![]() |
| বাংলাদেশের রাজনৈতিক হুমকি ও ভারতের Seven Sisters অঞ্চল ঘিরে বাড়তে থাকা কৌশলগত উত্তেজনা |
প্রেক্ষাপট ও উসকানি
২০২৫ সালের ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আয়োজিত এক রাজনৈতিক সমাবেশে বাংলাদেশের ন্যাশনাল সিটিজেন পার্টি (NCP)-এর প্রধান সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ প্রকাশ্যে ভারতের বিরুদ্ধে হুমকি দেন। তিনি বলেন,
“আমরা ভারতবিরোধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তিকে আশ্রয় দেব এবং ভারতের সেভেন সিস্টার্সকে বিচ্ছিন্ন করে দেব।”
এই বক্তব্য শুনে সমাবেশে উপস্থিত একাংশের মানুষ করতালি দেয়। এই ঘটনাটি শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক বক্তৃতা নয়, বরং ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েনের একটি গুরুতর ইঙ্গিত।
হাসনাত আব্দুল্লাহ দাবি করেন, ভারত নাকি বাংলাদেশের অস্থিরতা সৃষ্টিকারী শক্তিকে আশ্রয় দিচ্ছে। তার কথায়,
“যদি বাংলাদেশ অস্থির হয়, তবে তার আগুন সীমান্ত পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়বে। আপনারা যদি আমাদের বিরোধীদের আশ্রয় দেন, তবে আমরাও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেব।”
এই বক্তব্য আসে এমন এক সময়, যখন ২০২৪ সালের আগস্টে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হচ্ছে। নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ভারতের দূরত্ব বাড়ছে, আর সেই সুযোগে বাংলাদেশে anti-India sentiment বাড়ছে।
ভারতের “সেভেন সিস্টার্স”: ভৌগোলিক ও কৌশলগত দুর্বলতা
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে সাধারণভাবে “Seven Sisters” বলা হয়। এই সাতটি রাজ্য হলো—
অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও ত্রিপুরা।
এই অঞ্চল ভারতের মোট ভূমির প্রায় ৮ শতাংশ, আয়তন প্রায় ২,৬২,২৩০ বর্গকিলোমিটার, এবং এখানে বসবাস করে ৪ কোটিরও বেশি মানুষ।
এই সাতটির মধ্যে আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরাম সরাসরি বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্ত ভাগ করে। ফলে নিরাপত্তার দিক থেকে এই অঞ্চল সবসময় sensitive zone হিসেবে বিবেচিত।
অর্থনৈতিক ও সামরিক গুরুত্ব
এই অঞ্চল শুধু ভৌগোলিকভাবে নয়, অর্থনৈতিক ও সামরিক দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
-
এখানে রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ military bases
-
এই অঞ্চল ভারতের Act East Policy-র gateway
-
উত্তর-পূর্ব ভারত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সংযোগস্থল
কিন্তু ঐতিহাসিকভাবে এই অঞ্চল insurgency ও separatist movement-এর জন্য পরিচিত ছিল। হাসনাত আব্দুল্লাহ ঠিক এই দুর্বলতার দিকেই আঙুল তুলেছেন।
শিলিগুড়ি করিডোর: ভারতের “Chicken’s Neck”
ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র স্থল সংযোগ হলো শিলিগুড়ি করিডোর, যাকে বলা হয় “Chicken’s Neck”।
-
প্রস্থ মাত্র ২০–২২ কিলোমিটার
-
পশ্চিমে নেপাল
-
উত্তরে ভুটান
-
দক্ষিণে বাংলাদেশ
এই সরু করিডোরটি না থাকলে উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভারতের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব
-
প্রতিদিন ১০ লক্ষের বেশি গাড়ি চলাচল
-
প্রায় ২,৪০০ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন
-
দৈনিক আয় প্রায় ₹১৪২ কোটি
-
বিদ্যুৎ লাইন, গ্যাস পাইপলাইন, রেললাইন, জাতীয় সড়ক—সবই এখান দিয়ে যায়
সামরিক গুরুত্ব
-
সেনা ও অস্ত্র পরিবহনের প্রধান route
-
সিকিম ও অরুণাচলে চীনের বিরুদ্ধে ভারতের defence posture এই করিডোরের ওপর নির্ভরশীল
এই করিডোরে যদি কখনো শত্রু আঘাত হানে, তবে ৪.৫ কোটির বেশি মানুষ সরাসরি প্রভাবিত হবে।
অতীতের অভিজ্ঞতা: বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয়
হাসনাত আব্দুল্লাহর হুমকি নতুন নয়। ১৯৯০-এর দশক ও ২০০০-এর শুরুর দিকে বাংলাদেশে ভারতবিরোধী গোষ্ঠীগুলোর নিরাপদ আশ্রয় ছিল।
তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করত—
-
NLFT
-
ATTF
-
HuJI
-
JMB
এই গোষ্ঠীগুলো সীমান্ত পার হয়ে ভারতে হামলা চালাত এবং আবার বাংলাদেশে ফিরে যেত।
পরিবর্তন আসে ২০০৯-এর পর
শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পর—
-
insurgent camps ধ্বংস করা হয়
-
বহু জঙ্গিকে ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়
-
ভারত–বাংলাদেশ security cooperation বাড়ে
ফলে উত্তর-পূর্ব ভারতে সহিংসতা অনেকটাই কমে যায়।
হাসনাতের বক্তব্য ইঙ্গিত দিচ্ছে, বাংলাদেশ আবার সেই পুরনো পথে ফিরতে পারে।
বাংলাদেশ–চীন–পাকিস্তান অক্ষ: নতুন কৌশলগত বাস্তবতা
২০২৪ সালে সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ দ্রুত India-centric policy থেকে সরে আসছে।
চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা
২০২৫ সালের মার্চে মুহাম্মদ ইউনুস চীন সফরে যান। সেখানে—
-
৮টি MoU সই হয়
-
চীন সম্পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস দেয়
-
ইউনুস বলেন, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল “landlocked”
এই বক্তব্য ভারতে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সামরিক যোগাযোগ
-
২০২৫ সালের অক্টোবর–নভেম্বরে পাকিস্তানের শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা ঢাকা সফর করেন
-
বাংলাদেশ অংশ নেয় AMAN-2025 naval exercise
-
জুন ২০২৫-এ চীন, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের trilateral meeting
বাংলাদেশ এখন কিনতে চাইছে—
-
JF-17 Thunder jets
-
Bayraktar drones
চীনের ভূমিকা: Dual-use infrastructure
ভারতের সবচেয়ে বড় উদ্বেগ চীন।
লালমনিরহাট এয়ারবেস
-
শিলিগুড়ি করিডোর থেকে মাত্র ১৩৫ কিমি দূরে
-
allegedly Chinese support-এ পুনরুজ্জীবিত
-
officially civilian, but potential dual-use
এই এয়ারবেস থেকে—
-
surveillance aircraft
-
drones
-
ISR operations
চালানো সম্ভব।
অন্যান্য উদ্বেগ
-
Teesta River Project-এ চীনের আগ্রহ
-
রংপুর এলাকায় Chinese nationals-এর উপস্থিতি
ভারতের জবাব: Multi-layered Defence Strategy
ভারত বসে নেই।
সামরিক ব্যবস্থা
-
S-400 air defence system মোতায়েন
-
Rafale jets হাশিমারা এয়ারবেসে
-
BrahMos missile regiment
-
Akash ও MRSAM systems
-
নতুন army garrisons—আসাম, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ
Intelligence coordination
২০২৫ সালের নভেম্বরে—
-
IB
-
BSF
-
Army
-
State Police
সবাই মিলে Siliguri-তে high-level meeting করে।
বিকল্প রুট: বাংলাদেশের ওপর নির্ভরতা কমানো
Kaladan Project
-
কলকাতা → সিত্তে (sea)
-
সিত্তে → পালেতোয়া (river)
-
পালেতোয়া → মিজোরাম (road)
Shillong–Silchar Expressway
-
১৬৬ কিমি
-
সময় কমবে ৮.৫ ঘণ্টা থেকে ৫ ঘণ্টা
এই প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের leverage কমিয়ে দিচ্ছে।
কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া
-
১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ হাইকমিশনারকে ডেকে প্রতিবাদ
-
MEA বলেছে বক্তব্য “provocative”
-
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারি দিয়েছেন
বাস্তবতা: বাংলাদেশ কি সত্যিই পারবে?
Military gap
-
ভারতের defence budget বাংলাদেশের তুলনায় ১৭ গুণ বেশি
Separatist strength
-
আজ insurgency আগের মতো শক্তিশালী নয়
রাজনৈতিক অস্থিরতা
-
অন্তর্বর্তী সরকার fragile
-
NCP পুরো দেশের প্রতিনিধি নয়
উপসংহার
হাসনাত আব্দুল্লাহর বক্তব্য শুধু rhetoric নয়, এটি একটি strategic signal।
বাংলাদেশ এখন একটি multipolar foreign policy-র পথে হাঁটছে।
তবে ভারতের—
-
military preparedness
-
alternative connectivity
-
strategic depth
এই সব মিলিয়ে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল বিচ্ছিন্ন করা বাস্তবে অত্যন্ত কঠিন।
তবুও, এই পরিবর্তিত ভূরাজনৈতিক পরিবেশে ভারতকে আরও সতর্ক, বাস্তববাদী ও কৌশলী হতে হবে।
কারণ South Asia এখন আর আগের মতো নয়—
এখন এটি একটি complex, multipolar battleground।
