রাজ রাজেন্দ্র চোল, যার নৌশক্তি বঙ্গোপসাগরকে নিজেদের হ্রদ বলে মনে করতো

প্রায় 1000 বছর আগে, দক্ষিণ ভারতের এক রাজ্যে একজন মহান রাজার রাজ্যাভিষেক হয়েছিল, যার নাম ছিল রাজেন্দ্র চোল প্রথম। তিনি প্রাচীন ভারতের সবচেয়ে শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। যার সামরিক বন্দর ছিল নাগাপট্টিনাম। ওনার গড়া নৌবাহিনী ভারতের ইতিহাসে এতটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে 26 নভেম্বর 2017 সালে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার মন কি বাত প্রোগ্রামে চোল রাজাদের নৌবাহিনীর কথাও উল্লেখ করেছিলেন। 



রাজা রাজেন্দ্র চোলের পিতা প্রথম চোল সাম্রাজ্যের একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। তাঁর পরে, রাজেন্দ্র চোল প্রথম 985 খ্রিস্টাব্দে রাজ্যভার গ্রহণ করেন। ওনার ধৈর্য ছিল অপরিসীম। দীর্ঘ ৮ বছর অপেক্ষা করেন তিনি তার সামরিক শক্তি বৃদ্ধি পাওয়ার জন্য। এই ৮ বছরে তিনি তার সামরিক শক্তিকে অত্যন্ত শক্তিশালী করে তোলেন। বিশেষ করে রাজেন্দ্র চোল নৌবাহিনীর প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিয়েছিলেন। তিনি একটি সেনাবাহিনী প্রস্তুত করেছিলেন যা জল এবং স্থল উভয় ক্ষেত্রেই তাদের শক্তি প্রদর্শন করতে পারে। শত্রুদের অন্তরে তাঁর সেনাবাহিনীর জন্য বিশেষ ভয় ছিল।

রাজা রাজেন্দ্র চোলের আজকের মতো পেশাদার সেনাবাহিনী ছিল। এর চারটি প্রধান অংশ ছিল - প্রথম অশ্বারোহী বাহিনী, দ্বিতীয় হাতি বাহিনী, তৃতীয় পদাতিক বাহিনী, যা ধনুক এবং তলোয়ার সহ সৈন্য নিয়ে গঠিত। এটি ছিল চোল বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দল। চোল সৈন্যরা তলোয়ার, ধনুক, ঢাল এবং বর্শা ব্যবহার করত।এছাড়াও চোল রাজার সাথে একটি শক্তিশালী নৌবাহিনীও উপস্থিত ছিল। এই নৌবাহিনীর দুটি বড় শক্তি ছিল, এর শক্তিশালী জাহাজ এবং দ্বিতীয় সামরিক প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হাতি।

হাতি ছিল চোল বাহিনীর শক্তি। তিনি এই হাতি বাহিনীকে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। ঐতিহাসিকরা বিশ্বাস করেন যে চোল রাজা বিশাল জাহাজে হাতিদের পুরো বাহিনী নিয়ে গিয়ে শ্রীলঙ্কা আক্রমণ করেছিলেন। এই নৌবাহিনী অনেক ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ন যুদ্ধ জিতেছে। 

রাজেন্দ্র চোল ছিলেন এদেশের এমন এক মহান রাজা, যিনি বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়েছিলেন। তার যুদ্ধ-কৌশল ছিল আশ্চর্যজনক। তিনি প্রায় সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন। চোল নৌ বাহিনী জাভা, সুমাত্রা, ইন্দোনেশিয়া, বার্মা, ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, বোনিও এবং সিঙ্গাপুরে পৌঁছেছিল। 993 খ্রিস্টাব্দে রাজা প্রথম রাজেন্দ্র চোল শ্রীলঙ্কা আক্রমণ করে দখল করেন।



994 খ্রিস্টাব্দে, কান্দালুরে চেরা রাজবংশের রাজা ভাস্কর রবিবর্মনের সাথে রাজা রাজেন্দ্রের যুদ্ধ হয়েছিল। এই যুদ্ধে রাজা রাজা ভাস্কর রবিবর্মনের যুদ্ধ নৌবহর ধ্বংস করেন। চেরা রাজাকে পরাজিত করার পর তিনি সেখানে ছাউনি নির্মাণ করেন।



চোলরা নৌবাহিনীতে অফিসার, সৈনিক, নাবিক ইত্যাদি পদ ছিল ঠিক যেমন আজকের দিনে দেখা যায়।

চক্রবর্তী- ইনি ছিলেন নৌবাহিনীর সর্বোচ্চ সেনাপতি। এই পদটি ছিল সম্রাটের জন্য।

জলধিপতি - ইনি ছিলেন নৌবাহিনীর সর্বাধিনায়ক।

দেওয়ার - ফ্লিট কমান্ডার।

গণপতি - নৌবহর স্কোয়াড্রনের অধিনায়ক ছিলেন।

মন্ডলধিপতি - অর্থাৎ গ্রুপ কমান্ডার।

কালাপতি- জাহাজের সেনাপতি ছিলেন।

কাপু - তিনি জাহাজের অস্ত্রের দায়িত্বে ছিলেন।

সিওয়াই - নাবিকদের ইনচার্জ।

ইটিমার - মেরিন অর্থাৎ যুদ্ধজাহাজে সৈন্যদের দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত।

চোল বাহিনীর অনেক ধরনের জাহাজ ছিল। যেমন-

ধরণী - এই জাহাজটি বর্তমান সময়ের ডেস্ট্রয়ার জাহাজের সমতুল্য ছিল, যা সমুদ্রে বড় বড় যুদ্ধে ব্যবহৃত হত।

লুলা - এটি ছিল আধুনিক করভেটের সমতুল্য। যেটি ছোট ছোট যুদ্ধ এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হত।

বজ্র - এটি আজকের দিনের ফ্রিগেটের মতো।

আজ থেকে প্রায় 1000 বছর আগে, নারীরাও চোল সাম্রাজ্যের নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল। নারীরা শুধু সেনাবাহিনীতেই জড়িত ছিল না, যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিল। এই শক্তিশালী নৌবাহিনীর জোরে চোল রাজারা বঙ্গোপসাগরে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। তারা এতটাই শক্তিশালী ছিলেন যে এটি একটি প্রবাদে পরিণত হয়েছিল যে চোল রাজাদের কাছে বঙ্গোপসাগর ছিল তাদের হ্রদের মতো।

চোল রাজাদের এই মহান কাহিনী আজও ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিপিবদ্ধ আছে। কিন্তু বামপন্থী ঐতিহাসিকরা তাদের পাঠ্য-পুস্তকের ইতিহাস লেখার সময় ভুলে যাওয়ার সর্বাত্মক চেষ্টা করেছিলেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4