বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল যা ডেভিলস ট্রায়াঙ্গেল নামেও পরিচিত,এই গ্রহের সবচেয়ে রহস্যময় স্থানগুলির মধ্যে একটি। বারমুডা, ফ্লোরিডা এবং পুয়ের্তো রিকোর মধ্যে আটলান্টিক মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এই অঞ্চলটি বেশ কিছু অমীমাংসিত রহস্যের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে।
সমুদ্রের 4,40,000 মাইল এলাকা জুড়ে থাকা বারমুডা ত্রিভুজ হলো একটি ব্যস্ত শিপিং রুটের অংশ যেখানে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি জাহাজ আমেরিকা, ইউরোপ এবং ক্যারিবিয়ান এর মধ্যে যাতায়াত করে।
বহু শতাব্দী ধরে এই অঞ্চলে অনেক জাহাজ ও বিমান রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়েছে বলে জানা যায়।এছাড়াও, এই শয়তানের ত্রিভুজকে গত কয়েক দশকে হাজার হাজার লোকের অন্তর্ধানের জন্য দায়ী করা হয়েছে। একটি তথ্য অনুযায়ী, প্রায় 4টি বিমান এবং 20টি সী-প্লেন রহস্যজনকভাবে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল থেকে প্রতি বছর অদৃশ্য হয়ে যায়, যেগুলোর পরবর্তীতে আর কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায় নি। আবার অনেক জাহাজ যাত্রী এখান দিয়ে যাওয়ার সময় টাইম ট্রাভেল এর ব্যাপারটাও অনুভব করেছেন যা তারা পরবর্তীকালে বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন। এখন পর্যন্ত বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল কতগুলো মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে,না তারা আজকে কোথায় কেউই টিকভাবে বলতে পারে না।
ভিনসেন্ট গ্যাডিস 1964 সালে "বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল" শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন আর্গোসি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত তার একটি নিবন্ধে।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কিত এমন অনেক রহস্য রয়েছে, যা আজ পর্যন্ত উদঘাটিত হয়নি। আসুন বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যের সম্ভাব্য কারণগুলো সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি .....
এর কারণ হতে পারে উপসাগরীয় প্রবাহ – মেক্সিকো উপসাগর থেকে ফ্লোরিডা প্রণালী হয়ে উত্তর আটলান্টিক পর্যন্ত প্রসারিত উপসাগরীয় স্রোতের প্রবাহ এত দ্রুত যে এটি সমস্ত ধ্বংসাবশেষ এবং আবর্জনা তার সাথে বহন করে। এটা হতে পারে এই উপসাগরীয় প্রবাহ এখানে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায় এবং এই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে জাহাজ ইত্যাদিধ্বংসাবশেষও তার সঙ্গে মিশে যায়।
সমুদ্রের তলদেশে প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাসও দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে - বলা হয়ে থাকে যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের নিচে বিপুল পরিমাণ 'মিথেন হাইড্রেট' জমা আছে এবং যখন তা বিস্ফোরিত হয়, তখন তা সবাইকে গ্রাস করে। এখান দিয়ে চলাচলকারী জাহাজ উড়োজাহাজ ইত্যাদি এই বিস্ফোরণের শিকার হতে পারে।
ইউএফও এবং এলিয়েনও এর কারণ হতে পারে – বারমুডা ট্রায়াঙ্গলকে এলিয়েনদের বাড়িও বলা হয়, তাই এখানে ঘটতে থাকা দুর্ঘটনার পেছনে এলিয়েনদের হাত থাকতে পারে বলে অনেকে মনে করেন। অনেকের মনে এই স্থানই এলিয়েনদের দুনিয়ার সাথে আমাদের দুনিয়ার সংযোগস্থল।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কম্পাস কাজ করে না – বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে কম্পাস কাজ করা বন্ধ করে দেয়, এখান দিয়ে যাওয়া জাহাজগুলো সঠিক দিকনির্দেশ না পাওয়ার কারণে এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। এটাও বলা হয় যে এখানে এলিয়েনদের কারণে কম্পাস কাজ করে না। বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা বলে কম্পাস সমস্যা সৃষ্টির জন্য ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক হস্তক্ষেপ দায়ী। এই তত্ত্বটি দাবি করে যে এখানে পৃথিবীর প্রাকৃতিক চুম্বকের একটি খুব উচ্চ টান রয়েছে যা কম্পাস এবং অন্যান্য অত্যাধুনিক সরঞ্জামগুলিকে ঠিকঠাক কাজ করতে দেয় না এবং তাদের জলের মধ্য দিয়ে তাদের অভিপ্রেত রুট নেওয়ার ক্ষেত্রে অসুবিধার সৃষ্টি করে।
মেঘের টানেলও এর কারণ হতে পারে – বলা হয়ে থাকে যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গলে মেঘের টানেল তৈরি হয় যেখানে কোনও রাডার কাজ করে না বা কোনও যোগাযোগ তৈরি হয় না। মেঘের টানেল এই টানেলটি একটি খুব বড় টর্নেডোর রূপ। এই ঝড়ের মধ্যে প্রবেশ করলে তার আর নিস্তার নেই।
জলদস্যুরা অভিনয় করতে পারে - লোকেরা এমনটাও বলে যে বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের কোনো অজানা রহস্য নেই । জলদস্যুরা এই জাতীয় দুর্ঘটনার পিছনে রয়েছে এবং তারা এমন গুজব ছড়ায় যাতে কেউ তাদের সন্দেহ করতে না পারে এবং সেই রহস্যের আড়ালে তারা এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটায় এবং জাহাজ ডাকাতি করতে থাকে।
যাইহোক, যেহেতু কোনো তত্ত্বই এই রহস্যের কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেনি তাই অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এই অঞ্চলের সাথে কোনো রহস্যই জড়িত নেই। তারা বেশিরভাগ ঘটনাই ভুলভাবে রিপোর্ট করা হয়েছে বলে বা দুর্ঘটনার কাল্পনিক সংস্করণ বলে মনে করেন।
বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের রহস্যের পিছনে সঠিক কারণের কোন প্রমাণিত তত্ত্ব না থাকায় সেই রহস্য কারো পক্ষে উন্মোচন করাও সম্ভব হয়ে ওঠেনি।তাই প্রতি বছর এই অঞ্চলে দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে।
বন্ধুরা, আশা করি বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের গোপনীয়তা সম্পর্কে এই তথ্যটি আপনাদের ভালো লাগবে এবং বারমুডা ট্রায়াঙ্গেল সম্পর্কে নতুন কিছু জানলেন।
ধন্যবাদ।।