ভূমিকা: ভারত–ইজরায়েল প্রতিরক্ষা অংশীদারিত্ব কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতি মূলত ভারত–পাকিস্তান পারমাণবিক দ্বন্দ্ব এবং চীন–ভারত সীমান্ত উত্তেজনার মধ্যেই আবর্তিত হয়েছে। কিন্তু ২০২৫ সালের পর থেকে এই সমীকরণে যুক্ত হয়েছে এক নতুন শক্তিশালী উপাদান— ভারত–ইজরায়েল যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন অংশীদারিত্ব।
ভারত–ইজরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন অংশীদারিত্ব হল এমন একটি কৌশলগত প্রতিরক্ষা জোট, যেখানে ইজরায়েলের উন্নত missile technology (LORA, Ice Breaker, Air LORA) সরাসরি ভারতে যৌথভাবে তৈরি হচ্ছে। এর ফলে India-Israel Defence ties মজবুত হওয়ার পাশাপাশি দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের conventional strike capability ও ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব নাটকীয়ভাবে বেড়ে যাচ্ছে।
এই অংশীদারিত্ব কোনও সাধারণ অস্ত্র কেনাবেচার চুক্তি নয়; এটি একটি কৌশলগত প্রযুক্তি ও শিল্পভিত্তিক সামরিক জোট, যা দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিসাম্যকে আমূল বদলে দিচ্ছে। যেখানে আগে ভারত ছিল বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ অস্ত্র আমদানিকারক, সেখানে এখন ভারত পরিণত হচ্ছে বিশ্বমানের ক্ষেপণাস্ত্র প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারকে।
এই চুক্তির ফলে একদিকে যেমন ভারতের সামরিক শক্তি গুণগতভাবে কয়েক ধাপ এগিয়ে যাচ্ছে, তেমনি পাকিস্তান ও তুরস্কের সামরিক জোট কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে। অন্যদিকে ইজরায়েল তার অস্ত্র উৎপাদনের ভৌগোলিক নিরাপত্তা বাড়াচ্ছে, যা ইরান ও হিজবুল্লাহ হুমকির প্রেক্ষিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কেন ভারত ও ইজরায়েল একসাথে ক্ষেপণাস্ত্র বানাচ্ছে?
১. প্রযুক্তিগত সক্ষমতা ও উৎপাদন শক্তির অনন্য সমন্বয়
ইজরায়েল বিশ্বের অন্যতম উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির অধিকারী। বহু দশকের বাস্তব যুদ্ধের অভিজ্ঞতায় পরীক্ষিত হয়েছে তাদের:
-
LORA Ballistic Missile
-
Ice Breaker Cruise Missile
-
Barak-8 Air Defence System
-
উন্নত ড্রোন ও ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার প্রযুক্তি
অন্যদিকে ভারতের রয়েছে—
-
বিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানপাওয়ার
-
অল্প খরচে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন করার সক্ষমতা
-
DRDO, HAL, BDL-এর মতো শক্তিশালী সরকারি প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান
-
ক্রমবর্ধমান বেসরকারি প্রতিরক্ষা শিল্প (Adani, Tata, Mahindra, L&T)
এই দুই দেশের সক্ষমতা একত্রিত হওয়ায় তৈরি হচ্ছে এক বিশ্বমানের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ইকোসিস্টেম।
২. ২০২৫ সালের ঐতিহাসিক MoU
২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা মহাপরিচালক আমির বারামের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় একটি ঐতিহাসিক সমঝোতা স্মারক (MoU)।
এই চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকে—
-
যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন
-
উন্নত সামরিক প্রযুক্তি হস্তান্তর
-
সহ-উন্নয়ন ও সহ-উৎপাদন
-
ভারতে সম্পূর্ণ অ্যাসেম্বলি ও পরীক্ষাকরণ
এটি “Make in India Defence” ও “Atmanirbhar Bharat” নীতির অধীনে ভারতের সবচেয়ে উচ্চাভিলাষী প্রতিরক্ষা প্রকল্পগুলির একটি।
৩. ২৬/১১-পরবর্তী সময় থেকে গড়ে ওঠা বিশ্বাস
২০০৮ সালের মুম্বাই হামলার পর ভারতের গোয়েন্দা নজরদারি, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার ও কাউন্টার-টেররিজম ব্যবস্থায় ইজরায়েল গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিগত সহায়তা দেয়। তখন থেকেই ভারত–ইজরায়েল সম্পর্ক ক্রমশ উন্নত হয়ে আজ একটি “First-Rate Strategic Partnership”-এ পরিণত হয়েছে।
৪. ইজরায়েলের জন্য কৌশলগত নিরাপত্তা
ইজরায়েল একটি ছোট দেশ। ইরান, হিজবুল্লাহ, হামাসের মতো শত্রু দ্বারা ঘিরে থাকার ফলে তাদের প্রতিরক্ষা উৎপাদন কেন্দ্র সবসময় ঝুঁকির মধ্যে থাকে।
ভারতে উৎপাদন শুরু হলে—
-
ইজরায়েলের অস্ত্রশিল্পের সেকেন্ডারি প্রোডাকশন হাব তৈরি হবে
-
যুদ্ধকালে দেশীয় কারখানায় হামলা হলেও বিশ্ববাজারে সরবরাহ বজায় থাকবে
-
ভারত এখন ইজরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র আমদানিকারক (৩৪%)
পাকিস্তান–তুরস্ক প্রতিরক্ষা জোট বনাম ভারত–ইজরায়েল অংশীদারিত্ব
পাকিস্তান–তুরস্ক সামরিক জোট
২০২০ সালের পর থেকে তুরস্ক পাকিস্তানের দ্বিতীয় বৃহত্তম অস্ত্র সরবরাহকারী (চীনের পরে)। তারা সরবরাহ করছে—
-
Bayraktar TB2 Drone
-
Kemankes Cruise Missile
-
MILGEM যুদ্ধজাহাজ
-
T129 হেলিকপ্টার
২০২৫ সালে পাকিস্তানের সীমান্তে ড্রোন হামলায় তুরস্কের Songar Drone ব্যবহারের ঘটনাও রিপোর্ট হয়েছে।
ভারত–ইজরায়েল জোট কেন বেশি শক্তিশালী?
| দিক | পাকিস্তান–তুরস্ক | ভারত–ইজরায়েল |
|---|---|---|
| অস্ত্রের ধরন | ড্রোন, হেলিকপ্টার | ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ মিসাইল |
| পরিসর | ৫০–১০০ কিমি | ৩০০–৪৩০ কিমি |
| প্রযুক্তি | মাঝারি মান | বিশ্বসেরা প্রযুক্তি |
| উৎপাদন | আমদানি নির্ভর | ১০০% দেশীয় উৎপাদন |
| কৌশলগত ক্ষমতা | ট্যাকটিক্যাল | স্ট্র্যাটেজিক |
ভারতে তৈরি হতে যাওয়া প্রধান ক্ষেপণাস্ত্রসমূহ
১. LORA Missile (Long Range Artillery)
Range: ৯০–৪৩০ কিলোমিটার
Speed: Mach 5–6
Warhead: ৫৬০–৬০০ কেজি
Accuracy: ১০ মিটার CEP
Trajectory: Quasi-Ballistic Dive
Platforms: স্থল, নৌ, বিমান (Air LORA)
✅ এটি পাকিস্তানের প্রায় সমস্ত সামরিক ঘাঁটি ভারতের মাটি থেকেই ধ্বংস করার সক্ষমতা দেয়।
২. Ice Breaker Cruise Missile
Range: ৩০০ কিমি
Weight: < ৪০০ কেজি
Seeker: AI-ভিত্তিক IIR
Flight: Sea-Skimming + Terrain Following
Launch: বিমান, হেলিকপ্টার, নৌ, স্থল
✅ এটি শত্রুর রাডার, এয়ার ডিফেন্স ও কমান্ড সেন্টার ধ্বংসের জন্য ব্যবহৃত হবে।
৩. Air LORA
Range: ৪০০–৪৩০ কিমি
Carrier Aircraft: Tejas, Su-30MKI
✅ ভারতীয় বিমান নিজের আকাশসীমা থেকেই পাকিস্তানের গভীরে আঘাত হানতে পারবে।
৪. অন্যান্য সিস্টেম
-
Sky Sting BVRAAM (২৫০ কিমি)
-
Barak-8 Air Defence
-
Heron TP ও Hermes 900 Drone
-
Negev NG7, X95 Rifle
ভারতের সামরিক ক্ষমতায় বিপ্লব
১. আক্রমণাত্মক কৌশলে রূপান্তর
LORA ও Ice Breaker ভারতের সেনাবাহিনীকে Reactive Defence থেকে Proactive Strike Doctrine-এ নিয়ে যাচ্ছে।
২. আমদানি নির্ভরতা কমে যাচ্ছে
| বছর | আমদানি | দেশীয় উৎপাদন |
|---|---|---|
| ২০১৪ | ৭০% | ৩০% |
| ২০২৫ | ৩৫% | ৬৫% |
৩. Network-Centric Warfare ক্ষমতা বৃদ্ধি
স্যাটেলাইট, ড্রোন, AWACS, ক্ষেপণাস্ত্র ও ফাইটার জেট একসঙ্গে যুক্ত হয়ে তৈরি হচ্ছে Integrated Battlefield System।
৪. পাকিস্তান ও চীনের উপর দ্বিমুখী চাপ
-
পাকিস্তানের সমস্ত এয়ারবেস LORA রেঞ্জে
-
চীনের HQ-9 সিস্টেমের জন্য LORA বড় চ্যালেঞ্জ
ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব
✅ ভারত এবার শুধু পারমাণবিক নয়, প্রচলিত যুদ্ধেও সুপ্রভাব বিস্তারকারী
✅ পাকিস্তান বাধ্য হচ্ছে নিউক্লিয়ার থ্রেশহোল্ড নামাতে
✅ তুরস্ক দক্ষিণ এশিয়ায় কৌশলগতভাবে কোণঠাসা
✅ যুক্তরাষ্ট্র ভারত–ইজরায়েল জোটকে চীন মোকাবিলার অংশ হিসেবে দেখছে
✅ রাশিয়ার উপর ভারতের নির্ভরতা কমছে
Atmanirbhar Bharat ও Make in India Defence-এ বিপ্লব
| সূচক | ২০১৪ | ২০২৫ |
|---|---|---|
| উৎপাদন | ₹৪৬,৪২৯ কোটি | ₹১.৫৪ লক্ষ কোটি |
| রপ্তানি | ₹৪৮৬ কোটি | ₹২৩,০০০+ কোটি |
কেন পাকিস্তান ও তুরস্ক আতঙ্কিত?
-
পাকিস্তানের GHQ Rawalpindi এখন LORA রেঞ্জে
-
তাদের Shaheen, Nasr মিসাইল সাইলো ঝুঁকিতে
-
বিমানঘাঁটি ছড়িয়ে রাখতে বাধ্য
-
“Use It or Lose It” নিউক্লিয়ার চাপ সৃষ্টি হচ্ছে
তুরস্ক বুঝতে পারছে—
-
তারা পাকিস্তানকে স্ট্র্যাটেজিক লেভেলের অস্ত্র দিতে অক্ষম
-
ভারত–ইজরায়েল জোটের সামনে তুরস্কের প্রভাব কমছে
-
কাশ্মীর ইস্যুতে সমর্থন দিয়ে আর সামরিক ভারসাম্য রাখা যাবে না
উপসংহার
ভারত–ইজরায়েল যৌথ ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন অংশীদারিত্ব দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিসাম্যকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে, যেখানে—
✅ ভারত স্ট্র্যাটেজিক সুপারপাওয়ারে পরিণত হচ্ছে
✅ পাকিস্তানের পারমাণবিক ছাড়া আর কার্যকর পাল্টা অস্ত্র নেই
✅ তুরস্ক কৌশলগতভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে
✅ চীন নতুন করে মোকাবিলা কৌশল ভাবতে বাধ্য হচ্ছে
এই অংশীদারিত্ব একদিকে ভারতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে, অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়াকে একটি নতুন অনিশ্চিত কিন্তু শক্তির ভারসাম্যপূর্ণ যুগে নিয়ে যাচ্ছে।
People Also Ask – India-Israel Missile Manufacturing Partnership (Bengali)
ভারত–ইজরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন অংশীদারিত্ব কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ভারত–ইজরায়েল ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদন অংশীদারিত্ব এমন একটি কৌশলগত সহযোগিতা, যেখানে ইজরায়েলের উন্নত missile technology ও ভারতের manufacturing capacity একত্রিত হয়েছে। LORA ও Ice Breaker-এর মতো long-range precision missiles ভারতে তৈরি হওয়ায় India-Israel Defence Partnership আরও গভীর হচ্ছে এবং South Asia-তে ভারতের conventional military power স্পষ্টভাবে বাড়ছে।
LORA Missile কী এবং এটি ভারতের জন্য কতটা game changer?
LORA (Long Range Artillery) হল ইজরায়েলি quasi-ballistic missile যার range প্রায় ৪০০–৪৩০ কিমি এবং accuracy প্রায় ১০ মিটার CEP। এটি ভারতের মাটি থেকে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ airbase, command centre ও missile site-এ deep strike চালাতে সক্ষম। ভারতীয় মাটিতেই LORA Missile Production শুরু হলে India’s long range conventional strike capability কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে।
Ice Breaker Cruise Missile ভারতকে কী ধরনের কৌশলগত সুবিধা দিচ্ছে?
Ice Breaker Cruise Missile-এর range প্রায় ৩০০ কিমি, low-level sea-skimming ও terrain-following flight profile এবং AI-ভিত্তিক IIR seeker রয়েছে। এটি radar station, air defence battery ও command centre-এর মতো high value target নিখুঁতভাবে ধ্বংস করতে পারে। Ice Breaker ভারতীয় Tejas ও Su-30MKI বিমানের সাথে ইন্টিগ্রেট হলে India’s stand-off strike capability আরও শক্তিশালী হবে।
India-Israel Missile Partnership পাকিস্তান ও তুরস্কের জন্য কেন উদ্বেগের?
পাকিস্তান–তুরস্ক প্রতিরক্ষা জোট মূলত drones, helicopters ও corvette-এর মতো tactical platform-এ সীমাবদ্ধ, কিন্তু India-Israel Missile Partnership LORA ও Air LORA-এর মতো strategic-range missile তৈরি করছে। এর ফলে পাকিস্তানের GHQ Rawalpindi, airbase ও missile site সরাসরি Indian territory থেকে strike-এর ঝুঁকিতে পড়ছে এবং তুরস্কের supplied system-গুলো qualitative gap পূরণ করতে পারছে না।
Make in India Defence ও Atmanirbhar Bharat নীতিতে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রকল্পের ভূমিকা কী?
India-Israel Missile Manufacturing Project সরাসরি Make in India Defence ও Atmanirbhar Bharat উদ্যোগকে শক্তিশালী করছে। ইজরায়েলি technology transfer-এর মাধ্যমে LORA, Ice Breaker ও Air LORA-এর মতো advanced missile systems ভারতীয় কোম্পানি ও DRDO-এর মাধ্যমে দেশেই উৎপাদিত হবে। এতে defence import dependency কমবে, indigenous defence industry বিকশিত হবে এবং India as a global defence exporter লক্ষ্য বাস্তবায়নে গতি আসবে।