ক্রিকেট উপমহাদেশে শুধুমাত্র একটি খেলা নয়—এটি আবেগ, গর্ব এবং জাতীয় পরিচয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিচ্ছবি। বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যকার ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা দীর্ঘদিন ধরেই উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দু। যদিও পাকিস্তান ঐতিহাসিকভাবে এই দ্বৈরথে এগিয়ে রয়েছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে, বিশেষ করে ঘরের মাঠে।
ঐতিহাসিক পরিসংখ্যান: কে এগিয়ে?
বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেটের তিনটি প্রধান ফরম্যাটে (টেস্ট, ওয়ানডে, টি-২০) হেড-টু-হেড পরিসংখ্যান নিম্নরূপ:
- টেস্ট ম্যাচ: ১৫টি টেস্টের মধ্যে পাকিস্তান জিতেছে ১২টি, বাংলাদেশ জিতেছে ২টি এবং ১টি ড্র হয়েছে।
- ওয়ানডে ম্যাচ: মোট ৩৯টি ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে ৩৪টি এবং বাংলাদেশ জিতেছে মাত্র ৫টি।
- টি-২০ ম্যাচ: মোট ২২টি টি-২০ ম্যাচে পাকিস্তান জিতেছে ১৯টি, বাংলাদেশ মাত্র ৩টি।
এই পরিসংখ্যান পাকিস্তানের দিকেই ইঙ্গিত করলেও সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের উন্নত পারফরম্যান্স ক্রিকেটবিশ্বকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলেছে।
২০২৫ সালের দুইটি টি-২০ সিরিজ: একে অপরের ঘরে
২০২৫ সালে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দুইবার টি-২০ সিরিজ অনুষ্ঠিত হয়েছে—একবার পাকিস্তানে এবং একবার বাংলাদেশে।
১. বাংলাদেশ সফর পাকিস্তান: মে-জুন ২০২৫
এই সিরিজে পাকিস্তান হোম কন্ডিশনে চমৎকার খেলেছে এবং বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করেছে।
-
১ম টি-২০ (২৮ মে, লাহোর):
পাকিস্তান: ২০১/৭ (২০ ওভারে)
বাংলাদেশ: ১৬৪ (১৯.২ ওভারে)
ফল: পাকিস্তান জয়ী ৩৭ রানে। -
২য় টি-২০ (৩০ মে, লাহোর):
পাকিস্তান: ২০১/৬ (২০ ওভারে)
বাংলাদেশ: ১৪৪ (১৯ ওভারে)
ফল: পাকিস্তান জয়ী ৫৭ রানে। -
৩য় টি-২০ (১ জুন, লাহোর):
বাংলাদেশ: ১৯৬/৬ (২০ ওভারে)
পাকিস্তান: ১৯৭/৩ (১৭.২ ওভারে)
ফল: পাকিস্তান জয়ী ৭ উইকেটে।
২. পাকিস্তান সফর বাংলাদেশ: জুলাই ২০২৫
এই সিরিজে বাংলাদেশ নিজ মাঠে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের দুর্দান্ত জয়ে ক্রিকেটপ্রেমীরা নতুন আশার আলো দেখছেন।
-
১ম টি-২০ (২০ জুলাই, ঢাকা):
পাকিস্তান: ১১০ (সব আউট)
বাংলাদেশ: ১১২/৩ (১৫.৩ ওভারে)
ফল: বাংলাদেশ জয়ী ৭ উইকেটে।
ম্যাচ হাইলাইটস: পারভেজ হোসেন ইমন দুর্দান্ত ব্যাটিং করেছেন এবং বাংলাদেশ বোলিংয়ে বিশেষ দক্ষতা দেখিয়েছে। পাকিস্তানের আব্বাস আফ্রিদি একমাত্র Hridoyer উইকেট পান। -
২য় টি-২০: অনুষ্ঠিত হবে ২২ জুলাই, ২০২৫, ঢাকায়, বিকেল ৫:৩০ মিনিটে।
-
৩য় টি-২০: অনুষ্ঠিত হবে ২৪ জুলাই, ২০২৫, একই মাঠে, একই সময়ে।
খেলোয়াড়দের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স ও পরিসংখ্যান
এই দুই দলের কিছু গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়ের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান নিচে দেওয়া হলো:
⚡ সাইম আইয়ুব (পাকিস্তান)
- ভূমিকা: ওপেনার (বাঁ-হাতি ব্যাটার)
- ম্যাচ: ২৭
- রান: ৪৯৮
- গড়: ২১.৬৫
- স্ট্রাইক রেট: ১৩৮.৪৮
- সর্বোচ্চ রান: ৯৮* (দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে, ডিসে ২০২৪)
- সাম্প্রতিক ফর্ম: বাংলাদেশের বিপক্ষে মে/জুন সিরিজে স্কোর—০(১), ৪(৪), ৪৫(২৯)
⚡ সালমান আলী আঘা (পাকিস্তান)
- ভূমিকা: অলরাউন্ডার (ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও অফস্পিনার)
- ম্যাচ: ১৪
- রান: ৩০৭ | গড়: ২৭.৯০
- উইকেট: ৩ | সেরা বোলিং: ১/৭
- বর্তমান অবস্থা: তরুণ পাকিস্তান দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
⚡ মুস্তাফিজুর রহমান (বাংলাদেশ)
- ভূমিকা: বোলার (বাঁ-হাতি মিডিয়াম পেসার)
- ম্যাচ: ১০৯
- উইকেট: ১৩৬
- বোলিং গড়: ২১.৩৩
- সেরা বোলিং: ৬/১০
- বৈশিষ্ট্য: কাটার ও স্লোয়ার বলের জাদুকর। ২০২১ সালে আইসিসি টি-২০ দলেও জায়গা পেয়েছিলেন।
⚡ পারভেজ হোসেন ইমন (বাংলাদেশ)
- ভূমিকা: ওপেনার (বাঁ-হাতি ব্যাটার)
- ম্যাচ: ১৫
- রান: ৩০৪
- গড়: ২০.২৬
- সর্বোচ্চ রান: ১০০
- গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা: ৫৪ বলে সেঞ্চুরি (শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে, মে ২০২৫)—বাংলাদেশের দ্রুততম টি-২০ শতক। পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
⚡ তাসকিন আহমেদ (বাংলাদেশ)
- ভূমিকা: ফাস্ট বোলার (ডানহাতি)
- ম্যাচ: ৭৩
- উইকেট: ৮২
- গড়: ২৩.২৮
- সেরা বোলিং: ৪/১৬
- বিশেষত্ব: ১৪০ কিমি/ঘণ্টা গতিতে ধারাবাহিকভাবে বল করতে পারেন। ২০১২ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি ছিলেন।
⚡ তাওহিদ হৃদয় (বাংলাদেশ)
- ভূমিকা: মিডল অর্ডার ব্যাটার (ডানহাতি)
- ম্যাচ: ৪১
- রান: ৮৬৪
- গড়: ২৭.০০
- সর্বোচ্চ রান: ৬৩*
- সাম্প্রতিক ফর্ম: প্রথম টি-২০ তে আব্বাস আফ্রিদির বলে আউট হন।
লাইভ সম্প্রচার ও স্ট্রিমিং তথ্য (ভারতের দর্শকদের জন্য)
বর্তমানে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত পাকিস্তান সিরিজ ভারতের কোনো চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচারিত হচ্ছে না। তবে:
- লাইভ স্ট্রিমিং: FanCode অ্যাপ ও ওয়েবসাইটে উপলব্ধ।
- সাবস্ক্রিপশন: ম্যাচ লাইভ দেখতে হলে সাবস্ক্রিপশন নিতে হবে।
উপসংহার: পরবর্তী ম্যাচের দিকে চোখ
বাংলাদেশের ঘরের মাঠে জয় দিয়ে সিরিজ শুরু তাদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করেছে। পাকিস্তান নতুন ও তরুণ দল নিয়ে খেলছে, এবং তাদের জন্য এটা পুনর্গঠনের একটি সময়। ২২ এবং ২৪ জুলাইয়ের পরবর্তী দুটি ম্যাচ এখন এই সিরিজের ভাগ্য নির্ধারণ করবে।
ভবিষ্যতে এই দুই দলের মধ্যকার দ্বৈরথ আরও উত্তেজনাপূর্ণ হবে বলেই মনে করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের শক্তিশালী বোলিং ও নতুন প্রজন্মের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স পাকিস্তানের অভিজ্ঞ এবং প্রতিভাবান দলের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে।
ট্যাগসমূহ: #BANvsPAK #T20Cricket #বাংলাদেশ_ক্রিকেট #পাকিস্তান_ক্রিকেট #ক্রিকেটরিভ্যালরি #BangladeshCricket #PakistanCricket