![]() |
পাকিস্তানের যুদ্ধ-হুমকি আসলে অর্থনৈতিক সংকট ও সেনাশাসনের আতঙ্কের প্রতিফলন |
পাকিস্তানের যুদ্ধ-হুমকি কেন আসলে রাজনৈতিক আতঙ্কের চিৎকার
পাকিস্তানের সাম্প্রতিক যুদ্ধংদেহী বক্তব্য—বিশেষ করে সেনাপ্রধান Asim Munir–এর “আমরা চাইলে অর্ধেক পৃথিবী ধ্বংস করে দেব” ধরনের মন্তব্য—শোনার পর অনেকেই ভেবেছেন, উপমহাদেশ বুঝি আরেক ধাপ এগোল পারমাণবিক ধ্বংসের দিকে। বাস্তবে এই বক্তব্য কোনো শক্তির প্রদর্শন নয়; এটি একটি কোণঠাসা রাষ্ট্রযন্ত্রের রাজনৈতিক আতঙ্ক। বাঘের গর্জন নয়—এটা ধ্বংসের কিনারায় দাঁড়ানো এক জেনারেলের মাইক্রোফোন-চিৎকার।
এই লেখায় আমরা ঠান্ডা মাথায়, কিন্তু ধারালো ভাষায় দেখব—কেন এই হুমকি আসলে দুর্বলতার স্বীকারোক্তি, কেন পাকিস্তানের সেনাশাসন ভারতকে নয় বরং নিজের জনগণকেই ভয় দেখাচ্ছে, এবং কেন “যুদ্ধ” শব্দটা তাদের কাছে আজ আইএমএফ কিস্তির মতোই দরকারি।
১) গর্জনের অনুবাদ: “আমরা জিততে পারি না, তাই সবাইকে ভয় দেখাব”
ফ্লোরিডায় বসে “অর্ধেক পৃথিবী ধ্বংস” করার হুমকি আর ডিসেম্বরের “ডিসাইসিভ রেসপন্স”—এই দু’টি বাক্য একসঙ্গে পড়লে পরিষ্কার হয়, পাকিস্তানের নতুন কৌশল হলো এস্কালেশন ডমিন্যান্স। অর্থাৎ, দীর্ঘমেয়াদি প্রচলিত যুদ্ধে তারা হারবে—এটা জেনেও শুরুতেই পারমাণবিক/বেসামরিক বিপর্যয়ের ভয় দেখিয়ে বিশ্বকে টেনে আনা।
কেন এই নাটক? কারণ India–র প্রায় চার ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি বনাম Pakistan–এর তিনশো-পচাত্তর বিলিয়নের বাস্তবতা একেবারে নগ্ন। যুদ্ধের প্রথম মাসেই ভারতের শিল্প, জ্বালানি, রসদ টিকে থাকবে; পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সপ্তাহই বড় প্রশ্ন।
“ডিসাইসিভ রেসপন্স” মানে কী?
এটা আসলে পুরনো “Quid Pro Quo Plus”–এর রোস্টেড সংস্করণ। ভারত যদি সীমিত সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করে—পাকিস্তানের জবাব হবে সীমা ছাড়িয়ে, যাতে ভারতীয় সিদ্ধান্তপ্রক্রিয়া “শক” খায়। সহজ ভাষায়: সমান জবাব দিতে পারি না, তাই অসমান আতঙ্ক তৈরি করব।
বাঁধ, জল, জলবায়ু—নতুন হুমকির নোংরা অধ্যায়
ভারতের বাঁধে আঘাতের কথা বলে পাকিস্তান স্বীকার করছে যে ভবিষ্যৎ যুদ্ধ তারা সামরিক ঘাঁটি নয়, বেসামরিক পরিকাঠামো–তে নিয়ে যেতে চায়। জলবায়ু দুর্বলতাকে অস্ত্র বানানো—এটা কৌশল নয়, নৈতিক দেউলিয়াপনা।
২) “আমাদের কে বাঁচাবে?”—পাকিস্তানের নতুন ভরসার তালিকা
ক) সৌদি আরব: ডলার-ডিফিব্রিলেটর
সেপ্টেম্বর দুই হাজার পঁচিশে পাকিস্তান–সৌদি স্ট্র্যাটেজিক মিউচুয়াল ডিফেন্স এগ্রিমেন্ট—এই চুক্তি আসলে আইডিয়োলজি নয়, ইকোনমিক আইসিইউ।
Saudi Arabia দেয় পাঁচ থেকে দশ বিলিয়ন ডলারের ডিপোজিট, তেল-নিরাপত্তার আশ্বাস; বদলে পাকিস্তান দেয় নিউক্লিয়ার ছাতা ইঙ্গিত। অর্থাৎ, রিয়াধের নিরাপত্তা—ইসলামাবাদের পারমাণবিক ভয় দেখানোয় বাঁধা।
রোস্টটা এখানেই: পাকিস্তানের “সার্বভৌম” নিরাপত্তা এখন তেলের ইনভয়েসে লেখা।
খ) তুরস্ক: বক্তৃতা নয়, ড্রোন
Turkey পাকিস্তানকে দেয় Bayraktar TB2, Akinci—হার্ডওয়্যার। কাশ্মীর ইস্যুতে জোরালো বক্তব্য—সফট পাওয়ার।
কিন্তু বাস্তবতা? ড্রোন দিয়ে যুদ্ধ জেতা যায় না, বিশেষ করে যখন প্রতিপক্ষের আকাশে বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা থাকে।
গ) চীন: “আয়রন ব্রাদার”, কিন্তু শর্তসাপেক্ষ
China দেয় J-10C, সাবমেরিন, কূটনৈতিক কভার। কিন্তু বেইজিংও ক্লান্ত—চীনা নাগরিকদের উপর হামলা, টিটিপি ঝামেলা, সিপিইসি ঝুঁকি। যুদ্ধ হলে চীন গোপন সহায়তা, সাইবার, ইন্টেল দেবে—হিমালয়ে দ্বিতীয় ফ্রন্ট খুলবে? না, যদি না তাদের স্বার্থে সরাসরি আঘাত লাগে।
৩) ঘরের আগুন: টিটিপি, তালিবান আর “সুপার জেনারেল” সংবিধান
পাকিস্তানের ভেতরে তিনমুখী সংকট—এটাই আসল গল্প।
পশ্চিমে টিটিপি
আফগান তালিবান টিটিপিকে লাগাম দেয়নি। ফলে ইসলামাবাদ পশ্চিমে যুদ্ধ করছে, আর পূর্বে হুমকি দিচ্ছে—স্ট্র্যাটেজি নয়, স্কিজোফ্রেনিয়া।
২৭তম সংশোধনী: সংবিধান, না কি কুপের সিলমোহর?
নভেম্বর দুই হাজার পঁচিশে ২৭তম সংশোধনী—নিরপেক্ষ “চেয়ারম্যান জয়েন্ট চিফস” বাতিল, চিফ অফ ডিফেন্স ফোর্সেস–এর পদে মুন্নির। নৌ ও বিমান বাহিনী সরাসরি তাঁর অধীনে।
এর মানে? বেসামরিক তত্ত্বাবধান শূন্য। দ্রুত, আক্রমণাত্মক, একক সিদ্ধান্ত—ভুলের সম্ভাবনা বহুগুণ।
জনগণ বনাম জেনারেল
ত্রিশ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি, আইএমএফ শর্ত, কর্মসংস্থান সংকট—এগুলো ঢাকতেই দরকার বাহ্যিক শত্রু। ভারত—সবচেয়ে সুবিধাজনক।
৪) ভারতের অবস্থান: শক্তি, কিন্তু উত্তেজনা নয়
ভারত দুই হাজার পঁচিশে স্ট্র্যাটেজিক অটোনমি–তে খেলছে।
সামরিক ও প্রযুক্তি
-
বহুস্তরীয় আকাশ প্রতিরক্ষা (S-400 সমতুল্য)
-
ইসরায়েলি হারোপ/হেরন এমকে–টু
-
সীমান্তের বাইরে নির্ভুল আঘাতের নজির—“অপারেশন সিন্দুর”
বৈশ্বিক সমর্থন ম্যাট্রিক্স
-
Israel: প্রযুক্তি ও ইন্টেল—দৃঢ়
-
Russia: স্পেয়ারস, সাবমেরিন টেক; ইউএনে ঢাল
-
United States: বাণিজ্যে টানাপোড়েন, কিন্তু প্রতিরক্ষা যোগাযোগ অটুট
-
France: রাফাল, কূটনৈতিক নির্ভরতা
রোস্টটা এখানে: পাকিস্তান যেখানে বেইলআউট-নির্ভর, ভারত সেখানে নেটওয়ার্ক-নির্ভর।
ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক বিশ্লেষণ
৫) যুদ্ধ কেন তবু হবে না—আর ভুল কেন মারাত্মক
পূর্ণমাত্রার যুদ্ধ অসম্ভব—কারণ সৌদি প্যাক্টে স্টেক বেড়েছে, পাকিস্তানের অর্থনীতি ভঙ্গুর। কিন্তু মিসক্যালকুলেশন–এর ঝুঁকি সর্বোচ্চ। একক কমান্ড, দ্রুত সিদ্ধান্ত—একটা ভুল মানে আগুনে ঘি।
উপসংহার: গর্জন মানেই শক্তি নয়
পাকিস্তানের “ওয়ার স্টেটমেন্ট” আসলে বেইলআউট রিমাইন্ডার। “আমাদের টাকা দাও, নইলে আমরা সবাইকে ভয় দেখাব।”
এটা রাষ্ট্রনায়কোচিত কূটনীতি নয়—এটা সংবিধান-সিল করা আতঙ্ক।
চূড়ান্ত রায়:
যুদ্ধ নয়—ভয় দেখিয়ে সময় কেনা। কিন্তু ইতিহাস বলে, সময় কেনা যায়; বাস্তবতা কেনা যায় না।
PEOPLE ALSO ASK
- পাকিস্তান কি সত্যিই ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে যেতে পারে?
- Asim Munir কেন এত আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিচ্ছেন?
- সৌদি আরব কি পাকিস্তানকে সামরিকভাবে সমর্থন করবে?
- ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে চীনের ভূমিকা কী হতে পারে?
