কৈলাশ নাথ মন্দিরের ইতিহাস


মহারাষ্ট্রে অবস্থিত  ইলোরা গুহাগুলির "কেভ 16" নামেও পরিচিত।এদের মধ্যে কৈলাসা মন্দিরটি একটি মাত্র শিলা থেকে খোদাই করে বানানো। এটি বিশ্বের বৃহত্তম একশিলা ভবন হিসাবে পরিচিত। মন্দিরের চিত্তাকর্ষক আকার ছাড়াও এটি এর ভাস্কর্য, অনন্ন স্থাপত্য  চমৎকার ও কারুকার্যের জন্যও উল্লেখযোগ্য।

কৈলাস মন্দির(কৈলাশ নাথ মন্দির) পশ্চিম ভারতের মহারাষ্ট্র অঞ্চলের একটি প্রাচীন হিন্দু মন্দির। মন্দিরটি ইলোরা গুহাগুলির একটা অংশ। এই গুহাগুলি একটি ধর্মীয় কমপ্লেক্স যা 34টি শিলা কেটে নির্মিত মঠ এবং মন্দির নিয়ে গঠিত।

এই কৈলাশ মন্দিরের নাম হিমালয়ের দেবতা শিবের বাসস্থান কৈলাশ পর্বত থেকে এসেছে। মন্দিরটি ৮ম শতাব্দীতে রাষ্ট্রকূট সাম্রাজ্যের শাসক কৃষ্ণের(প্রথম) রাজত্বকালে নির্মিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। কৈলাস মন্দিরটি ভগবান শিবকে (বিশেষ হিন্দু দেবতাকে) উৎসর্গ করে বানানো হয়েছিল। 757 থেকে 783 খ্রিস্টাব্দের মধ্যে এই মন্দিরের নির্মাণ কার্য হয়েছিল বলে জানা যায়। প্রায় 25 বছর ধরে চরণন্দ্রী পর্বতের উল্লম্ব বেসাল্ট ক্লিফ থেকে মোট 200,000 টন (অন্যান্য অনুমান 150,000 থেকে 400,000 পর্যন্ত) শিলা কেটে এই চমৎকার মন্দির এর নির্মাণ করা হয়েছিল। এটা অনুমান করা হয় যে মন্দিরটি কেবল সাধারণ হাতুড়ি এবং ছেনি দিয়ে উপর থেকে নীচে খোদাই করেই বানানো হয়েছিল,যা এই যুগে দাড়িয়ে ভাবলে অকল্পনীয় মনে হয়।


মহারাষ্ট্রের স্থানীয় জনগণের মধ্যে একটা কথা প্রচলিত(কিংবদন্তি) আছে যা বলে কৈলাস মন্দিরটি নাকি আসলে এক সপ্তাহের মধ্যে নির্মিত হয়েছিল। এই কিংবদন্তি একটি রানীকে ঘিরে আবর্তিত হয়েছে যার স্বামী খুব অসুস্থ ছিলেন। রানী শিবের কাছে প্রার্থনা করলেন এবং দেবতার কাছে তার স্বামীকে সুস্থ করার জন্য অনুরোধ জানালেন। এই অনুগ্রহের বিনিময়ে, রানী ভোলাবাবাকে উত্সর্গীকৃত একটি মন্দির তৈরি করার এবং মন্দিরটি সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত উপবাস করার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। রানীর প্রার্থনার উত্তর পেয়েছিলেন এবং তিনি মানত পূরণ করতে উদ্যোগ নিলেন। রাণীর স্থপতিরা উপবাস নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন, কারণ এই ধরনের একটি বিশাল মন্দির সম্পূর্ণ করতে দীর্ঘ সময় লাগবে। স্থপতিদের একজন, যার নাম ছিল কোকাসা,তিনি রানীকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে তিনি এক সপ্তাহের মধ্যে মন্দিরটি তৈরি করতে পারবেন। কোকাসা ওনার কথা অনুযায়ী পাথরের উপর থেকে নীচের দিকে মন্দিরটি বানানোর জন্য খোদাই করা শুরু করলেন এবং কঠোর নিষ্ঠার মাধ্যমে এক সপ্তাহের মধ্যে কৈলাস মন্দিরের কাজ শেষ করেছিলেন।

মন্দির নির্মাণের গল্প যাই হোক না কেন, কৈলাস মন্দিরটি ভগবানের প্রতি শ্রদ্ধা হিসাবে নির্মিত একটি মাস্টারপিস। এই কৃতিত্বটি সম্পূর্ণ করার জন্য নির্মাণকুশলতা ছাড়াও, কৈলাস মন্দিরটি তার মধ্যে গেঁথে থাকা অসংখ্য ভাস্কর্যের জন্যও উল্লেখযোগ্য। উদাহরণস্বরূপ মূল প্রাঙ্গণে শিবের পবিত্র গাভী নন্দীর একটি মূর্তি রয়েছে, যেটি শিবলিঙ্গের দিকে মুখ করে রয়েছে। এই ঐতিহ্যগত বৈশিষ্ট্য শিবকে উত্সর্গীকৃত সমস্ত মন্দিরে দেখা যায়। মন্দিরের দোরগোড়ায় হাতির ভাস্কর্য দেখা যায় যা দর্শনার্থীদের মনে ধারণা দেয় যে পুরো কাঠামোটির ভর এই পশু বহন করছে।


এসব ছাড়াও কৈলাস মন্দিরে বিভিন্ন জটিলভাবে খোদাই করা প্যানেল দেখা যেতে পারে। উদাহণস্বরূপ যেমন দুটি প্রধান হিন্দু মহাকাব্য  মহাভারত এবং রামায়ণের দৃশ্যগুলিকে পাহাড়ের পাথর কেটে চিত্রিত করা হয়েছে। মন্দিরের দক্ষিণ-পূর্ব ভাগে(গ্যালারিতে) হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর বিভিন্ন ১০ টি অবতারকে খোদাই করা হয়েছে।

মুঘল আমলের কৈলাস মন্দির সম্পর্কে একটি মজার গল্প আছে। সম্রাট ঔরঙ্গজেবের শাসনকালে মুঘলরা মন্দিরটি ধ্বংস করার চেষ্টা করেছিল। ঔরঙ্গজেব ইতিমধ্যেই অসংখ্য হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে ফেলেছিলেন এবং ধ্বংসের তালিকায় কৈলাস মন্দিরকেও যুক্ত করার ইচ্ছা ছিল। এমনক মন্দির ভাঙার জন্য 1000 ধ্বংসকারী পাঠানো হয়েছিল বলে জানা যায়।তারা তিন বছর ধরে কেবল মন্দিরের ন্যূনতম ক্ষতি করতে সক্ষম হয়েছিল যেমন বেশ কিছু অংশ বিকৃত করে দেওয়া বা কিছু উপাস্য দেবদেবীর মূর্তি ভেঙে দেওয়া। মন্দিরটি সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করা অসম্ভব বুঝতে পেরে ঔরঙ্গজেব অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন।

ধন্যবাদ।।


বিশ্বের ধনী দেশগুলো

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4