutes due to severe overcrowding, crowd surges, and security concerns at Salt Lake Stadium, forcing organizers to cut his appearance short.
Did Mamata Banerjee criticize Lionel Messi?
No. Mamata Banerjee did not criticize Messi. She publicly apologized to him and the fans, acknowledged event mismanagement, and ordered a judicial inquiry.
What went wrong at Salt Lake Stadium?
The event suffered from poor planning, VIP culture blocking fans’ views, lack of crowd control, unrealistic promises to ticket holders, and inadequate security coordination.
Why were fans so angry despite buying expensive tickets?
Fans paid ₹3,500–₹14,000 expecting a longer appearance or exhibition match, but many could not even see Messi due to VIP barricades and his abrupt exit.
Was the All India Football Federation (AIFF) involved?
No. AIFF officially stated it had no role in organizing the event and that the organizers did not seek any approval from the federation.
How did this incident affect India’s global image?
International media coverage highlighted crowd mismanagement and chaos, raising concerns about India’s readiness to host major international sporting events.
উপসংহার: মূল শিক্ষা
মেসির কাছে ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে যে ঘটনা শুরু হয়েছিল, তা শেষ পর্যন্ত প্রকাশ করে দিয়েছে—
-
ভয়াবহ অব্যবস্থাপনা
-
VIP সংস্কৃতির দাপট
-
সাধারণ মানুষের অবহেলা
-
আন্তর্জাতিক স্তরে ভারতের ভাবমূর্তির ক্ষতি
এটি শুধু একটি ফুটবল ইভেন্টের ব্যর্থতা নয়—
এটি একটি জাতীয় সতর্কবার্তা।
