ভারতের একাধিক NOTAM জারি: পাকিস্তান ও বাংলাদেশে চরম সতর্কতা | India's Multiple NOTAMs Shock Pakistan & Bangladesh 2025

ভারতীয় বিমান বাহিনীর রাফাল যুদ্ধবিমান মরুভূমির উপর উড়ছে

🔰 ভূমিকা

২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষভাগে ভারত যে ধারাবাহিকভাবে একাধিক NOTAM (Notice to Airmen) জারি করেছে, তা শুধু উপমহাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার কূটনৈতিক পরিসরে আলোড়ন তুলেছে। ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম—দুই সীমান্তেই একযোগে সামরিক মহড়া ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার ঘোষণা এই অঞ্চলের নিরাপত্তা ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ইসলামাবাদ থেকে শুরু করে ঢাকা পর্যন্ত—সবখানেই এখন সতর্কতার বাতাবরণ।


🇮🇳 ভারতের পাঁচটি প্রধান NOTAM ঘোষণার বিস্তারিত বিশ্লেষণ

পশ্চিম সীমান্তে “Exercise Trishul” (৩০ অক্টোবর – ১০ নভেম্বর)

ভারতের সর্ববৃহৎ এই সামরিক মহড়াটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে রাজস্থান ও গুজরাট সীমান্তজুড়ে। “ত্রিশূল ২০২৫” মহড়া তিন বাহিনীর (স্থল, নৌ ও বায়ু) যৌথ অংশগ্রহণে পরিচালিত হচ্ছে।
এই মহড়ার আওতায়:

  • আকাশপথে ২৮,০০০ ফুট পর্যন্ত এলাকাকে সাময়িকভাবে উড়ান নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
  • অংশ নিচ্ছে ২০,০০০-এরও বেশি সৈন্য, শতাধিক ট্যাঙ্ক, আর্টিলারি ও যুদ্ধবিমান।
  • রাফাল ও সুখোই-৩০ এমকেআই ফাইটার জেট, ট্যাঙ্ক T-90, অরজুন, হাওয়িত্জার এবং উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র সিস্টেম মোতায়েন করা হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, মহড়ার এলাকা এবং পরিসর এতটাই বৃহৎ যে এটি পাকিস্তান সীমান্তে ভারতের এক “অভূতপূর্ব যুদ্ধ প্রস্তুতি”র ইঙ্গিত বহন করছে।


বঙ্গোপসাগরে ১১ দিনের বিশাল আকাশ মহড়া (৩–১৪ নভেম্বর)

বঙ্গোপসাগরে ১১ দিনের এই বায়ু মহড়া ২০২৫ সালের মধ্যে তৃতীয়বারের মতো বড় আকারে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
একই সময়ে পশ্চিম সীমান্তে “ত্রিশূল” মহড়া চলার ফলে এটি প্রমাণ করছে—ভারত একসঙ্গে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ পরিচালনা করতে সক্ষম।

এই মহড়ায় অংশ নিচ্ছে ভারতীয় নৌবাহিনীর P-8I সাবমেরিন হান্টার, মেরিন কমান্ডো MARCOS ইউনিট, ও ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিগ-২৯ এবং জাগুয়ার স্কোয়াড্রন।


মধ্য ভারতের প্রস্তুতি NOTAM (৩–২৮ নভেম্বর)

নাগপুর, ভোপাল ও ইন্দোর অঞ্চলজুড়ে নতুন একটি NOTAM জারি করা হয়েছে। এটি “ত্রিশূল” মহড়ার লজিস্টিক সাপোর্ট হিসেবে ব্যবহৃত হবে বলে জানা গেছে।
বিমানবাহিনী ও সেনাবাহিনী যৌথভাবে এখানে “ইন্টিগ্রেটেড ফায়ার কোঅর্ডিনেশন” অনুশীলন করবে।


ওডিশা উপকূলে ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা (৪ নভেম্বর)

ড. এ.পি.জে. আবদুল কালাম দ্বীপ (পূর্বতন হুইলার আইল্যান্ড) থেকে একটি নতুন ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য ৪ নভেম্বর একটি NOTAM জারি হয়েছে।

  • বিপজ্জনক এলাকা চিহ্নিত করা হয়েছে বঙ্গোপসাগরে ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • প্রতিরক্ষা সূত্র মতে, এটি ভারতের পরবর্তী প্রজন্মের Agni-V Prime বা Agni-6 ICBM হতে পারে।

আগের বঙ্গোপসাগরীয় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা (১৫–১৭ অক্টোবর)

অক্টোবরের মাঝামাঝি ভারত যে তিনটি পরপর NOTAM জারি করেছিল, সেগুলো ছিল সাম্প্রতিক কালের সবচেয়ে দীর্ঘ দূরত্বের ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জন্য।
সেখানে “ডেঞ্জার জোন” ১,৪৮০ কিমি থেকে বাড়িয়ে ৩,৫৫০ কিমি পর্যন্ত করা হয়েছিল—যা স্পষ্টতই একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল ব্যালিস্টিক মিসাইল (ICBM) পরীক্ষার ইঙ্গিত দেয়।


🇵🇰 পাকিস্তানের হতবাক প্রতিক্রিয়া

⚠️ বিমান চলাচল বন্ধ ও সামরিক সতর্কতা

ভারতের ধারাবাহিক NOTAM ঘোষণার পর পাকিস্তান ২৮–২৯ অক্টোবর নিজেদের আকাশপথে বড়সড় উড়ান নিষেধাজ্ঞা জারি করে।

  • এই দুই দিনে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত পুরো দেশের আকাশপথ বন্ধ ছিল।
  • পাকিস্তানের বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ জানায়, “অজানা নিরাপত্তাজনিত কারণে” এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তবে বাস্তবে এটি ভারতের “ত্রিশূল” মহড়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবেই দেখা হচ্ছে।


🚨 সেনা তৎপরতা ও নৌবাহিনীর মোতায়েন

  • পাকিস্তান বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনীকে উচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।
  • আরব সাগরে টহল কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে।
  • পাকিস্তানের নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল নাভিদ আশরাফ নিজে স্যার ক্রিক এলাকা পরিদর্শন করেছেন।

এর মধ্যে ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং-এর বক্তব্য—

“স্যার ক্রিক এলাকায় পাকিস্তানের যেকোনো আগ্রাসন এমন জবাব পাবে যা ইতিহাস ও ভূগোল—দুটোকেই বদলে দেবে।”
এই মন্তব্যে ইসলামাবাদে উদ্বেগ আরও বেড়েছে।


🇧🇩 বাংলাদেশের উদ্বেগ ও “চিকেনস নেক” ফ্যাক্টর

বাংলাদেশ সরাসরি ভারতের NOTAM নিয়ে কোনো সরকারি বিবৃতি না দিলেও, কূটনৈতিক ও সামরিক পর্যায়ে এর প্রভাব অত্যন্ত গভীর।

🛰️ উত্তরবঙ্গ ও সিলিগুড়ি করিডর: ভারতের কৌশলগত দুশ্চিন্তা

ভারতের উত্তরবঙ্গের সিলিগুড়ি করিডর—যাকে “চিকেনস নেক” বলা হয়—মাত্র ২২ কিলোমিটার চওড়া একটি ভূখণ্ড যা ভারতের মূল ভূখণ্ডকে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলোর সঙ্গে যুক্ত করে।
এই অঞ্চল ভারতের জন্য যেমন কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি যেকোনো সামরিক বা কূটনৈতিক চাপের কেন্দ্রে থাকে।

🪖 পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক মহড়া (২৫ সেপ্টেম্বর – ১৬ অক্টোবর)

ভারত সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে পূর্বাঞ্চলে একটি ২২ দিনের বিশাল বায়ু মহড়া চালিয়েছিল।
এতে চিন, ভুটান, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী অঞ্চলগুলিতে যুদ্ধ প্রস্তুতি যাচাই করা হয়।
এর আগে মে ২০২৫-এ উত্তরবঙ্গের তিস্তা ফিল্ড ফায়ারিং রেঞ্জে “তিস্তা প্রহার” নামে আরেকটি বৃহৎ মহড়া হয়েছিল।


🌏 বাংলাদেশ-চীন-পাকিস্তান ঘনিষ্ঠতা: ভারতের উদ্বেগ বৃদ্ধি

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রধান মুহাম্মদ ইউনুসের সময়ে তিন দেশের মধ্যে নতুন সামরিক ও কূটনৈতিক জোট গঠনের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।

উল্লেখযোগ্য তিনটি ঘটনা:

  1. বাংলাদেশ কর্তৃক পাকিস্তানকে উপহার দেওয়া একটি বিতর্কিত মানচিত্র, যেখানে ভারতের কিছু অঞ্চলকে “বাংলাদেশের অংশ” হিসেবে দেখানো হয়।
  2. বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের লালমনিরহাট সফর, যেখানে ভারতের সীমান্ত সংলগ্ন এলাকায় বিমান হ্যাঙ্গার নির্মাণের খবর প্রকাশ পায়।
  3. ২০২৫ সালের জুনে চীনের কুনমিং শহরে চীন-পাকিস্তান-বাংলাদেশ ত্রিপাক্ষিক বৈঠক, যেখানে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হয়।

⚔️ ভারতের পাল্টা বার্তা ও কৌশল

🗣️ হিমন্ত বিশ্বশর্মার কড়া সতর্কবাণী

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা বলেন—

“বাংলাদেশেরও দুটি চিকেনস নেক আছে—একটি উত্তরবাংলার ৮০ কিমি করিডর এবং অন্যটি চট্টগ্রাম অঞ্চলে ২৮ কিমি করিডর।
ভারতের চিকেনস নেকের দিকে কেউ তাকালে, তাদের করিডরও নিরাপদ থাকবে না।”

এই বক্তব্য বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে প্রবল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।


💥 কৌশলগত গুরুত্ব: দুই ফ্রন্টে ভারতের প্রস্তুতি

ভারতের একসঙ্গে পূর্ব ও পশ্চিম সীমান্তে NOTAM জারি কেবল সামরিক অনুশীলন নয়—এটি একটি দুই ফ্রন্ট যুদ্ধ প্রস্তুতির মহড়া

মূল লক্ষ্যসমূহ:

  1. Operation Sindoor-এর পর কৌশলগত বার্তা:
    মে ২০২৫-এ পাকিস্তানের ৯টি সন্ত্রাসী ঘাঁটি ও ১১টি বিমানঘাঁটিতে ভারতের নির্ভুল আঘাতের পর থেকে দুই দেশ একে অপরের বিরুদ্ধে সামরিক সংকেত পাঠিয়ে চলেছে।

  2. ‘আত্মনির্ভর ভারত’ প্রদর্শন:
    “ত্রিশূল” মহড়ায় ব্যবহৃত অধিকাংশ অস্ত্র ও সিস্টেম দেশীয়ভাবে তৈরি—যেমন আকাশ ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্ল্যাটফর্ম, এবং উন্নত নজরদারি সিস্টেম।

  3. আঞ্চলিক বার্তা প্রেরণ:
    এই মহড়াগুলো কেবল পাকিস্তান নয়, বরং চীন-পাক-বাংলাদেশ অক্ষকে স্পষ্টভাবে সতর্ক করছে যে ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতা “একাধিক ফ্রন্টে একযোগে প্রতিরোধমূলক অভিযান” পরিচালনা করতে সক্ষম।

  4. অপারেশনাল যাচাই:
    সমুদ্র, মরুভূমি, নদীভূমি ও পাহাড়ি অঞ্চল—সব জায়গাতেই যৌথ যুদ্ধ পরিচালনার সক্ষমতা যাচাই করা হয়েছে।


✈️ বেসামরিক বিমান চলাচল ও অর্থনৈতিক প্রভাব

ভারতের ও পাকিস্তানের একাধিক NOTAM ঘোষণায় দক্ষিণ এশিয়ার বিমান চলাচল ব্যবস্থায় বিশাল প্রভাব পড়েছে।

  • অনেক আন্তর্জাতিক ফ্লাইট রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছে।
  • পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন অথরিটি ঘোষণা করে—নির্ধারিত সময়ে সব ফ্লাইট বন্ধ থাকবে।
  • ভারতের অভ্যন্তরীণ বিমানসংস্থাগুলোকেও বিকল্প রুটে উড়তে হচ্ছে, যার ফলে ব্যয় ও বিলম্ব বেড়েছে।

বিমান সংস্থাগুলির মতে, ২০২৫ সালের অক্টোবর-নভেম্বর সময়কালে এটি দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় আকাশপথ সীমাবদ্ধতা


🧭 সমগ্র পরিস্থিতির ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষণ

ভারতের একাধিক NOTAM ঘোষণার মাধ্যমে তিনটি বড় বার্তা স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে—

  1. দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ সক্ষমতা: ভারত এখন আর শুধুমাত্র একদিকে মনোযোগী নয়; পশ্চিমে পাকিস্তান ও পূর্বে চীন-বাংলাদেশ উভয় দিকেই সমান প্রস্তুতি নিচ্ছে।
  2. প্রতিরোধ কূটনীতি: সামরিক মহড়া ও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা ভারতের “শান্তিপূর্ণ কিন্তু দৃঢ়” প্রতিরোধ নীতির অংশ।
  3. দক্ষিণ এশিয়ায় শক্তির ভারসাম্য: পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাম্প্রতিক জোট-প্রবণতা ভারতকে তার আঞ্চলিক প্রভাব পুনরায় দৃঢ় করতে বাধ্য করছে।

🧩 উপসংহার

ভারতের একাধিক NOTAM জারি কেবল একটি সামরিক মহড়ার ব্যাপার নয়—এটি দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনীতিতে এক নতুন বাস্তবতার প্রতিফলন।
ভারত একদিকে “আত্মনির্ভর প্রতিরক্ষা শক্তি” হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে, অন্যদিকে প্রতিবেশীদের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাচ্ছে—

“ভারত প্রস্তুত—যেকোনো দিক থেকে, যেকোনো সময়ে।”

পাকিস্তান ও বাংলাদেশের প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমে স্পষ্ট যে, এই অঞ্চলে সামরিক ও কূটনৈতিক সমীকরণ দ্রুত বদলে যাচ্ছে।
আগামী মাসগুলোয় এই উত্তেজনা কতদূর গড়ায়, সেটাই এখন দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।


 উৎস: ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, পাকিস্তান সিভিল এভিয়েশন নোটিশ, বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহল ও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশ্লেষণ রিপোর্ট (অক্টোবর ২০২৫)


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4