![]() |
| ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের বিদ্রোহ |
ভারতের ওপর ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক: মার্কিন কংগ্রেসের বিদ্রোহ, রাজনৈতিক প্রতিশোধ ও একটি ব্যর্থ বাণিজ্যযুদ্ধ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে একটি বিষয় বরাবরই স্থায়ী—রাগ, প্রতিশোধ আর শুল্ক। ২০২৫ সালে ভারতের ওপর চাপানো ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক সেই পুরোনো ট্রাম্প-ডকট্রিনেরই নতুন সংস্করণ, যেখানে যুক্তি কম, আবেগ বেশি এবং আইনি ভিত্তি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। এই শুল্কনীতি শুধু ভারত বা বিশ্ব বাণিজ্যকে নয়, সরাসরি মার্কিন সংবিধান ও কংগ্রেসের ক্ষমতাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে—আর সেই কারণেই ট্রাম্পের নিজের দেশেই শুরু হয়েছে বিদ্রোহ।
২০২৫ সালের ১২ ডিসেম্বর মার্কিন কংগ্রেসে একটি দ্বিদলীয় প্রস্তাব উত্থাপিত হয়, যার একমাত্র লক্ষ্য—ভারতের ওপর আরোপিত ট্রাম্পের ৫০% শুল্ক বাতিল করা। এই উদ্যোগ শুধু একটি বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত নয়, বরং ট্রাম্পের “ইমার্জেন্সি পাওয়ার” অপব্যবহারের বিরুদ্ধে একটি সাংবিধানিক যুদ্ধ।
❓ ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর ৫০% শুল্ক বসান?
২০২৫ সালে ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের রাশিয়ান তেল আমদানিকে অজুহাত দেখিয়ে IEEPA আইনের অধীনে একতরফাভাবে ৫০% শুল্ক আরোপ করেন। কংগ্রেসের মতে, এটি জাতীয় নিরাপত্তার ভুয়া অজুহাতে ক্ষমতার অপব্যবহার, যা মার্কিন ভোক্তা ও ভারত–মার্কিন কৌশলগত সম্পর্ক—দুটিকেই ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
কীভাবে শুরু হলো এই শুল্কযুদ্ধ?
২০২৫ সালজুড়ে ধাপে ধাপে ভারতের বিরুদ্ধে শুল্ক বাড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প—ঠিক যেন রাগ জমিয়ে শেষে বিস্ফোরণ।
ধাপ ১: ১ আগস্ট ২০২৫
প্রথমে ২৫ শতাংশ শুল্ক। যুক্তি?
👉 “ভারত রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনছে, যা মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি।”
একই সময়ে ইউরোপ রাশিয়ার গ্যাস কিনছে, আমেরিকান কোম্পানিগুলো রাশিয়ান ইউরেনিয়াম ব্যবহার করছে—কিন্তু সেগুলোতে কোনো “জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি” নেই।
ধাপ ২: ৭ আগস্ট ২০২৫
একটি নির্বাহী আদেশ জারি করে ট্রাম্প আনুষ্ঠানিকভাবে ২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর করেন। কিছু খাত—ফার্মাসিউটিক্যালস, ইলেকট্রনিক্স, এনার্জি—ছাড় পায়। অর্থাৎ ট্রাম্প নিজেই জানতেন, পুরোপুরি শুল্ক বসালে আমেরিকারই ক্ষতি হবে।
ধাপ ৩: ২৭ আগস্ট ২০২৫
এবার আসে আসল নাটক।
আরও ২৫ শতাংশ “secondary tariff”।
মোট শুল্ক = ৫০ শতাংশ।
ফলাফল?
👉 ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বেশি শুল্ক আরোপিত বাণিজ্য অংশীদার।
👉 ব্রাজিল, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ—সবাই পেছনে।
কেন এই শুল্ক “অবৈধ”—কংগ্রেসের অভিযোগ
এই পুরো শুল্ক আরোপ করা হয়েছে IEEPA (International Emergency Economic Powers Act) ব্যবহার করে। এই আইন মূলত যুদ্ধ, সন্ত্রাস বা প্রকৃত জাতীয় জরুরি অবস্থার জন্য।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—
🔹 ভারত কি আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে?
🔹 ভারত কি সন্ত্রাসবাদে জড়িত?
🔹 নাকি ভারত শুধু নিজের জাতীয় স্বার্থে সস্তা তেল কিনছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর “না” বলেই কংগ্রেসের দাবি—ট্রাম্প এখানে একটি রাজনৈতিক হাতিয়ারকে জরুরি অবস্থা বানিয়েছেন।
কংগ্রেসের বিদ্রোহ: কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন?
এই প্রস্তাবটি এনেছেন তিনজন হাউস ডেমোক্র্যাট—
-
ডেবোরা রস
-
মার্ক ভিসি
-
রাজা কৃষ্ণমূর্তি (ভারতীয় বংশোদ্ভূত, এবং ট্রাম্পের শুল্কনীতির অন্যতম তীব্র সমালোচক)
রাজা কৃষ্ণমূর্তির বক্তব্য ছিল কূটনৈতিক ভাষায়, কিন্তু বার্তা ছিল স্পষ্ট:
“ট্রাম্পের দায়িত্বজ্ঞানহীন শুল্কনীতি ভারতের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সম্পর্ক দুর্বল করছে, মার্কিন কর্মসংস্থান ক্ষতিগ্রস্ত করছে এবং সাধারণ আমেরিকানদের জন্য জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে।”
সহজ ভাষায়—
👉 ট্রাম্প ভারতের ক্ষতি করতে গিয়ে নিজের দেশের মানুষকেই শাস্তি দিচ্ছেন।
ট্রাম্পের আসল সমস্যা: রাশিয়া নয়, অহং
সরকারিভাবে যুক্তি দেওয়া হয়েছে—ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা।
কিন্তু জেফারিজ গ্রুপের বিশ্লেষণ বলছে ভিন্ন কথা।
মে ২০২৫: ট্রাম্প-ভারত সংঘাতের শুরু
ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার সময় ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেন, তিনি “মধ্যস্থতা করতে চান”।
ভারতের জবাব ছিল কূটনৈতিক কিন্তু স্পষ্ট—
👉 “ভারত তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায় না।”
এই প্রত্যাখ্যান ট্রাম্পের জন্য ছিল ব্যক্তিগত অপমান।
এরপরই শুল্ক, চাপ, হুমকি—সব একে একে।
অর্থাৎ, এটি বৈদেশিক নীতি নয়, ব্যক্তিগত প্রতিশোধনীতি।
কংগ্রেস কেন এবার নড়েচড়ে বসেছে?
কারণ ট্রাম্প এখানে শুধু ভারতকে নয়, কংগ্রেসকেই বাইপাস করেছেন।
মার্কিন সংবিধান অনুযায়ী—
-
বাণিজ্য নীতি নির্ধারণের ক্ষমতা কংগ্রেসের
-
প্রেসিডেন্টের নয়
ট্রাম্প সেই ক্ষমতা “জাতীয় জরুরি অবস্থা”র অজুহাতে কেড়ে নিচ্ছেন—এটাই কংগ্রেসের মূল আপত্তি।
ব্রাজিল ইস্যু: ট্রাম্পের জন্য খারাপ খবর
এই ভারত-বিরোধী প্রস্তাবটি একা নয়।
এর আগে ব্রাজিলের ওপর আরোপিত ট্রাম্পের শুল্ক বাতিলের প্রস্তাব সিনেটে পাশ হয়েছে।
অর্থাৎ—
👉 কংগ্রেস ইতিমধ্যেই ট্রাম্পের শুল্কনীতির বিরুদ্ধে নজির তৈরি করেছে।
👉 ভারতের ক্ষেত্রেও একই পথ খোলা।
এই শুল্কে কারা ক্ষতিগ্রস্ত?
১. মার্কিন ভোক্তা
ভারতীয় পণ্য মানেই—
-
সস্তা ওষুধ
-
টেক্সটাইল
-
ইঞ্জিনিয়ারিং গুডস
৫০% শুল্ক = সরাসরি দাম বৃদ্ধি।
২. মার্কিন কোম্পানি
অনেক আমেরিকান কোম্পানি ভারতের ওপর নির্ভরশীল সাপ্লাই চেইনের জন্য।
শুল্ক মানে—
-
উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি
-
প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া
৩. কৌশলগত সম্পর্ক
চীন মোকাবিলায় ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার।
এই শুল্ক সেই সম্পর্ককেই দুর্বল করছে।
বর্তমান অবস্থা: ট্রাম্পের শুল্ক এখনো বহাল, কিন্তু…
ডিসেম্বর ২০২৫-এর মাঝামাঝি পর্যন্ত—
-
৫০% শুল্ক এখনো কার্যকর
-
কংগ্রেসে প্রস্তাব আলোচনা পর্যায়ে
কিন্তু বাস্তবতা হলো—
👉 ট্রাম্প এখন আর একা নন
👉 কংগ্রেস প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে
👉 “জাতীয় জরুরি অবস্থা”র নামে বাণিজ্য যুদ্ধ চালানো দিন দিন কঠিন হচ্ছে
শেষ কথা: ট্রাম্পের শুল্কনীতি—একটি ব্যর্থ অহংকারের গল্প
ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০% শুল্ক কোনো কৌশলগত মাস্টারস্ট্রোক নয়। এটি—
-
ব্যক্তিগত অপমানের প্রতিশোধ
-
আইনগত ক্ষমতার অপব্যবহার
-
আমেরিকার নিজের অর্থনীতির ক্ষতি
-
এবং একটি গুরুত্বপূর্ণ জোটকে দুর্বল করার আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত
এই শুল্ক যদি বাতিল হয়, সেটি শুধু ভারতের জয় হবে না—
👉 এটি হবে মার্কিন গণতন্ত্রের জয়, সংবিধানের জয় এবং ট্রাম্পীয় রাজনীতির পরাজয়।
US–India strategic partnership
Russia oil sanctions politics
People Also Ask
ট্রাম্পের ভারতের ওপর ৫০% শুল্ক কি এখনো কার্যকর?
হ্যাঁ, ডিসেম্বর ২০২৫ পর্যন্ত শুল্ক বহাল রয়েছে, তবে কংগ্রেসে তা বাতিলের প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছে।
এই শুল্ক কেন অবৈধ বলা হচ্ছে?
কারণ ট্রাম্প IEEPA আইন ব্যবহার করে কংগ্রেসকে বাইপাস করেছেন,
যা শুধুমাত্র প্রকৃত জাতীয় জরুরি অবস্থার জন্য প্রযোজ্য।
ভারতের রাশিয়ান তেল কেনা কি একমাত্র কারণ?
না। বিশ্লেষকদের মতে, পাকিস্তান ইস্যুতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানই
এই শুল্ক প্রতিশোধের বড় কারণ।
কংগ্রেস কি আগে এমন শুল্ক বাতিল করেছে?
হ্যাঁ। ব্রাজিলের ওপর আরোপিত ট্রাম্পের শুল্ক ইতিমধ্যেই সিনেটে বাতিল হয়েছে।
