তিনের ডিসেম্বর ২০২৫-এর বক্তব্য: ইউরোপকে ‘শূকর’ বলা থেকে পারমাণবিক হুমকি—সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ

Putin European swine comment and Russia Europe tension 2025
ডিসেম্বর ২০২৫-এ পুতিনের বক্তব্য ইউরোপ–রাশিয়া সম্পর্ককে নতুন সংঘাতের দিকে ঠেলে দেয়

ভূমিকা

ডিসেম্বর ২০২৫-এ রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এমন কিছু বক্তব্য দেন, যা শুধু ইউরোপ নয়, পুরো বিশ্ব রাজনীতিতে গভীর আলোড়ন তোলে। এই বক্তব্যগুলো কোনো হালকা রাজনৈতিক মন্তব্য ছিল না। বরং এগুলো ছিল স্পষ্ট হুমকি, কূটনৈতিক ভদ্রতার সীমা ভেঙে দেওয়া ভাষা এবং ভবিষ্যতের যুদ্ধ ও সংঘাতের ইঙ্গিত।

বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোর উদ্দেশে পুতিনের “European swine” বা “ইউরোপীয় শূকর” মন্তব্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক ধরনের point of no return তৈরি করেছে। এই লেখায় আমরা দেখব—পুতিন ঠিক কী বলেছেন, কেন বলেছেন, এর পেছনের কৌশল কী, এবং এর প্রভাব ইউরোপ, ইউক্রেন, আমেরিকা ও গোটা বিশ্বের ওপর কী হতে পারে।


পুতিন কী বলেছিলেন এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ

“European swine” মন্তব্য

২০২৫ সালের ১৬–১৭ ডিসেম্বর, রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে একটি বার্ষিক বৈঠকে পুতিন ইউরোপীয় নেতাদের উদ্দেশে অত্যন্ত কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন। তিনি বলেন—

“European swine wanted to feast on the collapse of Russia.”

এই বাক্যে তিনি ইউরোপের দেশগুলোকে এমন শক্তি হিসেবে তুলে ধরেন, যারা নাকি রাশিয়ার পতন দেখে আনন্দ পেতে চায় এবং সেই পতন থেকে লাভ তুলতে চায়।

“Podsvinki” শব্দটি রাশিয়ান ভাষায় খুবই বিরল ও অপমানজনক। আগে এই শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। পুতিনের মুখে এই শব্দ শোনা মানে পরিষ্কার সংকেত—তিনি ইচ্ছাকৃতভাবেই ভাষার মাত্রা নামিয়ে এনেছেন।

এটি কোনো রাগের মুহূর্তের কথা নয়; বরং পরিকল্পিত রাজনৈতিক বার্তা।


বক্তব্যের বড় প্রেক্ষাপট

পুতিনের এই মন্তব্য আলাদা করে দেখা যায় না। এটি ছিল একটি দীর্ঘ সামরিক ও কৌশলগত বক্তৃতার অংশ, যেখানে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসে।

ইউক্রেন নিয়ে কোনো আপস নয়

পুতিন পরিষ্কারভাবে বলেন, ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে যেসব এলাকা এখনো রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসেনি, সেগুলো force দিয়ে দখল করা হবে, যদি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান না হয়।

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে প্রস্তাবিত ২৮ দফা শান্তি পরিকল্পনাকে “absolutely unacceptable” বলে খারিজ করেন।

অর্থাৎ, রাশিয়া এখন আর মধ্যপন্থার কথা ভাবছে না।


পারমাণবিক হুমকি

পুতিন দাবি করেন—

  • রাশিয়ার ৯২% nuclear force আধুনিকীকরণ করা হয়েছে

  • এটি পৃথিবীর অন্য যেকোনো nuclear power-এর চেয়ে বেশি

  • নতুন Oreshnik missile system ২০২৫-এর শেষের দিকে combat duty-তে যাবে

  • এই missile নাকি “impossible to intercept”

এগুলো সরাসরি nuclear signaling। এর মানে হলো—রাশিয়া চাইছে সবাই বুঝুক, যুদ্ধ বড় হলে nuclear level-এ যেতে তারা পিছপা হবে না।


সামরিক শক্তি প্রদর্শন

পুতিন বলেন—

  • রাশিয়ার সেনাবাহিনী এখন “battle-hardened”

  • তারা এখন আগের মতো নয়

  • পুরো front line জুড়ে রাশিয়ার “strategic initiative” আছে

এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি দেখাতে চান, রাশিয়া যুদ্ধ থেকে দুর্বল হয়ে বের হয়নি, বরং আরও কঠোর ও বিপজ্জনক হয়েছে।


দোষ চাপানো: ইউরোপ ও আমেরিকার ওপর

পুতিন বলেন—

  • যুদ্ধ শুরু করার জন্য দায়ী ছিল আগের Biden administration

  • ইউরোপ সেই যুদ্ধে যোগ দিয়েছে

  • ইউরোপ চেয়েছিল রাশিয়ার পতন

এভাবে তিনি নিজের আগ্রাসনকে “defensive response” হিসেবে তুলে ধরতে চান।


ডিসেম্বরের আগের হুমকিগুলো

ডিসেম্বরের শুরুতেই পুতিন ইউরোপকে সতর্ক করেছিলেন।

২ ডিসেম্বর ২০২৫ তিনি বলেন—

“If Europe suddenly decided to wage war, there would very quickly be no one left to negotiate with.”

এর মানে—যুদ্ধ হলে আলোচনা করার মতো কেউ বেঁচে থাকবে না।

তিনি ইউরোপের নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগকে “lie and nonsense” বলেও উড়িয়ে দেন।


ইউরোপ ও বিশ্ব কেন এত কড়া প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে

কূটনৈতিক ভাঙন

“Swine” মন্তব্য কূটনীতির ভাষায় শুধু অপমান নয়—এটি সম্পর্ক ভাঙার ঘোষণা।

এই মন্তব্যের মাধ্যমে পুতিন ইউরোপীয় নেতাদের—

  • নৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত

  • শত্রু

  • আলোচনা অযোগ্য

হিসেবে চিত্রিত করেছেন।

এ ধরনের ভাষার পর স্বাভাবিক কূটনৈতিক আলোচনায় ফেরা প্রায় অসম্ভব।


NATO-এর মূল্যায়ন

NATO Secretary-General Mark Rutte ডিসেম্বরের মাঝামাঝি বলেন—

  • ইউরোপ রাশিয়ার next target হতে পারে

  • ভবিষ্যতের যুদ্ধ হতে পারে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো বড়

জার্মান গোয়েন্দা সংস্থা জানায়, ২০২৯ সালের মধ্যে রাশিয়া NATO-র বিরুদ্ধে offensive চালানোর সক্ষমতা অর্জন করতে পারে।


মিডিয়ার প্রতিক্রিয়া

Reuters, BBC, CNN, Euronews—সবাই একসঙ্গে একটি বিষয় তুলে ধরে—

  • পুতিন কোনো compromise চান না

  • তিনি একদিকে আমেরিকার সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা দেখান

  • অন্যদিকে ইউরোপকে প্রকাশ্যে অপমান করেন

এতে স্পষ্ট হয়, রাশিয়া ইউরোপ ও আমেরিকাকে আলাদা ভাবে দেখছে।


রাশিয়া–ইউরোপ সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা

প্রায় সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্নতা

পুতিনের এই বক্তব্যের পর ইউরোপের সঙ্গে রাশিয়ার সম্পর্ক কার্যত frozen।

এখন—

  • কোনো meaningful dialogue নেই

  • বিশ্বাস নেই

  • পারস্পরিক সম্মান নেই

এটি শুধু ইউক্রেন ইস্যুতে নয়, পুরো ইউরোপীয় নিরাপত্তা কাঠামোর জন্য বিপজ্জনক।


ইউরোপের সামরিক প্রস্তুতি

পুতিনের বক্তব্যের পর ইউরোপ ইতিহাসের সবচেয়ে বড় সামরিক প্রস্তুতি নিচ্ছে।

উদাহরণ—

  • জার্মানি WWII-র পর প্রথমবার Eastern Europe-এ স্থায়ী সেনা মোতায়েন করেছে

  • পোল্যান্ড তৈরি করছে “East Shield”

  • লিথুয়ানিয়া defence spending বাড়িয়ে GDP-এর ৫–৬% করেছে

  • বহু দেশ ৫% GDP defence target-এর দিকে যাচ্ছে

এটি স্পষ্ট যুদ্ধের প্রস্তুতি।


সংলাপ স্থবির

পুতিন বলেন, তিনি আশা করেন ইউরোপ “new political elites” পাবে, তখন কথা হবে।

এর মানে—

বর্তমান ইউরোপীয় নেতৃত্বকে তিনি বাতিল করে দিয়েছেন।


বৈশ্বিক ভূরাজনীতিতে প্রভাব

আমেরিকা–ইউরোপ বিভাজন

পুতিন স্পষ্টভাবে বলছেন—

  • আমেরিকার সঙ্গে কথা হচ্ছে

  • ইউরোপের সঙ্গে কথা সম্ভব নয়

এটি deliberate strategy—Western unity ভাঙা।

তিনি মনে করেন, Trump administration-এর সঙ্গে deal করা যাবে, ইউরোপকে side-এ রেখে।


Trump ও পুতিনের কৌশল

পুতিনের বক্তব্য এমন সময়ে এসেছে, যখন Trump-এর দূতরা আলোচনায় ছিলেন।

এতে দুটি সম্ভাবনা—

  1. Trump পুতিনকে ভুল বুঝছেন

  2. পুতিন দুই দিক দিয়ে খেলছেন—একদিকে আলোচনা, অন্যদিকে হুমকি


“Historical Territories” ধারণা

পুতিন বারবার বলেন—

  • historical lands

  • security buffer zone

এর মানে শুধু ডনবাস নয়। ভবিষ্যতে ঝুঁকিতে—

  • Moldova

  • Baltic states

  • Poland

এটি শুধু ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, ইউরোপের মানচিত্র বদলানোর চিন্তা।


Information warfare

পুতিন আগেই বলেছেন, তিনি ইউরোপের far-right ও anti-establishment দলগুলোকে সমর্থন করবেন।

“Swine” মন্তব্য সেই দলগুলোর জন্য বার্তা—

বর্তমান নেতৃত্ব খারাপ, বদল দরকার।

এতে ইউরোপের রাজনীতি আরও polarised হতে পারে।


ইউরোপের নতুন বাস্তবতা

ইউরোপ এখন বুঝছে—

  • তারা শুধু আমেরিকার ওপর নির্ভর করতে পারবে না

  • US আলাদা deal করতে পারে

  • ইউরোপকে নিজেই defence build করতে হবে

এটি ইউরোপীয় ইতিহাসে বড় পরিবর্তন।


Nuclear risk

পুতিনের nuclear rhetoric + নতুন missile deployment = high risk।

ভুল হিসাব বা accident পুরো পরিস্থিতিকে nuclear crisis-এ নিয়ে যেতে পারে।


“Waiting for new elites” কৌশল

পুতিন বিশ্বাস করেন—

  • ইউরোপের বর্তমান সরকারগুলো টিকবে না

  • pro-Russia সরকার আসবে

  • তখন borders বদলানো যাবে

এটি long-term gamble, কিন্তু ইউরোপের গণতন্ত্রের জন্য বড় হুমকি।


উপসংহার

পুতিনের ডিসেম্বর ২০২৫-এর বক্তব্য কোনো সাধারণ ভাষণ নয়। এটি একটি strategic declaration

এই বক্তব্যে তিনি—

  • ইউরোপকে প্রকাশ্যে অপমান করেছেন

  • ইউক্রেন নিয়ে কোনো আপসের পথ বন্ধ করেছেন

  • nuclear threat দিয়েছেন

  • রাজনৈতিক বিভাজনের কৌশল স্পষ্ট করেছেন

এর ফলে বোঝা যায়, রাশিয়া এখন যুদ্ধের মাধ্যমে এবং রাজনৈতিক ভাঙনের মাধ্যমে জয় চায়—কূটনৈতিক সমাধানের মাধ্যমে নয়।

ইউরোপ ও বিশ্ব এখন এমন এক পর্যায়ে দাঁড়িয়ে, যেখানে ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে—সংঘাত বাড়বে, না কি কোনোভাবে নতুন balance তৈরি হবে।

কিন্তু এক কথা নিশ্চিত—ডিসেম্বর ২০২৫-এর পর আর আগের মতো কিছু নেই।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4