![]() | |
| Despite US pressure, Big Tech announces over $85 billion in new investments in India. |
মূল কাহিনি
২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে প্রযুক্তি ও বিনিয়োগ নিয়ে যে টানাপোড়েন তৈরি হয়েছে, তা আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়। একদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে আমেরিকার বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেন যেন তারা বিদেশে, বিশেষ করে ভারতে, বিনিয়োগ কমায় বা বন্ধ করে। অন্যদিকে, বাস্তবে দেখা যায় ঠিক উল্টো চিত্র—মাইক্রোসফট, গুগল, অ্যামাজন, অ্যাপলসহ একাধিক মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট আগামী কয়েক বছরে ভারতে ৮৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি বিনিয়োগের ঘোষণা করে।
এই পরিস্থিতিতে ভারত স্পষ্ট করে জানিয়ে দেয়—দেশের অর্থনীতি, শক্তি নিরাপত্তা ও প্রযুক্তি নীতি নির্ধারণে বিদেশি চাপ মানা হবে না। নয়াদিল্লির বার্তা পরিষ্কার: “আমাদের সিদ্ধান্ত আমরা নেব। আপনারা আপনাদের জুরিসডিকশনে থাকুন।”
ট্রাম্পের “আমেরিকা ফার্স্ট” প্রযুক্তি নির্দেশ (জুলাই ২০২৫)
২০২৫ সালের জুলাই মাসে ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত একটি এআই সামিটে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থাগুলিকে কড়া ভাষায় সতর্ক করেন। তিনি বলেন—
“আমাদের প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে আমেরিকার জন্য পুরোপুরি কাজ করতে হবে। বিদেশে চাকরি দেওয়া ও বিনিয়োগ বন্ধ করতে হবে। আমেরিকাকে আগে রাখতে হবে।”
ট্রাম্প অভিযোগ করেন যে সিলিকন ভ্যালির সংস্থাগুলো একটি “গ্লোবালিস্ট মানসিকতা” নিয়ে কাজ করছে। তাঁর মতে, এই কোম্পানিগুলি আমেরিকার স্বাধীনতা ও সুযোগ-সুবিধার কারণেই বড় হয়েছে, অথচ এখন তারা চাকরি ও পুঁজি ভারত ও চীনের মতো দেশে নিয়ে যাচ্ছে।
কথার সঙ্গে কড়া নীতি
ট্রাম্প প্রশাসন শুধু বক্তব্যেই থেমে থাকেনি।
২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সরকার ঘোষণা করে—
-
নতুন H-1B ভিসার আবেদন ফি বাড়িয়ে ১ লক্ষ ডলার করা হবে
-
বিদেশে উৎপাদন করলে মার্কিন কোম্পানির ওপর শুল্ক ও জরিমানার হুমকি
-
বিদেশে কর্মী নিয়োগকে নিরুৎসাহিত করার স্পষ্ট রাজনৈতিক চাপ
এই নীতির মূল লক্ষ্য ছিল—ভারতসহ অন্যান্য দেশ থেকে দক্ষ কর্মী নেওয়া বন্ধ করা এবং কোম্পানিগুলিকে আমেরিকার ভেতরেই বিনিয়োগে বাধ্য করা।
বড় প্রযুক্তি সংস্থাগুলির পাল্টা জবাব (ডিসেম্বর ২০২৫)
ট্রাম্পের এই কড়া নির্দেশের কয়েক মাসের মধ্যেই ঘটে যায় নাটকীয় ঘটনা। ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে একের পর এক মার্কিন প্রযুক্তি সংস্থা ঘোষণা করে বিশাল বিনিয়োগ পরিকল্পনা—ভারতে।
মাইক্রোসফট
মাইক্রোসফট জানায়, তারা ২০২৬ থেকে ২০২৯ সালের মধ্যে ১৭.৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
এটি এশিয়ায় মাইক্রোসফটের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ।
এই অর্থ ব্যবহার হবে—
-
ক্লাউড ও এআই অবকাঠামো তৈরিতে
-
ডেটা সেন্টার সম্প্রসারণে
-
২০৩০ সালের মধ্যে ২ কোটি ভারতীয়কে এআই প্রশিক্ষণ দিতে
মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেলা বলেন—
“ভারতের এআই ভবিষ্যৎকে সমর্থন করতে আমরা এই বিনিয়োগ করছি।”
অ্যামাজন
অ্যামাজন ঘোষণা করে—
-
২০৩০ সালের মধ্যে ৩৫ বিলিয়ন ডলার নতুন বিনিয়োগ
-
মোট ভারত বিনিয়োগ পৌঁছাবে ৭৫ বিলিয়ন ডলারে
-
এআই ও ডিজিটাল পরিষেবার মাধ্যমে ৩৮ লক্ষ চাকরি তৈরি হবে
গুগল
গুগল জানায়—
-
অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমে ১ গিগাওয়াট ক্ষমতার এআই ডেটা সেন্টার
-
বিনিয়োগের পরিমাণ ১৫ বিলিয়ন ডলার
-
সরাসরি ৫–৬ হাজার ও পরোক্ষভাবে ৩০ হাজার চাকরি
এটি যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে গুগলের সবচেয়ে বড় ডেটা সেন্টার প্রকল্প।
অন্যান্য বিনিয়োগ
-
ইন্টেল + টাটা গ্রুপ → ভারতের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সেমিকন্ডাক্টর ফ্যাব
-
অ্যাপল → ১.৫ বিলিয়ন ডলারে উৎপাদন সম্প্রসারণ
-
এনভিডিয়া, ল্যাম রিসার্চ, কোহেসিটি → ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ
সব মিলিয়ে মাত্র কয়েক সপ্তাহে ঘোষণা হয় ৮৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ।
কেন ট্রাম্পের কথা শুনল না প্রযুক্তি সংস্থাগুলি?
১. H-1B ভিসা নীতির উল্টো ফল
ভিসা ফি বাড়ানোর ফলে কোম্পানিগুলির সামনে দুইটি পথ খোলা থাকে—
-
আমেরিকায় কর্মী না পেয়ে পিছিয়ে পড়া
-
অথবা ভারতে পুরো টিম তৈরি করা
একজন বিনিয়োগকারী বলেন—
“যদি ১০০০ ইঞ্জিনিয়ার দরকার হয় আর আমেরিকায় নেওয়া অসম্ভব হয়, তাহলে কোম্পানি ভারতে যাবে—এটাই স্বাভাবিক।”
২. ভারতের বিশাল বাজার
-
৭৫ কোটির বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী
-
৭% এর বেশি জিডিপি বৃদ্ধি
-
দ্রুত বাড়তে থাকা মধ্যবিত্ত
এই বাজার কোনও বড় কোম্পানি উপেক্ষা করতে পারে না।
৩. চীন থেকে বিকল্প দরকার
যুক্তরাষ্ট্র–চীন উত্তেজনার কারণে কোম্পানিগুলি বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র খুঁজছে।
ভারত দেয়—
-
কম খরচ
-
রাজনৈতিক স্থিতি
-
দক্ষ কর্মী
-
সরকারি প্রণোদনা
৪. প্রতিযোগিতার চাপ
একটি কোম্পানি বিনিয়োগ করলে অন্যরা পিছিয়ে থাকতে চায় না।
ফলে শুরু হয় ইনভেস্টমেন্ট চেইন রিঅ্যাকশন।
ভারতের স্পষ্ট বার্তা: আমরা স্বাধীন
ভারত বিনিয়োগকে স্বাগত জানালেও রাজনৈতিকভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে।
পীযূষ গোয়ালের বক্তব্য
২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়াল বলেন—
“চুক্তি তখনই হবে যখন দুই পক্ষ লাভবান হবে। ডেডলাইনের চাপে আমরা সিদ্ধান্ত নিই না।”
যুক্তরাষ্ট্র খুশি কি না—এই প্রশ্নে তাঁর উত্তর ছিল—
“খুশি হলে তারা চুক্তিতে সই করুক।”
শক্তি নীতি ও রাশিয়া
রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে ৫০% শুল্ক বসালেও ভারত জানায়—
-
শক্তি নীতি জাতীয় স্বার্থের বিষয়
-
বাইরের অনুমতির প্রয়োজন নেই
মোদির কৌশল
ডিসেম্বর ২০২৫-এ পুতিনের ভারত সফরের পর প্রধানমন্ত্রী মোদি স্পষ্ট করেন—
-
ভারত কোনও ব্লকের অংশ নয়
-
ভারত নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেবে
ভারতের প্রযুক্তি স্বনির্ভরতার পরিকল্পনা
ডিজিটাল স্বরাজ
-
নিজস্ব ক্লাউড
-
দেশীয় অপারেটিং সিস্টেম
-
ভারতীয় সাইবার নিরাপত্তা
সেমিকন্ডাক্টর মিশন
-
₹৭৬,০০০ কোটি বরাদ্দ
-
১০টি প্রকল্প
-
১৮ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ
ডেটা সার্বভৌমত্ব
-
ডেটা ভারতে সংরক্ষণ বাধ্যতামূলক
-
সরকারি ও প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় দেশীয় প্রযুক্তি
ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বাস্তব ফল
ট্রাম্পের লক্ষ্য ছিল—
-
বিনিয়োগ আমেরিকায় ফেরানো
কিন্তু বাস্তবে হয়েছে—
-
ভারত আরও শক্তিশালী প্রযুক্তি কেন্দ্র
-
আমেরিকান কোম্পানির ভারতমুখী ঝোঁক
নীতির ফল হয়েছে ঠিক উল্টো।
শেষ কথা: ভারতের উত্থান
এই ঘটনাপ্রবাহ দেখায়—
-
ভারত আর শুধু আউটসোর্সিং দেশ নয়
-
ভারত এখন এআই, ক্লাউড ও চিপ উৎপাদনের কেন্দ্র
-
ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমানে সমানে কথা বলছে
ডিজিটাল যুগে এটি একটি বড় শক্তির পরিবর্তনের ইঙ্গিত।
