আইফোন ১৭: এবার পুরোপুরি ভারতীয়! ট্রাম্পের ট্যারিফ-ভীতি, অ্যাপলের চালাকি আর ভারতের সাফল্য

ভূমিকা

অ্যাপল যখন নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তখন তা কেবল প্রযুক্তি জগতের খবর নয়, বরং বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ভূরাজনীতিরও বড় ইঙ্গিত দেয়। আর এবার সেই ইঙ্গিত এসেছে iPhone 17 নিয়ে। প্রথমবারের মতো পুরো লাইনআপ—স্ট্যান্ডার্ড মডেল থেকে শুরু করে Pro পর্যন্ত—সম্পূর্ণভাবে ভারতে তৈরি হবে। শুধু কিছু ইউনিট নয়, বরং গোটা সিরিজই!

iPhone 17 manufacturing in India by Foxconn and Tata Group

এটা ভারতের জন্য যেমন গর্বের বিষয়, তেমনই মার্কিন রাজনীতির জন্যও একটা ছোটখাটো ধাক্কা। বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য, যিনি বারবার চীন-আমেরিকা বাণিজ্যযুদ্ধের হুমকি দিয়েছেন, ট্যারিফ বসিয়েছেন আর বারবার বলেছেন “আমেরিকার ম্যানুফ্যাকচারিং ফিরিয়ে আনতে হবে।” অথচ বাস্তবে কী হলো? অ্যাপল চীনের ওপর নির্ভরতা কমাতে গিয়ে সরাসরি ভারতের কোলেই আশ্রয় নিলো। আর ট্রাম্প সাহেব হয়তো রাগে এখন টুইটার (আচ্ছা, এক্স না?) ঝাঁকাচ্ছেন—“Why not America?!”


ভারতের ফ্যাক্টরি শক্তি: হোসুর থেকে বেঙ্গালুরু

অ্যাপলের এই সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী নয়, বাস্তবভিত্তিকও।

  • টাটা গ্রুপ: তামিলনাড়ুর হোসুরে টাটার বিশাল ফ্যাক্টরি এখন অ্যাপলের অন্যতম বড় ঘাঁটি।
  • ফক্সকন: বেঙ্গালুরু এয়ারপোর্টের কাছে ফক্সকনের ম্যানুফ্যাকচারিং হাব এখন সরগরম। এখানেই প্রথম দিকের iPhone 17 উৎপাদন শুরু হয়েছে।

মোট পাঁচটি কারখানায় মিলিয়ে মেড-ইন-ইন্ডিয়া আইফোন এখন বাস্তব। ভারতের শ্রমশক্তি, অবকাঠামো উন্নয়ন, এবং সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগ এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে।


কেন চীন থেকে দূরে সরে এল অ্যাপল?

উত্তরটা সোজা—ঝামেলা কমাতে

  1. চীন-আমেরিকা ট্রেড ওয়ার: ট্রাম্পের সময় থেকেই শুরু হয়েছিল শুল্ক যুদ্ধ। ট্রাম্প বলেছিলেন, “China is ripping us off”—অর্থাৎ চীন আমেরিকার টাকা খেয়ে নিচ্ছে। এরপর তিনি চীনা পণ্যের ওপর ট্যারিফ চাপালেন। অ্যাপল যদি সবসময় চীনের ওপর নির্ভর করে থাকে, তবে এই ট্যারিফ সরাসরি iPhone-এর দাম বাড়িয়ে দিত।

  2. জিওপলিটিকাল ঝুঁকি: তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনা, দক্ষিণ চীন সাগর ইস্যু—সব মিলিয়ে চীনে ব্যবসা রাখা মানেই এক প্রকার মাথাব্যথা।

  3. ডাইভারসিফিকেশন: অ্যাপল বুঝে গেছে—“সব ডিম এক ঝুড়িতে রাখলে ভাঙবেই।” তাই তারা ভারতকে বেছে নিয়েছে বিকল্প উৎপাদন কেন্দ্র হিসেবে।


ট্রাম্প বনাম অ্যাপল: কে কাকে হারাল?

এখানেই আসল মজা। 😁

ট্রাম্প যখন ট্যারিফ বাড়ালেন, তখন ভেবেছিলেন অ্যাপল হয়তো আমেরিকায় কারখানা খুলবে। তিনি বারবার বলেছিলেন—
“Tim Cook should build plants in Texas, not in China.”

কিন্তু বাস্তবতা হলো—অ্যাপল টেক্সাসে কিছু ছোটখাটো এসেম্বলি করলেও আসল গেমটা খেললো ভারতে।

তাহলে হলো কী?

  • ট্রাম্পের ট্যারিফ এড়িয়ে গিয়ে অ্যাপল চীন থেকে উৎপাদন সরিয়ে নিলো।
  • কিন্তু আমেরিকার বদলে পছন্দ করলো ভারতকে।
  • আর আমেরিকায় ঢুকছে এখন ভারতীয় ফ্যাক্টরিতে তৈরি iPhone 17

অর্থাৎ, ট্রাম্প সাহেব যেটা চেয়েছিলেন—“আমেরিকায় তৈরি iPhone”—সেটা হয়নি। বরং হয়েছে—“ইন্ডিয়ায় তৈরি iPhone, আমেরিকায় বিক্রি।”

ট্রাম্পের দৃষ্টিতে এ যেন বিরাট ব্যাকফায়ার


রপ্তানির খেলায় ভারত এগিয়ে

এই সিদ্ধান্ত শুধু ম্যানুফ্যাকচারিং-এর গর্ব নয়, রপ্তানির ক্ষেত্রেও বড় জাম্প।

  • এপ্রিল থেকে জুলাই মাত্র চার মাসে ভারত রপ্তানি করেছে ৭.৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের iPhone
  • গত পুরো অর্থবছরের মোট রপ্তানির অর্ধেক এরই মধ্যে ছুঁয়ে ফেলেছে।
  • যুক্তরাষ্ট্র এখন ভারতের তৈরি iPhone-এর সবচেয়ে বড় ক্রেতা। জুন মাসে একাই ৭৮% ইউনিট গেছে আমেরিকায়।

ভাবুন তো, আমেরিকার লোকেরা নতুন iPhone কিনছে, আর ফোনের বক্সে লেখা—“Made in India.”
ট্রাম্প হয়তো এখন আয়নায় তাকিয়ে বলছেন—“This was not the deal!”


ভারতের জিওপলিটিকাল উইন

অ্যাপলের এই পদক্ষেপ ভারতের জন্য শুধু ব্যবসায়িক সাফল্য নয়, ভূরাজনৈতিক এক বিজয়ও।

  1. চীনকে চ্যালেঞ্জ: এতদিন ইলেকট্রনিকস ম্যানুফ্যাকচারিং-এর একচেটিয়া দখল ছিল চীনের। ভারত এখন তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী।
  2. আমেরিকার কাছে ভারত আরও গুরুত্বপূর্ণ: যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে iPhone পৌঁছাতে গেলে এখন ভারতকেই ভরসা করতে হবে।
  3. রোজগারের সুযোগ: লক্ষ লক্ষ ভারতীয় যুবক-যুবতীর চাকরি হচ্ছে এই ফ্যাক্টরিগুলোতে।

ট্রাম্পকে ট্রল না করে উপায় নেই

অবশ্যই সিরিয়াস বিষয় আছে—কিন্তু কিছুটা ট্রল না করলে মজাটাই থাকে না।

  • ট্রাম্প বলেছিলেন: “We will make iPhones in America.”
  • বাস্তব: “We are buying Indian iPhones in America.” 😆

তিনি বারবার আমেরিকান ভোটারদের বুঝিয়েছিলেন—তার ট্যারিফ নীতি কোম্পানিগুলোকে আমেরিকায় টেনে আনবে।
কিন্তু অ্যাপল তাদের একদম উল্টো খেলা দেখিয়ে দিলো।

আজ যদি ট্রাম্প নতুন কোনো র‍্যালিতে বলেন—
“We stopped China from stealing our jobs,”
তাহলে পেছন থেকে কেউ হয়তো চেঁচাবে—
“But India got them, sir!”


উপসংহার

অ্যাপলের এই পদক্ষেপ নিঃসন্দেহে ভারতের জন্য এক ঐতিহাসিক মোড়। iPhone 17 যখন সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে আসবে, তখন ক্রেতারা প্রথমবার বুঝবেন—এই ফোন চীনের নয়, ভারতের।

ভারতের রপ্তানি বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান, আর বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ—সব মিলিয়ে এটা এক বিশাল মাইলস্টোন।

আর ট্রাম্পের জন্য?
এটা সেই মুহূর্ত, যখন তিনি বুঝলেন—ট্যারিফের রাজনীতি সবসময় মার্কেটে কাজে দেয় না।
বরং অ্যাপল দেখিয়ে দিলো, রাজনীতির চাপে কেবল আমেরিকায় নয়, ভারতেও স্বপ্নের কারখানা তৈরি হতে পারে।

শেষে একটাই কথা—
“Mr. Trump, thank you for the tariff. Without you, India might not have become Apple’s iPhone hub so fast!” 😉


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4