ভারতীয় ফুটবলে নতুন ইতিহাস তৈরি হলো ৩০ আগস্ট ২০২৫ তারিখে। ব্রাজিলিয়ান তারকা ফুটবলার রবসন “রোবিনহো” আজেভেদো দা সিলভা আনুষ্ঠানিকভাবে যোগ দিলেন ভারতের ঐতিহ্যবাহী ক্লাব মোহনবাগান সুপার জায়ান্টে (Mohun Bagan Super Giant)। একাধিক বছরের জন্য করা এই চুক্তি শুধু ইন্ডিয়ান সুপার লিগ (ISL)-এর জন্য নয়, বরং এশিয়ান মহাদেশীয় প্রতিযোগিতা, বিশেষত AFC চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ২০২৫-এর জন্য মোহনবাগানের শক্তিকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে।
রোবিনহোর আগমন – ভারতীয় ফুটবলের জন্য কী অর্থ বহন করে?
ভারতে বিদেশি ফুটবলার আসা নতুন কিছু নয়। তবে রোবিনহোর মতো অভিজ্ঞ ও প্রমাণিত গোলস্কোরারের আগমন ভারতীয় ফুটবলের জন্য এক বড় মাইলফলক। তিনি ব্রাজিলের মাটিতে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নিজের খেলায় ইতিমধ্যেই সুনাম অর্জন করেছেন। তার বহুমুখী খেলার ধরন, গোল করার ক্ষমতা এবং আক্রমণভাগে সৃজনশীলতা Indian Football-এ নতুন মাত্রা যোগ করবে।
AIFF (All India Football Federation) সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের ক্লাব ফুটবলের মান উন্নয়নে যেভাবে কাজ করছে, রোবিনহোর মতো তারকা ফুটবলারদের আগমন সেই প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী করবে।
রোবিনহোর অতীত – ব্রাজিল থেকে বাংলাদেশ হয়ে কলকাতা
রোবিনহো এসেছেন ব্রাজিলের EC Agua Santa ক্লাব থেকে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় তিনি সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার দুর্দান্ত সময়কালের জন্য, যখন তিনি বাংলাদেশের বিখ্যাত ক্লাব Basundhara Kings-এ খেলেছিলেন।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে তার পারফরম্যান্স ছিল নজরকাড়া –
- ৯৭ ম্যাচে ৬৪ গোল
- ৭টি ট্রফি জয়, যার মধ্যে টানা ৪টি লিগ শিরোপা
- অসংখ্য অ্যাসিস্ট এবং ম্যাচ জেতানো পারফরম্যান্স
এই সফলতা তাকে শুধু বাংলাদেশ নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলপ্রেমীদের কাছে জনপ্রিয় করে তোলে। এখন সেই অভিজ্ঞতাই তিনি নিয়ে আসছেন কলকাতায়, যেখানে ঐতিহাসিক মোহনবাগান তাকে ঘিরে নতুন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে।
মোহনবাগানের পরিকল্পনা ও রোবিনহোর ভূমিকা
মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট গত কয়েক বছরে ভারতীয় ফুটবলে সবচেয়ে শক্তিশালী দলগুলির একটি হয়ে উঠেছে। ISL শিরোপা, দেশীয় প্রতিযোগিতা—সব জায়গাতেই তারা নিজেদের প্রমাণ করেছে। এবার লক্ষ্য আরও বড় – AFC Champions League 2025।
এই টুর্নামেন্টে এশিয়ার সেরা দলগুলির বিরুদ্ধে খেলতে হলে আক্রমণভাগকে আরও শক্তিশালী করা প্রয়োজন। রোবিনহো সেই জায়গাতেই দলের জন্য বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন।
তিনি মূলত একজন উইঙ্গার, তবে তার বহুমুখিতা তাকে নম্বর ১০ পজিশনেও (অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার) খেলতে সক্ষম করে।
- ডান প্রান্তে তার গতি এবং কৌশল ডিফেন্ডারদের জন্য আতঙ্ক তৈরি করবে।
- বাঁ প্রান্তে তার ক্রস ও কাট-ইন খেলা ফরোয়ার্ডদের জন্য সুযোগ তৈরি করবে।
- মাঝে খেললে তিনি প্লেমেকারের ভূমিকায় থেকে ফরোয়ার্ডদের বল সরবরাহ করবেন।
অর্থাৎ মোহনবাগানের আক্রমণভাগে এখন একাধিক কৌশল ব্যবহার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় ফুটবলে বিদেশি প্রভাব
Indian Super League (ISL) শুরু হওয়ার পর থেকে বিদেশি খেলোয়াড়দের অবদান ভারতীয় ফুটবলে বিশাল। রবার্ট পিরেস, লুইস গার্সিয়া, দিয়েগো ফর্লানের মতো কিংবদন্তিরা একসময় এখানে খেলেছেন। তবে রোবিনহোর মতো এখনও ফর্মে থাকা ও দক্ষিণ এশিয়ার মাঠে সফল খেলোয়াড়ের আগমন আলাদা তাৎপর্য বহন করছে।
তিনি জানেন এই অঞ্চলের আবহাওয়া, মাঠ ও প্রতিপক্ষের মান। তাই ISL-এ তার মানিয়ে নিতে কোনো সমস্যাই হওয়ার কথা নয়। বরং তার অভিজ্ঞতা তরুণ ভারতীয় ফুটবলারদের অনুপ্রাণিত করবে।
মোহনবাগানের ভক্তদের প্রত্যাশা
মোহনবাগান, যাকে ভারতের ফুটবল সংস্কৃতির প্রতীক বলা হয়, সেই ক্লাবের সমর্থকেরা সবসময়ই আবেগী। তারা রোবিনহোকে ঘিরে দারুণ আশাবাদী। কলকাতার ফুটবলপাগল সমর্থকরা জানেন, এই ব্রাজিলিয়ান উইঙ্গার মাঠে নামলেই গোল ও অ্যাসিস্টের ঝড় তুলতে পারেন।
আগামী মরসুমে মোহনবাগানের হয়ে ISL ছাড়াও ডার্বি ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের বিরুদ্ধে তার পারফরম্যান্স ভক্তদের মধ্যে আলাদা মাত্রার উত্তেজনা তৈরি করবে।
রোবিনহো বনাম ISL ডিফেন্ডাররা
ভারতের ডিফেন্ডাররা যদিও গত কয়েক বছরে উন্নতি করেছে, কিন্তু আন্তর্জাতিক মানের আক্রমণভাগ সামলাতে এখনও অনেক সময় তারা সমস্যায় পড়ে। রোবিনহোর গতি, ড্রিবলিং এবং শুটিং দক্ষতা নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষ রক্ষণভাগের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে।
বিশেষ করে যেহেতু তিনি ডান-বাম দুই দিকেই খেলতে পারেন, তাই প্রতিটি ম্যাচে তাকে থামানো প্রতিপক্ষ কোচদের কাছে কঠিন কাজ হয়ে উঠবে।
AIFF এবং ভারতীয় ফুটবলের ভবিষ্যৎ
AIFF সবসময় চেয়েছে ISL-কে এমন এক লিগে পরিণত করতে, যেখানে ভারতীয় ফুটবলাররা আন্তর্জাতিক মানে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে। রোবিনহোর মতো বিদেশি তারকাদের অংশগ্রহণ সেই লক্ষ্য পূরণের পথ আরও প্রশস্ত করছে।
একদিকে যেমন ভারতীয় তরুণরা বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে অনুশীলন করে নতুন কৌশল শিখবে, অন্যদিকে লিগের প্রতিযোগিতামূলক মানও বাড়বে। ফলে দর্শকদের আগ্রহ যেমন বাড়বে, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও ISL-এর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে।
বাংলাদেশ থেকে ভারত – আঞ্চলিক ফুটবলে নতুন অধ্যায়
রোবিনহোর আগমন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক ফুটবলে নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করছে। বাংলাদেশে Basundhara Kings-এ তার সাফল্যের পর এবার ভারতের Mohun Bagan-এ তিনি আসছেন। এর ফলে ভারত-বাংলাদেশ ফুটবলের মধ্যকার এক অঘোষিত সংযোগ তৈরি হলো।
সমর্থকরা আশা করছেন, ভবিষ্যতে আরও বাংলাদেশি ও ভারতীয় ক্লাব খেলোয়াড় বিনিময় ও প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আঞ্চলিক ফুটবলকে শক্তিশালী করবে।
উপসংহার
রোবিনহোর মতো ব্রাজিলিয়ান তারকার যোগদান নিঃসন্দেহে মোহনবাগান, Indian Football, এমনকি পুরো ISL-এর জন্য এক গেম চেঞ্জার মুহূর্ত। তার গোল, অ্যাসিস্ট ও অভিজ্ঞতা দলকে যেমন শক্তি দেবে, তেমনি তরুণ ভারতীয় ফুটবলারদের জন্যও হবে শেখার সুযোগ।
AFC চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মোহনবাগান কেমন করে, সেটিই এখন সবার নজরে। তবে একথা বলা যায় – রোবিনহো মাঠে নামলেই কলকাতা মেতে উঠবে ব্রাজিলিয়ান ছন্দে।