![]() |
Pakistan faces strict IMF conditions amid rising debt, weak growth, and governance challenges. |
বর্তমান সংকটের সার্বিক প্রেক্ষাপট
পাকিস্তান বর্তমানে তার অর্থনৈতিক ইতিহাসের অন্যতম সংকটপূর্ণ পর্যায়ে দাঁড়িয়ে আছে। দীর্ঘদিনের কাঠামোগত দুর্বলতা, দুর্নীতি, কর-ব্যবস্থার ব্যর্থতা, জ্বালানি খাতে বিশাল লোকসান এবং রাজনৈতিক অস্থিরতার ফলে দেশটি কার্যত দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IMF) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পাকিস্তানের জন্য ৭ বিলিয়ন ডলারের একটি বেইলআউট প্যাকেজ অনুমোদন করে।
এই প্যাকেজটি ৩৭ মাসের Extended Fund Facility (EFF) কাঠামোর অধীনে দেওয়া হয়। এর পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য Resilience and Sustainability Facility (RSF) থেকে অতিরিক্ত ১.৪ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ করা হয়। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান তিন দফায় মোট ৩.৩ বিলিয়ন ডলার পেয়েছে, যার মধ্যে সর্বশেষ ১.২ বিলিয়ন ডলারের কিস্তি ৮ ডিসেম্বর ২০২৫-এ অনুমোদিত হয়।
তবে এই আর্থিক সহায়তা কোনোভাবেই নিঃশর্ত নয়। বরং IMF যে শর্তাবলি আরোপ করেছে, সেগুলি পাকিস্তানের শাসনব্যবস্থা, করনীতি, জ্বালানি খাত, দুর্নীতি দমন কাঠামো এবং বাজার ব্যবস্থার গভীরে হস্তক্ষেপ করেছে। এই শর্তগুলিই প্রকাশ করে দিয়েছে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক সংকটের প্রকৃত গভীরতা।
What Is Pakistan’s IMF Bailout Crisis?
Pakistan’s IMF bailout crisis refers to the country’s repeated dependence on IMF loans to avoid sovereign default due to chronic fiscal deficits, weak tax collection, energy sector losses, rising public debt, and governance failures.
In 2024, the IMF approved a $7 billion Extended Fund Facility, imposing 64 strict conditions covering taxation, energy privatization, corruption control, and institutional reforms. While the bailout has stabilized Pakistan temporarily, it has not resolved the deep structural problems driving recurring crises.
৬৪টি শর্ত ও নতুন ১১টি কাঠামোগত বেঞ্চমার্ক
IMF এই কর্মসূচির আওতায় মোট ৬৪টি কঠোর শর্ত আরোপ করেছে, যার মধ্যে ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে দ্বিতীয় পর্যালোচনার সময় আরও ১১টি নতুন শর্ত যোগ করা হয়। এই শর্তগুলি শুধুমাত্র মুদ্রাস্ফীতি, বাজেট ঘাটতি বা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের মতো প্রচলিত সূচকে সীমাবদ্ধ নয়। বরং এগুলি সরাসরি পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ব্যর্থতা ও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতিকে লক্ষ্য করে তৈরি।
১. সম্পদ ঘোষণার স্বচ্ছতা
২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে পাকিস্তান সরকারকে কেন্দ্রীয় সরকারের শীর্ষস্থানীয় আমলাদের সম্পদের বিবরণ সরকারি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। ভবিষ্যতে এই নিয়ম প্রাদেশিক কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে। IMF-এর Governance and Corruption Diagnostic Assessment (GCDA)–এ স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে যে পাকিস্তানে দুর্নীতি কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়, বরং এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাঠামোর সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
২. কর ব্যবস্থার মৌলিক সংস্কার
পাকিস্তানকে ৩ থেকে ৫ বছরের একটি মধ্যমেয়াদি কর সংস্কার কৌশল প্রকাশ করতে হবে। এর মধ্যে কর নীতি, প্রশাসন ও আইনি সংস্কারের একটি ধাপে ধাপে রোডম্যাপ থাকতে হবে। বর্তমানে পাকিস্তানের Tax-to-GDP ratio প্রায় ১২ শতাংশ, যা OECD দেশগুলির গড় ৩৪ শতাংশের তুলনায় অত্যন্ত কম। বিশ্বব্যাংকের মতে, পাকিস্তানের সম্ভাব্য কর সংগ্রহ ক্ষমতা প্রায় ২২.৩ শতাংশ, কিন্তু বাস্তবে তা অর্জিত হচ্ছে না।
৩. জ্বালানি খাতে বেসরকারিকরণ
IMF শর্ত দিয়েছে যে ২০২৫ সালের শেষের মধ্যে HESCO এবং SEPCO–র মতো বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থায় বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণের পূর্বশর্ত চূড়ান্ত করতে হবে। এটি পাকিস্তানের দীর্ঘস্থায়ী circular debt সমস্যার মূল কারণগুলির একটি।
ভবিষ্যৎ শর্ত (২০২৬ পর্যন্ত)
-
১০টি উচ্চঝুঁকিপূর্ণ সরকারি বিভাগে দুর্নীতি মোকাবিলার জন্য আলাদা অ্যাকশন প্ল্যান
-
রেমিট্যান্স খরচ ও সীমান্তপারের পেমেন্ট ব্যবস্থার বিশ্লেষণ
-
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, চিনি বাজার উদারীকরণ, যাতে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণ ভাঙা যায়
পাকিস্তানের ঋণ সংকট: পাহাড়সম বোঝা
২০২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত সরকারি ঋণের চিত্র
২০২৫ সালের মার্চ শেষে পাকিস্তানের মোট সরকারি ঋণ দাঁড়ায় ৭৬.০১ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি রুপি, অর্থাৎ প্রায় ২৬৭.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে:
-
ঘরোয়া ঋণ: ৫১.৫২ ট্রিলিয়ন রুপি
-
বৈদেশিক ঋণ: ২৪.৪৯ ট্রিলিয়ন রুপি
২০২৫-২৬ অর্থবর্ষে পাকিস্তানকে ২৩ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে প্রায় ১২ বিলিয়ন ডলার আসবে ‘বন্ধু রাষ্ট্র’গুলির রোলওভার থেকে—
সৌদি আরব (৫ বিলিয়ন), চীন (৪ বিলিয়ন), সংযুক্ত আরব আমিরাত (২ বিলিয়ন) ও কাতার (১ বিলিয়ন)।
Debt-to-GDP অনুপাত
বিদ্যুৎ খাতের circular debt যুক্ত করলে পাকিস্তানের Debt-to-GDP ratio প্রায় ৮১ শতাংশ, যা উদীয়মান অর্থনীতিগুলির গড় (৬০–৬৫ শতাংশ) থেকে অনেক বেশি। সবচেয়ে উদ্বেগজনক দিক হলো—
নেট ফেডারেল আয়ের ৮২.৭ শতাংশ চলে যাচ্ছে শুধু ঋণের সুদ ও কিস্তি পরিশোধে।
এর ফলে উন্নয়ন ব্যয় ও সামাজিক খাতে সরকারের ব্যয় করার কার্যত কোনো জায়গা থাকছে না।
শাসনব্যবস্থা ও দুর্নীতির গভীর সংকট
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে প্রকাশিত IMF-এর Governance and Corruption Diagnostic Assessment পাকিস্তানের জন্য অত্যন্ত কঠোর ভাষায় লেখা। রিপোর্টে দুর্নীতিকে “persistent and corrosive” বলে অভিহিত করা হয়েছে—অর্থাৎ এটি অর্থনীতিকে ভিতর থেকে ক্ষয় করছে।
গত দুই দশকের আন্তর্জাতিক সূচক অনুযায়ী, দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে পাকিস্তান বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পারফরমারদের মধ্যে রয়েছে।
IMF-এর হিসাব অনুযায়ী, প্রকৃত সংস্কার হলে পাকিস্তান আগামী পাঁচ বছরে GDP ৫–৬.৫ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে পারে। অথচ ২০২৩–২৪ সালের মধ্যে সরকার যে ৫.৩ ট্রিলিয়ন রুপি দুর্নীতি উদ্ধার দেখিয়েছে, IMF বলছে—এটি মোট ক্ষতির “খুবই সামান্য অংশ”।
গুরুত্বপূর্ণ দুর্বলতা
-
বিচারব্যবস্থা ধীর, জটিল ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপে ভরা
-
৬৮ শতাংশ পাকিস্তানি মনে করেন দুর্নীতি দমন সংস্থাগুলি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার
-
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি (SOEs) GDP-র প্রায় ৪৮ শতাংশের সমান
-
Special Investment Facilitation Council (SIFC)—একটি সিভিল-মিলিটারি কাঠামো—বিনিয়োগ সিদ্ধান্তে অতিরিক্ত ক্ষমতা পাচ্ছে, যার স্বচ্ছতা প্রশ্নবিদ্ধ
অর্থনৈতিক পারফরম্যান্স ও ভবিষ্যৎ পূর্বাভাস
মুদ্রাস্ফীতি
২০২৩ সালের মে মাসে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ভয়াবহ—৩৭.৯৭ শতাংশ। ২০২৫ অর্থবর্ষে তা নেমে আসে ৪.৫ শতাংশে, যা ঐতিহাসিকভাবে কম। তবে বন্যা ও জলবায়ুজনিত সমস্যার কারণে ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বরে তা আবার ৬ শতাংশের ওপরে ওঠে।
IMF-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৬ অর্থবর্ষে গড় মুদ্রাস্ফীতি হবে ৬.৩ শতাংশ।
প্রবৃদ্ধি
২০২৫ অর্থবর্ষে GDP প্রবৃদ্ধি ছিল ২.৭ শতাংশ, যেখানে সরকারের লক্ষ্য ছিল ৪.২ শতাংশ। IMF মনে করছে ২০২৬ সালে তা ৩.৬ শতাংশে উঠতে পারে। তবে বিশ্বব্যাংক ও ADB আরও রক্ষণশীল—তাদের অনুমান যথাক্রমে ৩.১ ও ৩.০ শতাংশ।
কর্মসংস্থান
২০২৫ সালে বেকারত্ব ছিল ৮.৩ শতাংশ, যা ২০২৬ সালে নেমে আসবে ৭.৫ শতাংশে। কিন্তু সমস্যার মূল হলো—
পাকিস্তানের ৮০ শতাংশ শ্রমিক অনানুষ্ঠানিক খাতে, কোনো সামাজিক সুরক্ষা ছাড়াই কাজ করেন।
Pakistan IMF Bailout 2025: Key Numbers at a Glance
- Total IMF package: $7B (EFF) + $1.4B (RSF)
- Amount received (Dec 2025): $3.3B
- IMF conditions: 64 + 11 new benchmarks
- Public debt: $267B (≈81% of GDP incl. circular debt)
- Debt servicing: 82.7% of federal revenue
- Tax-to-GDP ratio: ~12%
- GDP growth (FY25): 2.7%
- Projected growth (FY26): 3–3.6%
Bottom line: Pakistan’s economy is stabilized, not transformed.
প্রধান কাঠামোগত ঝুঁকি
বিদ্যুৎ খাতের Circular Debt
২০২৫ সালের জুলাইয়ে circular debt দাঁড়ায় ১.৬৬১ ট্রিলিয়ন রুপি (GDP-র ২.১ শতাংশ)। সরকার ১৮টি ব্যাংকের সঙ্গে ১.২২৫ ট্রিলিয়ন রুপি পুনর্গঠন চুক্তি করলেও এটি আসলে আরেকটি bailout, সংস্কার নয়।
মূল সমস্যা—বিদ্যুৎ চুরি, বিল আদায়ে ব্যর্থতা, ভর্তুকির অর্থ পরিশোধে সরকারের গড়িমসি—অপরিবর্তিত।
কর সংগ্রহের ব্যর্থতা
করদাতার সংখ্যা বাড়লেও প্রকৃত আয় বাড়েনি। ADB বলছে—
“নিবন্ধিত করদাতা বাড়ানো মানেই শক্তিশালী কর ব্যবস্থা নয়।”
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা (SOE)
৫০টির বেশি SOE বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা রয়েছে, যার মধ্যে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা ও PIA প্রথম সারিতে। কিন্তু বাজার সংস্কার ছাড়া এই প্রক্রিয়া সফল হওয়া কঠিন।
ভূরাজনৈতিক ও জলবায়ু ঝুঁকি
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা ২০২৫ সালের মাঝামাঝি কিছুটা কমলেও, নতুন কোনো সামরিক সংঘাত IMF কর্মসূচিকে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত করতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন পাকিস্তানের জন্য একটি অস্তিত্বগত হুমকি—
অনিয়মিত বর্ষা, গ্লেসিয়ার হ্রদের বিস্ফোরণ, পানির সংকট—সব মিলিয়ে অর্থনীতির উপর চাপ বাড়ছে। RSF-এর ১.৪ বিলিয়ন ডলার এই ঝুঁকি কমানোর চেষ্টা।
উপসংহার: অত্যন্ত অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ
IMF নিজেই স্বীকার করেছে—
“অর্থনৈতিক free fall আপাতত ঠেকানো গেছে, কিন্তু পাকিস্তান এখনও দুর্বল স্থিতিশীলতার ফাঁদে আটকে।”
২০২৬ সালে বাজেট ঘাটতি কিছুটা কমলেও, ঋণের বোঝা ও সুদের চাপ রয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—
পাকিস্তান স্থিতিশীল হতে চাইছে, কিন্তু নিজেকে বদলাতে পারছে না।
৬৪টি IMF শর্ত এক নজিরবিহীন হস্তক্ষেপ। কিন্তু রাজনৈতিক সদিচ্ছা ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ছাড়া এগুলি কাগজেই থেকে যাবে। গত চার দশকে ২৪ বার IMF কর্মসূচিতে যাওয়া দেশটির জন্য প্রশ্ন একটাই—
এবার কি সত্যিই ইতিহাস বদলাবে, নাকি এই bailout-ও হবে আরেকটি সাময়িক শ্বাস নেওয়ার সুযোগ?
Why Pakistan’s IMF Program Remains High-Risk
Despite IMF support, Pakistan faces multiple structural risks that threaten long-term stability:
- Debt Trap: Heavy reliance on rollovers from China and Gulf states
- Energy Circular Debt: Power sector losses continue despite bailouts
- Weak Tax System: More taxpayers without real revenue growth
- Governance Failure: Corruption undermines reform credibility
- Geopolitical & Climate Shocks: India tensions and extreme floods
Without deep institutional reforms, Pakistan risks remaining trapped in a permanent IMF dependency cycle.
