Jerusalem Trilateral Summit 2025: ভূমধ্যসাগরে নতুন শক্তির সমীকরণ


Eastern Mediterranean geopolitics map Israel Greece Cyprus Turkey
Power alignment and energy routes in the Eastern Mediterranean

পূর্ব ভূমধ্যসাগরের ভূরাজনীতিতে বড় পরিবর্তনের সূচনা

ডিসেম্বর 2025 সালে জেরুজালেমে অনুষ্ঠিত ইসরায়েল, গ্রিস এবং সাইপ্রাসের ত্রিপাক্ষিক সম্মেলন পূর্ব ভূমধ্যসাগর অঞ্চলের রাজনীতি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এক ঐতিহাসিক পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। এই তিনটি দেশ আগেও বহুবার বৈঠক করেছে, কিন্তু এবারই প্রথম তারা খোলাখুলিভাবে একটি যৌথ প্রতিরক্ষা ও জ্বালানি কৌশল গড়ে তুলেছে। এই জোটের মূল লক্ষ্য হলো অঞ্চলটির গুরুত্বপূর্ণ গ্যাস, বিদ্যুৎ ও সমুদ্রপথের উপর নিয়ন্ত্রণ জোরদার করা এবং একই সঙ্গে তুরস্কের “ব্লু হোমল্যান্ড” নীতির মোকাবিলা করা।

The Jerusalem Trilateral Summit 2025 is a strategic meeting between Israel, Greece, and Cyprus aimed at coordinating defence, energy security, and Eastern Mediterranean geopolitics, particularly in response to Turkey’s maritime doctrine.

এই সম্মেলন শুধু কূটনৈতিক সৌজন্য বিনিময়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি মূলত শক্তির ভারসাম্য নতুনভাবে সাজানোর একটি চেষ্টা। পূর্ব ভূমধ্যসাগর এমন এক অঞ্চল যেখানে শক্তি, ইতিহাস, ধর্ম এবং ভূরাজনীতি একসঙ্গে জড়িয়ে আছে। ফলে এখানে যে কোনো নতুন জোট বা সমঝোতা বড় আকারের প্রভাব ফেলতে পারে।


সহযোগিতা থেকে প্রতিরোধ ব্যবস্থায় রূপান্তর

ইসরায়েল, গ্রিস ও সাইপ্রাসের সম্পর্ক শুরুতে ছিল সীমিত সহযোগিতার মধ্যে। মূলত আস্থা বাড়ানো, তথ্য আদান–প্রদান এবং কিছু যৌথ প্রকল্প নিয়ে তাদের সম্পর্ক এগোচ্ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পরিস্থিতি দ্রুত বদলেছে। তুরস্কের আগ্রাসী নৌনীতি, সমুদ্রসীমা নিয়ে বিতর্ক এবং গ্যাস অনুসন্ধান নিয়ে উত্তেজনা এই তিন দেশকে আরও কাছাকাছি এনেছে।

এই তিন দেশের সম্মিলিত জনসংখ্যা প্রায় দুই কোটি দশ লাখের বেশি। তাদের মোট অর্থনীতি প্রায় সাতশো সত্তর বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। প্রতিরক্ষা খাতে তারা বছরে প্রায় পঞ্চাশ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে। এই সংখ্যা শুধু কাগজে–কলমে নয়, বাস্তব শক্তির প্রতিফলন। সমুদ্র, আকাশ, গোয়েন্দা তথ্য, সাইবার নিরাপত্তা—সব ক্ষেত্রেই তারা একসঙ্গে কাজ করার ক্ষমতা রাখে।

তারা কোনো আনুষ্ঠানিক সামরিক জোট গড়েনি। কারণ এমন জোট ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জটিলতা তৈরি করতে পারে। বরং তারা একটি নমনীয় কিন্তু কার্যকর সমন্বিত কাঠামো তৈরি করেছে, যা প্রয়োজনে দ্রুত কাজ করতে পারে।


দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী: প্রতীকী কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ

এই সম্মেলনের সবচেয়ে আলোচিত সিদ্ধান্ত হলো প্রায় আড়াই হাজার সদস্যের একটি যৌথ দ্রুত প্রতিক্রিয়া বাহিনী গঠনের প্রস্তাব। এতে ইসরায়েল ও গ্রিস থেকে প্রায় এক হাজার করে সেনা এবং সাইপ্রাস থেকে পাঁচশো সেনা থাকবে।

এই বাহিনীর লক্ষ্য কোনো বড় যুদ্ধ নয়। বরং হঠাৎ কোনো সমুদ্র সংকট, আকাশপথে হুমকি বা সীমিত নৌ অভিযানে দ্রুত উপস্থিত হওয়া। এর মূল কাজ হলো বার্তা দেওয়া—যদি কোনো দেশ একতরফাভাবে শক্তি প্রয়োগ করে, তাহলে তাকে শুধু একটি দেশের নয়, তিনটি দেশের সম্মিলিত প্রতিক্রিয়ার মুখে পড়তে হবে।

তুরস্ক এই পরিকল্পনাকে সরাসরি হুমকি হিসেবে দেখছে। তবে এই জোটের নেতারা এটিকে “স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ব্যবস্থা” হিসেবে তুলে ধরছেন। বাস্তবে এটি এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা, যা আগ্রাসনের খরচ বাড়িয়ে দেয়।


তুরস্ককে উদ্দেশ করে স্পষ্ট বার্তা

সম্মেলনের সময় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী প্রকাশ্যে বলেন, যারা পুরোনো সাম্রাজ্য ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন দেখে, তাদের সেই চিন্তা ভুলে যাওয়া উচিত। এই বক্তব্য সরাসরি তুরস্কের রাষ্ট্রপতির বক্তব্য ও নীতির দিকে ইঙ্গিত করে।

এই মন্তব্য কেবল বক্তব্য নয়, এটি একটি রাজনৈতিক সংকেত। এর মাধ্যমে ইসরায়েল, গ্রিস ও সাইপ্রাস জানিয়ে দিয়েছে যে তারা আর আলাদা আলাদা ভাবে কাজ করবে না। যে কোনো বড় সিদ্ধান্তে তারা একসঙ্গে থাকবে।


জ্বালানি রাজনীতি: তুরস্ককে পাশ কাটিয়ে নতুন পথ

এই সম্মেলনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো জ্বালানি নিরাপত্তা। পূর্ব ভূমধ্যসাগরে বিপুল পরিমাণ প্রাকৃতিক গ্যাস মজুত রয়েছে। ইউরোপ রাশিয়ার উপর নির্ভরতা কমাতে চায়, ফলে এই গ্যাস ইউরোপের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই তিন দেশ এমন জ্বালানি পথ তৈরি করতে চায়, যেখানে তুরস্কের অনুমতি বা সহযোগিতা প্রয়োজন হবে না। এর ফলে তুরস্ক তার প্রভাব খাটানোর সুযোগ হারাবে।


গ্রেট সি ইন্টারকানেক্টর প্রকল্প

গ্রেট সি ইন্টারকানেক্টর হলো বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘ সমুদ্রের নিচে বিদ্যুৎ সংযোগ প্রকল্প। এটি ইসরায়েল, সাইপ্রাস এবং গ্রিসকে যুক্ত করবে। এর মোট দৈর্ঘ্য এক হাজার দুইশো কিলোমিটারের বেশি এবং বিদ্যুৎ বহনের ক্ষমতা প্রায় দুই হাজার মেগাওয়াট।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই প্রকল্পে বিপুল অর্থ দিয়েছে। তবে তুরস্কের আপত্তির কারণে দুই হাজার পঁচিশ সালের মার্চ থেকে কয়েক মাস কাজ বন্ধ ছিল। এই সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ধাপে ধাপে কাজ এগোনোর। আগে ইসরায়েল ও সাইপ্রাস অংশটি সম্পন্ন করা হবে, পরে গ্রিস অংশ।

এটি একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত। এতে প্রকল্প চলমান থাকবে, আবার বড় সংঘাতের ঝুঁকিও কমবে।


গ্যাস রপ্তানির নতুন কৌশল

সাইপ্রাসের আফ্রোদিতি গ্যাসক্ষেত্র দীর্ঘদিন ধরে বিতর্কের কেন্দ্র। আগে পরিকল্পনা ছিল সরাসরি ইউরোপে পাইপলাইন দেওয়ার। কিন্তু সেই পথে তুরস্কের দাবি করা জলসীমা পড়ে।

নতুন পরিকল্পনায় গ্যাস প্রথমে মিশরে পাঠানো হবে, সেখানে তরল করে রপ্তানি করা হবে। এই সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক হলেও এর রাজনৈতিক গুরুত্ব আরও বেশি। এতে তুরস্ক কোনো ট্রানজিট ফি বা নিয়ন্ত্রণ পাবে না।


ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ করিডরের সঙ্গে সংযোগ

এই জোটের আরেকটি বড় দিক হলো ভারত–মধ্যপ্রাচ্য–ইউরোপ করিডরের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা। এই করিডরকে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এই করিডরের মাধ্যমে ভারত, মধ্যপ্রাচ্য, ইসরায়েল, সাইপ্রাস ও ইউরোপ যুক্ত হবে বাণিজ্য, জ্বালানি ও যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এতে এই তিন দেশের গুরুত্ব আমেরিকার কাছেও বেড়ে যাবে।


তুরস্কের “ব্লু হোমল্যান্ড” নীতি

তুরস্কের সামুদ্রিক নীতির নাম “ব্লু হোমল্যান্ড”। এই নীতির মাধ্যমে তুরস্ক বিশাল সমুদ্র এলাকা নিজেদের দাবি করে। এটি শুধু অর্থনৈতিক দাবি নয়, বরং একটি আদর্শিক অবস্থান।

তুরস্ক সমুদ্র আইন সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তিতে সই করেনি, কারণ সেই আইন তার দাবিকে সীমিত করে। ফলে তুরস্ক শক্তি প্রদর্শন, নৌ মহড়া ও ড্রিলিং জাহাজ ব্যবহার করে নিজের অবস্থান জোরালো করতে চায়।


ইসরায়েল–তুরস্ক সম্পর্কের ভাঙন

দুই হাজার তেইশ সালের পর থেকে ইসরায়েল ও তুরস্কের সম্পর্ক দ্রুত খারাপ হয়েছে। গাজা যুদ্ধের পর তুরস্ক প্রকাশ্যে ইসরায়েলের সমালোচনা করে। 2025 সালের মধ্যে দুই দেশের বাণিজ্য ও যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়।

এর ফলে ইসরায়েল তুরস্কের উপর নির্ভরতা ছেড়ে ভূমধ্যসাগরীয় মিত্রদের দিকে ঝুঁকেছে। এই সম্মেলন সেই কৌশলেরই অংশ।


সাইপ্রাস: পুরো খেলাটার কেন্দ্রবিন্দু

সাইপ্রাস এই ত্রিপাক্ষিক জোটের কেন্দ্রে রয়েছে। দ্বীপটি বহু বছর ধরে বিভক্ত। উত্তর অংশে তুরস্কের সেনা রয়েছে, দক্ষিণ অংশ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত।

গ্যাস আবিষ্কারের ফলে এই বিভাজন আরও জটিল হয়েছে। তুরস্ক ও উত্তর সাইপ্রাস গ্যাসের ভাগ দাবি করছে। দক্ষিণ সাইপ্রাস আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী নিজেদের অধিকার বজায় রাখতে চায়।


ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতিত্ব: সাইপ্রাসের বড় সুযোগ

দুই হাজার ছাব্বিশ সালের জানুয়ারিতে সাইপ্রাস ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতিত্ব পাবে। এই সময়টি তাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই সময়ে তারা ইউরোপের নীতিনির্ধারণে প্রভাব ফেলতে পারবে, তহবিল অনুমোদন করাতে পারবে এবং ইসরায়েলের জন্য ইউরোপে কূটনৈতিক সুবিধা তৈরি করতে পারবে।


আধুনিক নিরাপত্তা ধারণা

এই সম্মেলনে নিরাপত্তাকে শুধু সেনা বা অস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়নি। সাইবার নিরাপত্তা, বিদ্যুৎ গ্রিড সুরক্ষা, জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলা এবং তথ্য যুদ্ধ—সবকিছুই আলোচনায় এসেছে।

এই ধরনের সমন্বয় তুলনামূলকভাবে কম খরচে বেশি নিরাপত্তা দেয়।


বড় শক্তির ভূমিকা

ইউরোপ এই অঞ্চলের গ্যাসকে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করছে। আমেরিকা এই করিডরকে চীনের বিকল্প হিসেবে দেখছে।

এই কারণে ইসরায়েল, গ্রিস ও সাইপ্রাস এখন শুধু আঞ্চলিক শক্তি নয়, বড় শক্তির কৌশলের অংশ।


সীমাবদ্ধতা ও ঝুঁকি

এই জোটের সীমাবদ্ধতাও আছে। তুরস্কের সেনাশক্তি অনেক বড়। এই দ্রুত বাহিনী মূলত প্রতীকী।

জ্বালানি প্রকল্প বাস্তবায়নে রাজনৈতিক বাধা, অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও আন্তর্জাতিক চাপ আসতে পারে। সাইপ্রাস সমস্যার স্থায়ী সমাধান না হলে উত্তেজনা থেকেই যাবে।

People Also Ask

What is the Jerusalem Trilateral Summit 2025?

The Jerusalem Trilateral Summit 2025 is a strategic meeting between Israel, Greece, and Cyprus focused on defence cooperation, energy security, and Eastern Mediterranean geopolitics.

Why is the Israel-Greece-Cyprus alliance important?

This alliance is important because it creates a coordinated security and energy framework that reduces Turkey’s leverage in the Eastern Mediterranean.

How does the Jerusalem Summit affect Turkey?

The summit challenges Turkey’s Blue Homeland doctrine by strengthening alternative energy routes and coordinated military signalling without forming a formal alliance.

What is the role of energy in the Jerusalem Trilateral Summit?

Energy is central to the summit, especially natural gas extraction, electricity interconnectors, and reducing Europe’s dependence on Russian energy.

What is the Great Sea Interconnector project?

The Great Sea Interconnector is a submarine electricity cable connecting Israel, Cyprus, and Greece, designed to improve energy security and regional integration.

How is Cyprus important in Eastern Mediterranean geopolitics?

Cyprus is strategically located and holds key gas reserves, making it central to EU energy security and regional power competition.


উপসংহার

ডিসেম্বর দুই হাজার পঁচিশের জেরুজালেম সম্মেলন পূর্ব ভূমধ্যসাগরের রাজনীতিতে একটি নতুন অধ্যায় শুরু করেছে। এটি কেবল একটি বৈঠক নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি কৌশলগত অবস্থান পরিবর্তনের ঘোষণা।

এই জোট তুরস্কের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ, আবার ইউরোপ ও আমেরিকার জন্য নতুন সুযোগ। 2026 সাল থেকে এই অঞ্চলে প্রতিযোগিতা আরও স্পষ্ট হবে, তবে আপাতত তা যুদ্ধের বদলে অবকাঠামো ও কৌশলের মাধ্যমে চলবে।

এই ভারসাম্য কতদিন টিকে থাকবে, তা নির্ভর করবে শক্তি, কূটনীতি এবং সময়ের উপর।


Jerusalem Trilateral Summit 2025 clearly signals a long-term shift in Eastern Mediterranean geopolitics…

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4