🔴 ভূমিকা
২০২৫ সালের জুলাই মাসে ভারতের সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশন এক চরম রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো কাশ্মীরের পাহেলগাম অঞ্চলের বৈসরান উপত্যকায় সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলা এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ভারতের সেনাবাহিনী পরিচালিত "অপারেশন সিন্দুর"। এই অপারেশনকে ঘিরে জাতীয় নিরাপত্তা, কূটনীতি, প্রযুক্তিগত অগ্রগতি এবং রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা—সবই এখন বিতর্কের কেন্দ্রে। চলুন দেখে নেওয়া যাক এই পুরো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ।
📌 পাহেলগাম হামলার পটভূমি
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, জম্মু ও কাশ্মীরের অনিন্দ্যসুন্দর বৈসরান উপত্যকা রক্তাক্ত হয়ে ওঠে এক বর্বর সন্ত্রাসী হামলায়। এই হামলায় প্রাণ হারান অন্তত 26 জন নিরীহ নাগরিক। গোটা দেশ জুড়ে নেমে আসে তীব্র ক্ষোভ ও শোক। সাধারণ নাগরিক থেকে রাজনৈতিক নেতা, সকলেই সরকারের কাছে প্রতিক্রিয়া দাবি করতে থাকেন।
⚔️ অপারেশন সিন্দুর: ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পরে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নেয় এক জবাবদিহিমূলক ও কৌশলগত সামরিক অভিযানের—এর নাম রাখা হয় "অপারেশন সিন্দুর"। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে স্পষ্ট জানান যে, এই অভিযানে ১০০-রও বেশি সন্ত্রাসবাদী, প্রশিক্ষক এবং হ্যান্ডলারকে নির্মূল করা হয়েছে, যাদের অধিকাংশই জইশ-ই-মহম্মদ, লস্কর-ই-তইবা এবং হিজবুল মুজাহিদিন-এর সদস্য।
🛰️ প্রযুক্তিগত অগ্রগতি: দেশীয় প্রযুক্তির জয়
অপারেশন সিন্দুর ছিল কেবল প্রতিশোধ নয়, বরং ভারতের প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির এক প্রদর্শনী। এই অভিযানে ব্যবহার করা হয় উন্নত ড্রোন প্রযুক্তি, লেয়ার্ড এয়ার ডিফেন্স, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার, এবং চীনা প্রযুক্তির বিরুদ্ধে জ্যামিং সিস্টেম। পাকিস্তানের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিমান ঘাঁটি এবং সন্ত্রাসী ঘাঁটি গুলিকে অত্যন্ত নির্ভুলতার সঙ্গে টার্গেট করা হয়।
🕊️ অপারেশনের "বিরতি" ও বিতর্ক
কিছু বিরোধী নেতা দাবি করেন, এই অপারেশন হঠাৎ থেমে যায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের ফলে। তবে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং সংসদে বলেন, “অপারেশন সিন্দুর থেমে যায় কারণ তার রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়েছে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাইরের কোনো চাপের জন্য নয়, ভারতের সিদ্ধান্ত ভারতেরই।”
🗣️ বিরোধী দল ও গৌরব গগৈর ভূমিকা
কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভায় দলের উপনেতা গৌরব গগৈ এই পুরো বিতর্কের এক কেন্দ্রীয় মুখ হয়ে ওঠেন। তিনি সরকারকে কটাক্ষ করে প্রশ্ন তোলেন:
- পাহেলগামের মতো সেন্সিটিভ জায়গায় কীভাবে এতজন সন্ত্রাসবাদী ঢুকে পড়ল?
- সন্ত্রাসীদের নির্মূল করলেই কি সন্ত্রাসের শেষ?
- হঠাৎ করেই কেন অপারেশন থামানো হল?
তার এই বক্তব্যের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাকে একাধিকবার আক্রমণ করেন এবং বলেন গগৈ “পাকিস্তানের ভাষায় কথা বলছেন”। এমনকি অভিযোগ ওঠে গগৈ পাকিস্তান সফর করেছেন একাধিকবার। গগৈ পাল্টা বলেন, “আমি পাকিস্তানে গিয়েছিলাম প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘বিরিয়ানি ডিপ্লোমেসি’র আগেই।”
🧨 অপারেশন মহাদেব: সিন্দুরের অনুষঙ্গ
অমিত শাহ সংসদে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেন—অপারেশন মহাদেব নামে এক গোপন অভিযানে পাহেলগামের হামলাকারীদের খুঁজে বের করে হত্যা করা হয়েছে। এটি ছিল অপারেশন সিন্দুরের একটি এক্সটেনশন, যার মাধ্যমে সরাসরি সন্ত্রাসীদের টার্গেট করা হয়।
🔁 রাজ্য রাজনীতি ও প্রতিক্রিয়া
অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা গগৈকে “অসমের কলঙ্ক” বলে অভিহিত করেন এবং অভিযোগ তোলেন, গগৈ পাকিস্তানের স্বার্থে কাজ করছেন।
অন্যদিকে, মহারাষ্ট্র থেকে নবনির্বাচিত কংগ্রেস সাংসদ প্রণীতি শিন্ডে এই আলোচনা ঘিরে বেশ সক্রিয়। তিনি কেবল একজন রাজনীতিক নন, বরং জয়জুই ফাউন্ডেশন নামে একটি NGO-র মাধ্যমে সমাজসেবা ও নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রেও পরিচিত।
🏛️ লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন
২০২৫ সালের ২২ জুলাই শুরু হয় ভারতের লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশন। এই অধিবেশনের মূল আকর্ষণ ছিল:
- পাহেলগাম সন্ত্রাসী হামলা নিয়ে আলোচনা
- অপারেশন সিন্দুরের সাফল্য ও পরিণতি
- বিরোধী দল ও সরকারের পাল্টা-পাল্টি বিতর্ক
সংসদ টিভি এবং দেশের বড় বড় সংবাদমাধ্যমগুলি এই অধিবেশন সরাসরি সম্প্রচার করছে, যাতে জনসাধারণ সংসদীয় স্বচ্ছতা দেখতে পারে।
🇮🇳 প্রধানমন্ত্রীর ভূমিকা
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ঘটনায় সরাসরি বক্তব্য রেখেছেন। তিনি বলেন:
"অপারেশন সিন্দুর গোটা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে, ভারতের সার্বভৌমত্বে হস্তক্ষেপ করলে তার জবাব কীভাবে দেওয়া হয়। শত্রুদের জন্য আর কোনো নিরাপদ আশ্রয় নেই।"
মোদী সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফর করেছেন, যেখানে তিনি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়ন ও অপরাধীদের প্রত্যর্পণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি মালদ্বীপের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনেও অংশ নিয়েছেন এবং তামিলনাড়ুতে উন্নয়ন প্রকল্পের সূচনা করেছেন।
🔍 উপসংহার: জাতীয় নিরাপত্তা বনাম রাজনৈতিক অবস্থান
এই ঘটনা গোটা জাতিকে একবারে নাড়া দিয়েছে। অপারেশন সিন্দুর যেমন ভারতের প্রতিরক্ষা ক্ষমতার প্রমাণ, তেমনই লোকসভায় বিরোধীদের প্রশ্ন জনগণের উদ্বেগেরই প্রতিফলন। বিরোধীদের প্রশ্ন তোলা ভুল নয়, তবে তার পদ্ধতি ও উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। সরকার পক্ষও আত্মতুষ্টিতে না ভুগে ভবিষ্যতের হুমকিগুলি মোকাবিলায় প্রস্তুত কিনা, তা ভাবনার বিষয়।
ভারতবর্ষের জাতীয় নিরাপত্তা এখন শুধু সীমান্ত রক্ষা নয়, বরং রাজনৈতিক ঐকমত্য, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক কূটনীতি—সবকিছুর সমন্বয়ে এক নতুন স্তরে উন্নীত হয়েছে।
🔖 #অপারেশন_সিন্দুর #ভারতের_সামরিক_ক্ষমতা #পাহেলগাম_হামলা #গৌরব_গগৈ #রাজনাথ_সিং #অমিত_শাহ #প্রণীতি_শিন্ডে #লোকসভা২০২৫ #জাতীয়_নিরাপত্তা #নরেন্দ্র_মোদী