এশিয়া কাপ ট্রফি বিতরণ বিতর্ক: ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েও পেল না ট্রফি

দুবাইয়ে গত রবিবার এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়ে রেকর্ড নবম বার এশিয়া কাপ জিতেছে ভারত। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন দল হয়েও ট্রফি পেল না ভারতীয় দল। এই অভূতপূর্ব ঘটনার পেছনে রয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) চেয়ারম্যান ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) প্রধান মহসিন নকভির বিতর্কিত ভূমিকা।

এশিয়া কাপ ২০২৫ ফাইনাল

প্রসঙ্গটি কী?

মূল সমস্যাটি শুরু হয় ট্রফি প্রদান অনুষ্ঠানে। প্রোটোকল অনুযায়ী, এসিসি চেয়ারম্যান মহসিন নকভি বিজয়ী দলের হাতে ট্রফি তুলে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারতীয় দল জানিয়ে দেয় যে তারা নকভির হাত থেকে ট্রফি নিতে রাজি নয়।
বিসিসিআই সেক্রেটারি দেবজিৎ সাইকিয়া পরিষ্কার করে বলেছেন, "আমরা এসিসি চেয়ারম্যানের কাছ থেকে এশিয়া কাপ ট্রফি নিতে অস্বীকার করেছি, যিনি পাকিস্তানের একজন প্রধান নেতা।"

এক ঘণ্টার নাটক

খেলা শেষ রাত সাড়ে দশটায় হলেও প্রেজেন্টেশন সেরেমনি শুরু হয় প্রায় মধ্যরাত্রিতে। পুরো এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে এই নাটক। ভারতীয় খেলোয়াড়রা মাঠে ১৫ গজ দূরত্বে দাঁড়িয়ে থাকে কিন্তু স্টেজে যেতে অস্বীকার করে।
দর্শকরা "ভারত মাতা কি জয়" স্লোগান দিয়ে নকভিকে শব্দ করে বুঝিয়ে দেয়। পাকিস্তানি খেলোয়াড়রাও এক ঘণ্টা ড্রেসিংরুমে থেকে যায়, যা নকভিকে আরও বেশি বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে।

ট্রফি নিয়ে পালিয়ে গেলেন নকভি

যখন স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভারতীয় দল নকভির কাছ থেকে ট্রফি নেবে না, তখন আয়োজকরা গোপনে ট্রফিটি ড্রেসিংরুমে নিয়ে যায়। কিন্তু সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো, নকভি সেরেমনি শেষে ট্রফি ও পদকসহ তার হোটেলে চলে যান।
বিসিসিআই সেক্রেটারি দেবজিৎ সাইকিয়া এই কাজকে "চরম দুর্ভাগ্যজনক ও অক্রীড়াসুলভ" বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, "ভদ্রলোক ট্রফি ও পদক নিয়ে তার হোটেল রুমে চলে গেছেন, এটা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য।"

ভারতীয় দলের অবস্থান

ভারতীয় দল জানিয়েছিল তারা এমিরেটস ক্রিকেট বোর্ডের ভাইস চেয়ারম্যান খালিদ আল জারুনির কাছ থেকে ট্রফি নিতে রাজি। কিন্তু নকভি তাতে রাজি হননি।
ভারতীয় অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব বলেন, "আমি ক্রিকেট খেলা বা দেখা শুরু করার পর থেকে এমন কিছু দেখিনি যে একটি চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি থেকে বঞ্চিত হলো, সেটাও কঠিন পরিশ্রমে অর্জিত ট্রফি।"

রাজনৈতিক মাত্রা

এই বিতর্কের পেছনে রয়েছে ভারত-পাকিস্তানের রাজনৈতিক উত্তেজনা। সাম্প্রতিক পহলগাম সন্ত্রাসী হামলার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছে। দেবজিৎ সাইকিয়া স্পষ্ট করে বলেছেন, "ভারত একটি দেশের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আছে এবং সেই দেশের একজন নেতার কাছ থেকে আমাদের ট্রফি নেওয়ার কথা ছিল।"
নকভি কেবল পিসিবি চেয়ারম্যানই নন, পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও। টুর্নামেন্ট চলাকালে তিনি বেশ কয়েকবার পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় ভারত বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন।

খেলোয়াড়দের প্রতিক্রিয়া

ট্রফি না পেয়েও ভারতীয় খেলোয়াড়রা উৎসব করেছেন। তারা কাল্পনিক ট্রফি তুলে ধরে উদযাপন করেছেন। অর্শদীপ সিংহ ইনস্টাগ্রামে পাকিস্তানি স্পিনার আবরার আহমেদের সেলিব্রেশন নকল করে ভিডিও পোস্ট করেছেন।
হার্দিক পান্ড্যা তার টি-২০ বিশ্বকাপের সেলিব্রেশন পুনরায় করেছেন, কিন্তু একটি নকল ট্রফির ছবি যোগ করেছেন। শুভমন গিল ও অভিষেক শর্মার সাথে ভার্চুয়াল ট্রফির ছবি শেয়ার করেছেন।

বিসিসিআইয়ের প্রতিক্রিয়া

বিসিসিআই ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। দেবজিৎ সাইকিয়া জানিয়েছেন, আগামী নভেম্বরে দুবাইয়ে আইসিসি সম্মেলনে এই বিষয়ে "অত্যন্ত কঠোর ও জোরালো প্রতিবাদ" জানানো হবে।
বিসিসিআই দলকে ২১ কোটি টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, যা খেলোয়াড় ও সাপোর্ট স্টাফদের মধ্যে ভাগ করা হবে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

এশিয়া কাপের ৪১ বছরের ইতিহাসে এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি ছাড়াই উদযাপন করতে বাধ্য হয়েছে। এটি ছিল প্রথমবার ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে এশিয়া কাপের ফাইনাল, কিন্তু তা রাজনৈতিক বিতর্কে ম্লান হয়ে গেছে।

পরিণতি

এই ঘটনার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব হতে পারে। ভারত ইতিমধ্যে জানিয়েছে যে তারা নকভিকে এসিসি থেকে সরানোর জন্য চাপ দেবে। একইসাথে এই ঘটনা ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট সম্পর্কে আরও জটিলতা সৃষ্টি করবে।
পুরো টুর্নামেন্টেই দুই দেশের মধ্যে তিক্ততা ছিল। হ্যান্ডশেক এড়ানো, প্রি-টস ফটোশুট বর্জন - সবকিছু মিলিয়ে এটি এশিয়া কাপের ইতিহাসে সবচেয়ে বিতর্কিত আসর হয়ে থাকবে।
ভারত জিতেছে ক্রিকেটে, কিন্তু রাজনীতির কাছে হেরেছে উদযাপনের মুহূর্ত। চ্যাম্পিয়ন হয়েও ট্রফি ছাড়া ফিরতে হলো - এ এক অভূতপূর্ব অধ্যায় ক্রিকেট ইতিহাসে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4