🇮🇳 ভূমিকাঃ
২০২৫ সাল—ভারতের সামুদ্রিক ইতিহাসে এক নাটকীয় অধ্যায়।
আরব সাগর থেকে শুরু করে ভূমধ্যসাগর, সেখান থেকে দক্ষিণ চীন সাগর পর্যন্ত ভারতীয় নৌবাহিনীর গর্জন যেন বিশ্ব রাজনীতির নতুন ঢেউ তুলেছে।
কিন্তু এই ঢেউয়ের সবচেয়ে ভয় পেয়েছে কারা?
চীন, পাকিস্তান আর তুরস্ক!
আর সবচেয়ে মজার বিষয়—এই ভয়টাই সবচেয়ে বেশি ফুটে উঠেছে তাদের গণমাধ্যমে।
তুর্কি ও চীনা সংবাদমাধ্যমের টোনে এখন আতঙ্ক, হিংসা, আর “ভারতকে অবমূল্যায়ন করার ব্যর্থ চেষ্টা” একসাথে চলছে।
এই প্রবন্ধে আমরা একটু ব্যঙ্গাত্মক ভঙ্গিতে দেখব—
কীভাবে ভারতীয় নৌবাহিনীর কৌশলগত পদক্ষেপে তুর্কি ও চীনা মিডিয়া একেবারে “সামুদ্রিক গ্যাস লিক”-এর মতো ছটফট করছে।
⚓ ১. ভূমধ্যসাগরে ভারত: তুরস্কের ‘চুলে আগুন’
অক্টোবর ২০২৫-এ ভারতীয় স্টেলথ ফ্রিগেট INS ত্রিকণ্ড যখন ভূমধ্যসাগরে প্রবেশ করল, তুর্কি মিডিয়া তখন যেন “হৃদরোগের শিকার”।
গ্রিসের সালামিস বে-তে ভারত-গ্রিস যৌথ নৌমহড়া শুরু হতেই তুর্কি সংবাদমাধ্যমগুলো এমনভাবে চিৎকার শুরু করল, যেন ভারত কোনো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে!
তুরস্কের TR Haber, Yeni Şafak ও Anadolu Agency হুড়োহুড়ি করে শিরোনাম দিল—
“India planning missile deployment against Turkey!”
“Greek-Indian axis threatens Ankara’s sovereignty!”
এইসব শিরোনাম দেখে বোঝা যায়, তুরস্কের মিডিয়া ভারতের এক যুদ্ধজাহাজ দেখে এমন প্রতিক্রিয়া দিচ্ছে, যেন দিল্লি ন্যাটো সদর দপ্তর দখল করতে যাচ্ছে।
🎯 তুর্কি ভয় বনাম বাস্তবতা
ভারত আসলে তুরস্ককে ঘিরে ফেলছে না—তুরস্কের পাকিস্তান-প্রেম-এর প্রতি কৌশলগত প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে।
“অপারেশন সিন্দূর”-এর সময় তুরস্ক পাকিস্তানকে ৩৫০টির বেশি ড্রোন দিয়েছিল—এমনকি দুই তুর্কি সামরিক উপদেষ্টা নিহতও হয়েছিলেন।
এখন ভারত যদি গ্রীস, সাইপ্রাস ও আর্মেনিয়ার সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করে, তাহলে তাতে তুরস্কের এত হাঁফ ধরছে কেন?
যে দেশ অন্য দেশের যুদ্ধকে ব্যবসা বানায়, সে দেশ ভারতের মিত্রতা দেখলে “বড় ভাই”-এর ভয়ে কাঁপে!
তুর্কি মিডিয়া এতটা “ড্রামাটিক” হয়ে পড়েছে যে এক সাংবাদিক টিভিতে বলল—
“India is trying to encircle Turkey like NATO did with Russia!”
দুঃখজনকভাবে, সে সম্ভবত মানচিত্রও ভালোভাবে দেখেনি—ভারত আর তুরস্কের মধ্যে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরত্ব আছে!
🧠 ২. চীনের মিডিয়া: “সাউথ চায়না মের বাচ্চারা”
দক্ষিণ চীন সাগরে ভারত-ফিলিপাইন্সের যৌথ নৌমহড়া চীনা মিডিয়ার আত্মসম্মানে যেন বজ্রাঘাত করেছে।
Global Times, CCTV, এবং People’s Daily–র প্রতিবেদনগুলো এমন লাগছিল যেন ভারত নয়, চীনই আক্রান্ত দেশ।
চীনা মিডিয়ার বক্তব্য—
“India is joining the US-led containment strategy!”
“Philippines is provoking China with India’s help!”
অর্থাৎ, ভারত দক্ষিণ চীন সাগরে এক সপ্তাহের জন্য যুদ্ধজাহাজ পাঠাল, আর চীন মনে করল তার ‘সমুদ্র-রাজত্ব’ শেষ!
🐉 চীনের মিডিয়ার মানসিক অবস্থা
চীনের মিডিয়া এখন এমন এক মনস্তত্ত্বে আছে যেটা বলা যায় “আত্মবিশ্বাস হারানোর ক্রনিক সিনড্রোম”।
যে দেশ নিজেকে “সুপারপাওয়ার” বলে দাবি করে, সেই দেশের মিডিয়া যদি এক ভারতীয় ফ্রিগেটের গশ্ত দেখে ঘুম হারায়—তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, “ড্রাগন”-এর গায়ে এখন ভয় লেগেছে।
চীনা পত্রিকা South China Morning Post এক বিশ্লেষণ ছেপেছিল—
“India’s presence in the South China Sea is part of US containment.”
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, ভারত নিজের SAGAR এবং MAHASAGAR নীতিতে কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ছায়া নেয়নি।
ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি স্পষ্ট—“Security and Growth for All in the Region”।
চীন যেখানে ভারতের চারপাশে ‘String of Pearls’ গড়ে তুলছে, সেখানে ভারত তৈরি করছে ‘Chain of Friends’।
চীনা মিডিয়া এই বাস্তবতা বুঝতেই পারছে না।
তাদের ভাব যেন—
“আমরা চাই দক্ষিণ চীন সাগর আমাদের ব্যক্তিগত সুইমিং পুল হোক, অন্য কেউ সেখানে ঢুকলে সেটা আক্রমণ!”
ভারতের উপস্থিতি মানেই তাদের কাছে “ঘর ফাঁকা হয়ে যাওয়া” অনুভূতি।
🛰️ ৩. মিডিয়ার ভয় বনাম ভারতের বাস্তব সামরিক কৌশল
তুর্কি ও চীনা গণমাধ্যম উভয়েই একটা বিষয় বোঝেনি—ভারতের এই সামুদ্রিক তৎপরতা আক্রমণাত্মক নয়, বরং প্রতিরোধমূলক।
ভারত স্পষ্টভাবে তিনটি স্তরে কৌশল চালাচ্ছে—
- নিবারণ (Deterrence) – সম্ভাব্য প্রতিপক্ষকে দূরে রাখা।
- সহযোগিতা (Partnership) – নতুন মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক দৃঢ় করা।
- ক্ষমতা প্রক্ষেপণ (Power Projection) – ভারতকে একটি ‘নির্ভরযোগ্য বৈশ্বিক শক্তি’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
কিন্তু তুর্কি ও চীনা মিডিয়া এসব বোঝার পরিবর্তে ‘ডেইলি নাটক’ বানিয়ে তুলছে।
তুরস্কে এখন যেভাবে ভারত-গ্রিস সম্পর্ক নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানো হচ্ছে, তা দেখে মনে হয় অংকারার মিডিয়া যেন “রাতদিন মিসাইলের দুঃস্বপ্ন” দেখছে।
অন্যদিকে চীনা মিডিয়া ভারতের প্রত্যেকটা নৌমহড়া দেখে এমনভাবে প্রতিবেদন করছে যেন বেইজিংয়ের বন্দরেই ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ নোঙর ফেলেছে!
🔥 ৪. ভারতীয় মিডিয়া বনাম তুর্কি-চীনা নাটক
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এই পুরো ঘটনাকে যথেষ্ট শান্তভাবে দেখিয়েছে—বিশ্লেষণ, নীতি, এবং তথ্যের ওপর জোর দিয়ে।
কিন্তু তুর্কি ও চীনা মিডিয়া এখানে পুরো ‘রিয়েলিটি শো’ বানিয়ে ফেলেছে।
তুরস্কের এক চ্যানেল সম্প্রচারে বলল—
“India is trying to isolate Turkey diplomatically through Greece and Cyprus.”
অর্থাৎ, যে দেশ পাকিস্তানকে ড্রোন, অস্ত্র ও উপদেষ্টা দিয়ে ভারতে হামলা পরিকল্পনা করে, সে দেশ আবার নিজেকে ‘অন্যায়ভুক্ত’ বানাতে চাইছে!
চীনা মিডিয়ার আচরণ আরও নাটকীয়।
একটি টক শোতে এক বিশ্লেষক বলল—
“India is playing with fire in the South China Sea.”
এর উত্তরে ভারতীয় বিশ্লেষকরা মজার মন্তব্য করেন—
“Fire? It’s actually China’s hot air that’s burning!” 😄
🪖 ৫. পাকিস্তান: “তৃতীয় খেলোয়াড়” যাকে কেউ আমন্ত্রণ দেয়নি
তুরস্ক ও চীনের মিডিয়া যেখানে চেঁচামেচি করছে, পাকিস্তানি মিডিয়া সেখানে “হতাশা”তে ডুবে আছে।
“অপারেশন সিন্দূর”-এর সময় ব্যর্থতার পর পাকিস্তান এখন ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতিটি পদক্ষেপে আতঙ্কিত।
তার ওপরে রাজনাথ সিং-এর কড়া মন্তব্য—
“যদি পাকিস্তান সার ক্রিক এলাকায় দুঃসাহস দেখায়, তবে ইতিহাস ও ভূগোল দুটোই বদলে দেব।”
এই বক্তব্য পাকিস্তানের মিডিয়ার মুখ বন্ধ করে দিয়েছে।
এমনকি ইসলামাবাদ এখন আকাশপথ বন্ধ রাখছে, যেন ভারতীয় মহড়ার সময় ‘আকাশ থেকেও ভয়’ না আসে!
🌍 ৬. তুর্কি-চীনা মিডিয়ার “মিরর থিওরি”
তুরস্ক ও চীন আসলে ভারতের মধ্যে নিজেদের প্রতিফলন দেখছে।
তুরস্ক যেমন মধ্যপ্রাচ্যে “রিজিওনাল পাওয়ার” হতে চায়,
চীন যেমন ইন্দো-প্যাসিফিকে “ডমিন্যান্ট পাওয়ার” হতে চায়,
তেমনি ভারত এখন শান্তভাবে কিন্তু দৃঢ়ভাবে দেখাচ্ছে—ক্ষমতা প্রদর্শন মানেই আগ্রাসন নয়, দায়িত্বও এক ধরনের শক্তি।
চীনা মিডিয়া ভারতে “আমেরিকার দোসর” ট্যাগ লাগাতে চায়, কিন্তু ভুলে যায় যে ভারতের INS বিক্রান্ত আর INS ত্রিকণ্ড স্বনির্মিত প্রতীক—যা “আত্মনির্ভর ভারতের” প্রমাণ।
তুর্কি মিডিয়া ভারতকে “পশ্চিমা কূটনীতির খেলোয়াড়” বলে ব্যঙ্গ করতে চায়, কিন্তু তার নিজের প্রেসিডেন্টই পাকিস্তানি সামরিক উপদেষ্টাদের সঙ্গে যৌথ ড্রোন প্রজেক্টে জড়িয়ে আছে।
💡 ৭. “SAGAR” থেকে “MAHASAGAR”: ভারতের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি
ভারতের সামুদ্রিক নীতি—SAGAR (Security and Growth for All in the Region) এবং নতুন MAHASAGAR (Mutual and Holistic Advancement for Security And Growth Across Regions)—এখন বিশ্বের জন্য এক বিকল্প মডেল।
যেখানে চীন ও তুরস্ক “শক্তি প্রদর্শন” দিয়ে ভয় দেখায়, সেখানে ভারত “সহযোগিতা” দিয়ে সম্পর্ক গড়ে।
এই দৃষ্টিভঙ্গিই ভারতকে এমন অবস্থানে এনেছে, যেখানে ব্রিটেন, জাপান, নরওয়ে থেকে শুরু করে ফিলিপাইন্স ও গ্রীস—সবাই ভারতকে ‘বিশ্বাসযোগ্য মিত্র’ হিসেবে দেখছে।
তুর্কি ও চীনা মিডিয়া যতই হাহাকার করুক না কেন, বাস্তব সত্য এই—
ভারত এখন শুধু ভারত মহাসাগরের অভিভাবক নয়,
বরং বিশ্বের সামুদ্রিক কূটনীতির নতুন স্থপতি।
⚡ ৮. উপসংহারঃ ভয় নয়, সম্মানই ভারতের প্রাপ্য
তুর্কি ও চীনা মিডিয়ার এই হাঁফ ধরা প্রতিক্রিয়া প্রমাণ করে—ভারতের নৌবাহিনী এখন সত্যিই বিশ্ব মানচিত্রে প্রভাব বিস্তার করছে।
তুরস্কের সাংবাদিকরা যতই “অ্যালার্ম বাজছে” বলে আর্তনাদ করুক,
চীনের প্রচারযন্ত্র যতই “বহিঃশক্তির ষড়যন্ত্র” বলে গলা ফাটাক—
ভারতের নৌবাহিনী তার নিজস্ব পথে, কৌশলগত বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এগিয়ে চলেছে।
চীন ভয় পায় কারণ ভারত এখন দক্ষিণ চীন সাগরে তার কর্তৃত্বকে প্রশ্ন করছে।
তুরস্ক ভয় পায় কারণ ভারত এখন তার পশ্চিমা শত্রুদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে।
আর পাকিস্তান? সে ভয় পায় কারণ ভারতের প্রতিটি সামুদ্রিক পদক্ষেপ তার “অস্তিত্ব”কেই কাঁপিয়ে দেয়।
শেষে বলা যায়—
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রতিটি যুদ্ধজাহাজ শুধু ঢেউ তোলে না,
বরং তুর্কি ও চীনা মিডিয়ার ভেতরে “তুফান তুলছে”। 🌪️
🧭 সারাংশে:
ভারতের “SAGAR থেকে MAHASAGAR”-এর যাত্রা আসলে এক নতুন যুগের সূচনা—যেখানে ভারত শুধুমাত্র একটি আঞ্চলিক শক্তি নয়, বরং এক বৈশ্বিক সামুদ্রিক নীতি-নির্ধারক শক্তি।
তুর্কি ও চীনা মিডিয়া যতই কটাক্ষ করুক, ভারত তাদের উদ্বেগের কারণ নয়—তাদের আত্মবিশ্বাসের আয়না।
