ভূমিকা
প্রতিবছর ২৯ জুলাই পালিত হয় আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস — একটি বিশেষ দিন যা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, বিশ্বের অন্যতম মহিমান্বিত বন্যপ্রাণী, বাঘ, আজ অস্তিত্ব সংকটে। বাঘ শুধু জঙ্গলের রাজাই নয়, সে একটি বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যের প্রতীক। এই দিবসটি একটি বৈশ্বিক আন্দোলনের দিন, যেখানে সরকার, এনজিও, বনবাসী জনগোষ্ঠী এবং সচেতন নাগরিক একসাথে বাঘ সংরক্ষণের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ হন।

আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসের ইতিহাস
আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসের সূচনা হয় ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত ‘টাইগার সামিট’-এ। এই ঐতিহাসিক সম্মেলনে বাঘ অধ্যুষিত ১৩টি দেশের প্রতিনিধিরা মিলিত হন। তখন বিশ্বে বাঘের সংখ্যা নেমে এসেছিল মাত্র ৩,২০০-তে, যেখানে ২০ শতকের শুরুতে এ সংখ্যা ছিল প্রায় ১ লাখ। এই পতনের মূল কারণ ছিল বনভূমি ধ্বংস, শিকার এবং অবৈধ বন্যপ্রাণী বাণিজ্য। সম্মেলনে নেওয়া হয় এক সাহসী পদক্ষেপ — Tx2 লক্ষ্য, অর্থাৎ ২০২২ সালের মধ্যে বন্য বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করা।
এই উদ্যোগকে জনসচেতনতায় রূপ দিতে এবং সংরক্ষণ চেষ্টাগুলিকে ত্বরান্বিত করতে চালু করা হয় International Tiger Day বা আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস।
২০২৫ সালের আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস ও এর প্রাসঙ্গিকতা
এই বছর, মঙ্গলবার, ২৯ জুলাই ২০২৫-এ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস। এই দিবসটি কেবল একটি উদযাপন নয়, এটি বাঘ সংরক্ষণের দিকে সমাজের মনোযোগ ফেরানোর এক গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ।
২০২৫ সালের থিম হচ্ছে:
🟠 “Securing the future of Tigers with Indigenous Peoples and Local Communities at the heart.”
অর্থাৎ, আদিবাসী ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে কেন্দ্র করেই বাঘের ভবিষ্যৎ সুরক্ষা নিশ্চিত করা।
এই থিম অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ বাঘের আবাসভূমি হিসেবে যেসব বনাঞ্চল বিদ্যমান, সেখানে প্রাচীনকাল থেকে বাস করে আসছেন বহু আদিবাসী জনগোষ্ঠী। তাদের জীবন, সংস্কৃতি ও প্রাকৃতিক জ্ঞানের সঙ্গে এই বন ও বন্যপ্রাণীর সম্পর্ক নিবিড়। তাই তাঁদের অংশগ্রহণ ও অধিকারকে সম্মান জানিয়ে সংরক্ষণই হতে পারে দীর্ঘস্থায়ী সমাধান।
বাঘ সংরক্ষণের তাৎপর্য
১. বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষা:
বাঘ একটি keystone species, অর্থাৎ তার উপস্থিতি বনজ বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্য নির্দেশ করে। যদি বাঘ টিকে থাকে, তাহলে বোঝা যায় সংশ্লিষ্ট জঙ্গল এবং সেখানকার প্রাণবৈচিত্র্যও নিরাপদ।
২. পরিবেশগত সেবা:
বাঘ সংরক্ষণ মানে বন রক্ষা করা। আর বন মানেই — পরিচ্ছন্ন বাতাস, পানির উৎস, এবং জলবায়ু নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা।
৩. মানব-প্রকৃতি সহাবস্থান:
যেসব সম্প্রদায় বাঘ অধ্যুষিত অঞ্চলে বাস করে, তাদের জন্যও সংরক্ষণ উদ্যোগ সমৃদ্ধ জীবিকার সুযোগ তৈরি করতে পারে — যেমন ইকো-ট্যুরিজম, বন-ভিত্তিক জীবিকা ইত্যাদি।
ভারতের সাফল্য ও ভূমিকা
আজকের দিনে বিশেষভাবে গর্ব করার মতো বিষয় — ভারতেই রয়েছে বিশ্বের প্রায় ৭০% বন্য বাঘ। ২০২২ সালের তথ্যানুসারে, ভারতে বাঘের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩,৬৮২-তে। এটি সরকারের “Project Tiger,” বনরক্ষীদের নিষ্ঠা, এবং সমাজের ক্রমবর্ধমান সচেতনতার ফল।
তবে এটিই শেষ কথা নয়। প্রতিনিয়ত হুমকির মুখে থাকা এই প্রাণীকে রক্ষা করতে হলে এখনো অনেক পথ চলা বাকি।
উপসংহার
আন্তর্জাতিক বাঘ দিবস শুধুই একটি প্রতীকী দিবস নয়, এটি একটি জীবনদর্শন — যেখানে মানুষ ও প্রকৃতি সহাবস্থানে বিশ্বাস করে, যেখানে উন্নয়নের পাশে স্থান পায় সংরক্ষণ।
আজকের দিনে আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ব —
🌿 বাঘ ও তাদের বাসস্থানের গুরুত্ব বোঝা
🌿 অবৈধ শিকার ও বন্যপ্রাণী পাচারের বিরুদ্ধে কথা বলা
🌿 স্থানীয় ও আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমিকা স্বীকৃতি দেয়া
🌿 এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি ভারসাম্যপূর্ণ পরিবেশ রেখে যাওয়া।
এই আন্তর্জাতিক বাঘ দিবসে, আসুন আমরা বাঘের গর্জন রক্ষা করার অঙ্গীকার গ্রহণ করি — কারণ বাঘ বাঁচলে, বন বাঁচবে; বন বাঁচলে, আমরা বাঁচব।
🔗 এই লেখাটি ভালো লাগলে শেয়ার করুন এবং প্রকৃতি রক্ষায় সক্রিয় হোন।