দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান: অবশেষে ঘোষিত হলো পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক টেট-২০২৩ এর ফলাফল
পরীক্ষার সামগ্রিক পরিসংখ্যান
টেট-২০২৩ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৪শে ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিক স্তরের (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী) শিক্ষকদের যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে।
পরীক্ষার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
মোট নিবন্ধিত পরীক্ষার্থী: ৩,০৯,০৫৪ জন
পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী: ২,৭৩,১৪৭ জন
উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থী: ৬,৭৫৪ জন
প্রথম থেকে দশম স্থান অধিকারী: ৬৪ জন
এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পরীক্ষায় উত্তীর্ণের হার মাত্র ২.৪৭ শতাংশ, যা পরীক্ষার কঠিনতার মাত্রা প্রদর্শন করে।
ফলাফল দেখার প্রক্রিয়া
প্রার্থীরা WBBPE এর অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wbbpe.wb.gov.in থেকে তাদের ফলাফল দেখতে পারবেন। ফলাফল দেখার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য:
ধাপে ধাপে ফলাফল দেখার নিয়ম:
১. অফিসিয়াল ওয়েবসাইট wbbpe.wb.gov.in-এ যান
২. "TEACHER ELIGIBILITY TEST-2023 (TET-2023) (FOR CLASSES I TO V, PRIMARY)" লিংকে ক্লিক করুন
৩. "RESULT OF TET-2023 (CLASSES I TO V, PRIMARY)" অপশন নির্বাচন করুন
৪. রেজিস্ট্রেশন নম্বর এবং জন্ম তারিখ প্রবেশ করান
৫. ফলাফল দেখুন এবং ডাউনলোড করুন
গুরুত্বপূর্ণভাবে, ২৫শে সেপ্টেম্বর ২০২৫ বিকেল ২টা থেকে প্রার্থীদের OMR শিটের ছবি একই লিংকে পাওয়া যাবে।
যোগ্যতার মানদণ্ড ও কাটঅফ
উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তাবলী:
সাধারণ শ্রেণীর প্রার্থীদের জন্য: ন্যূনতম ৬০% নম্বর (১৫০ এর মধ্যে ৯০)
এসসি/এসটি/ওবিসি/পিএইচ শ্রেণীর প্রার্থীদের জন্য: ন্যূনতম ৫৫% নম্বর (১৫০ এর মধ্যে ৮২.৫)
এই কাটঅফ মার্কস জাতীয় শিক্ষক শিক্ষা পরিষদের (NCTE) নির্দেশিকা অনুসারে নির্ধারিত হয়েছে।
টেট সার্টিফিকেটের বৈধতা
টেট সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এসেছে। পূর্বে টেট সার্টিফিকেট সর্বোচ্চ ৭ বছরের জন্য বৈধ ছিল, কিন্তু জাতীয় শিক্ষক শিক্ষা পরিষদের (NCTE) নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, টেট সার্টিফিকেট এখন জীবনব্যাপী বৈধ। এই পরিবর্তন ২০২৩ সালের জুলাই মাসে কার্যকর হয়েছে।
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া
টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা এখন আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবেন। রিপোর্ট অনুযায়ী, ১৩,৪২১টি পদের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি শীঘ্রই প্রকাশিত হবে। অর্থ বিভাগ ইতিমধ্যে এই পদগুলির অনুমোদন দিয়েছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার মূল্যায়ন পদ্ধতি:
মাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বর: ৫ নম্বর
উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার নম্বর: ১০ নম্বর
প্রশিক্ষণ যোগ্যতা: ১৫ নম্বর
টেট স্কোর: ৫ নম্বর
সহ-পাঠক্রমিক কার্যকলাপ: ৫ নম্বর
সাক্ষাৎকার: ৫ নম্বর
শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা: ৫ নম্বর
মোট ৫০ নম্বরের ভিত্তিতে চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রস্তুত করা হবে।
প্রাথমিক শিক্ষকের যোগ্যতার শর্ত
শিক্ষাগত যোগ্যতা: উচ্চ মাধ্যমিক (১০+২) বা সমকক্ষ পরীক্ষায় ন্যূনতম ৫০% নম্বরসহ প্রাথমিক শিক্ষায় ২ বছরের ডিপ্লোমা (D.El.Ed)
অথবা স্নাতক ডিগ্রিসহ প্রাথমিক শিক্ষায় ২ বছরের ডিপ্লোমা
অথবা উচ্চ মাধ্যমিকে ৫০% নম্বরসহ ৪ বছরের ব্যাচেলর অফ এলিমেন্টারি এডুকেশন (B.El.Ed)
বয়সসীমা:
ন্যূনতম: ১৮ বছর
সর্বোচ্চ: ৪০ বছর (১ জানুয়ারি ২০২৪ অনুযায়ী)
রাজ্য সরকারের নিয়ম অনুযায়ী সংরক্ষিত শ্রেণীর জন্য বয়স ছাড়
বেতন ও সুবিধাদি
নিযুক্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের মাসিক বেতন হবে ২৮,৯০০ টাকা এবং অন্যান্য প্রযোজ্য ভাতা পাবেন। এছাড়াও রাজ্য সরকারের সকল সুবিধা ভোগ করতে পারবেন।
পূর্ববর্তী টেট উত্তীর্ণদের সুযোগ
একটি গুরুত্বপূর্ণ সুখবর হলো, যারা পূর্বে (২০২২-২৩) টেট পাস করেছেন এবং এখনও বয়সসীমার মধ্যে রয়েছেন, তারাও আসন্ন নিয়োগ প্রক্রিয়ায় আবেদন করতে পারবেন। টেট সার্টিফিকেট জীবনব্যাপী বৈধ হওয়ায় এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে।
ভবিষ্যতের পরিকল্পনা
আসন্ন কার্যক্রম: ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের অনলাইন আবেদন শুরু হতে পারে
১০,০০০+ পদের জন্য নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের সম্ভাবনা
টেট-২০২৪ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে, পরবর্তী বিজ্ঞপ্তির জন্য অপেক্ষা করতে হবে
গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা
প্রার্থীদের করণীয়:
১. ফলাফল ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করুন
২. OMR শিট যাচাই করুন (২৫ সেপ্টেম্বর থেকে পাওয়া যাবে)
৩. আসন্ন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির জন্য প্রস্তুত থাকুন
৪. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সংগ্রহ করুন
৫. শুধুমাত্র অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে ফলাফল ডাউনলোড করুন
জেলাভিত্তিক পদ বিতরণ
পূর্ববর্তী নিয়োগের ভিত্তিতে জেলাওয়ারী পদ বণ্টন করা হয়। সর্বাধিক পদ রয়েছে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় (১,৩৩৮ + ১৫০), তারপর হাওড়া (৯৭৫ + ১১০), এবং পূর্ব বর্ধমান (৭৮৫ + ৮৮)।
উপসংহার
WBBPE টেট-২০২৩ এর ফলাফল ঘোষণা পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষা ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। যদিও উত্তীর্ণের হার কম, তবে যারা সফল হয়েছেন তাদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দ্বার খুলে গেছে। টেট সার্টিফিকেটের জীবনব্যাপী বৈধতা এবং আসন্ন ব্যাপক নিয়োগ প্রক্রিয়া শিক্ষা প্রার্থীদের মধ্যে নতুন আশার সঞ্চার করেছে।
যারা এবার সফল হতে পারেননি, তাদের জন্য পরামর্শ হলো - হতাশ না হয়ে পুনরায় প্রস্তুতি নিন। টেট একটি যোগ্যতা নির্ধারণী পরীক্ষা, এবং সঠিক প্রস্তুতি ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে সাফল্য অর্জন সম্ভব। পশ্চিমবঙ্গের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় গুণগত পরিবর্তন আনতে এই টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।