ক্রিকেট মানেই অনিশ্চয়তার খেলা। একদিন যে দল জয়ধ্বনি তোলে, অন্যদিন সেই দলই ডুবে যায় লজ্জার সাগরে। সদ্য শেষ হওয়া অস্ট্রেলিয়া বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা ওডিআই সিরিজে এমনই এক দৃশ্যের সাক্ষী হলো বিশ্ব ক্রিকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জিতলেও শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া এমন মার দিল যে, প্রোটিয়ারা চিরদিনের মতো এই হারকে লজ্জার কপালে লিখে রাখবে।
সিরিজের সংক্ষিপ্ত চিত্র
সিরিজটি ছিল তিন ম্যাচের।
- প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকা দুর্দান্ত খেলল। কেশব মহারাজ ক্যারিয়ার সেরা বোলিং করে ৫ উইকেট নিলেন, আর অস্ট্রেলিয়াকে ১৯৮ রানে গুটিয়ে দিলেন। ফলে প্রোটিয়ারা ৯৮ রানে জিতে গেল।
- দ্বিতীয় ম্যাচে একই ধারা চলল। ২৭৭ রান তুলে দক্ষিণ আফ্রিকা অজিদের ১৯৩ রানে আটকে দিল। ফলে সিরিজ তাদের ঝুলিতে চলে গেল ২-০ তেই।
- কিন্তু, তৃতীয় ম্যাচে যা ঘটল, তা শুধু সিরিজ নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসকেও বদলে দিল।
লজ্জার রেকর্ড: ২৭৬ রানে হার!
তৃতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়া টসে ব্যাটিং নিয়ে রেকর্ড ঝড় তোলে। ৪৩১/২ – হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন! মাত্র দুই উইকেট হারিয়ে ৪৩১ রান তোলে অজিরা। ব্যাটিং যেন ছিল আতশবাজির প্রদর্শনী। ট্র্যাভিস হেড, মিচেল মার্শ আর ক্যামেরন গ্রিন – তিনজনই সেঞ্চুরি হাঁকালেন। মনে হচ্ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা নেটে বল করছে, আর অজিরা অনুশীলন করছে!
প্রোটিয়াদের বোলিং লাইনআপ ভেঙে পড়ল জেঙ্গা টাওয়ারের মতো। স্পিনার থেকে পেসার, কেউই বাঁচাতে পারল না। বাউন্ডারি, ছক্কা আর রানবৃষ্টির সামনে দক্ষিণ আফ্রিকার শর্ট বল, ইয়র্কার, স্লোয়ার – সবকিছুই যেন হয়ে গেল ফ্ল্যাট পিচের ধুলো।
আর ব্যাটিং? এক কথায় ধস। ৪৩১ রানের জবাবে দক্ষিণ আফ্রিকা নামল ব্যাট হাতে, কিন্তু মনে হচ্ছিল তারা যেন ১৫৫ রানের ছোট্ট কোনো লক্ষ্য তাড়া করছে, সেটাও পূরণ হলো না। পুরো দল অলআউট ১৫৫! ফলাফল – অস্ট্রেলিয়ার জয় ২৭৬ রানে।
এই হার দক্ষিণ আফ্রিকার ওডিআই ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরাজয়। ক্রিকেট বিশ্বে ট্রল ঝড় শুরু হওয়া অস্বাভাবিক নয়।
ক্রিকেটপ্রেমীদের ট্রল-পোস্ট
বাংলাদেশে যেমন হেরে গেলে ‘৪৭ অলআউট’ নিয়ে এখনও ট্রল চলে, তেমনই দক্ষিণ আফ্রিকাকে এখন থেকে মনে রাখা হবে "৪৩১-এর সামনে ১৫৫" নামের এক মহা লজ্জার জন্য। সোশ্যাল মিডিয়ায় ইতিমধ্যেই নানা মিম ভাইরাল:
- "দক্ষিণ আফ্রিকা ৪৩১ তাড়া করতে নেমেছিল না, ৪৩১ এড়াতে নেমেছিল!"
- "অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানরা কি গেম খেলছিল? আর প্রোটিয়ারা কি ভক্ত হয়ে হাততালি দিচ্ছিল?"
- "কেশব মহারাজ প্রথম ম্যাচে ৫ উইকেট পেলেও শেষ ম্যাচে পুরো টিমই যেন ৫ ওভারও খেলতে পারল না!"
মিচেল মার্শের ক্যাপ্টেনস নক
অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক মিচেল মার্শ শুধু দলকে নেতৃত্বই দিলেন না, নিজেও ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন। শতরান তুলে তিনি প্রমাণ করলেন, কেন তাকে অধিনায়ক করা হয়েছে। দলে নতুন এনার্জি, আক্রমণাত্মক মেজাজ আর বড় ম্যাচে জয়ের ক্ষুধা – সব মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়া দেখাল তারা এখনও বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ওডিআই দলগুলির একটি।
দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য সতর্কবার্তা
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ জিতলেও এই হার তাদের মানসম্মান একেবারেই ধুলিসাৎ করেছে। আসন্ন ইংল্যান্ড সিরিজের আগে এভাবে ভেঙে পড়া মানসিকভাবে ভয়াবহ ক্ষতি ডেকে আনতে পারে। একদিকে টপ-অর্ডার ব্যাটিংয়ে ধারাবাহিকতার অভাব, অন্যদিকে বোলারদের লাইন-লেংথ হারিয়ে ফেলা – সবকিছুই তাদের বড় টুর্নামেন্টে সমস্যায় ফেলতে পারে।
উপসংহার
শেষ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া হয়তো সিরিজ জিততে পারেনি, কিন্তু শেষ ম্যাচে যে বার্তা দিল, সেটি একেবারে স্পষ্ট – “অজিদের কখনোই হালকাভাবে নিও না।” আর দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য বার্তা – সিরিজ জেতা মানেই সবকিছু নয়, কারণ একটা ম্যাচই যথেষ্ট তোমাকে ইতিহাসের পাতায় ট্রলের রাজা বানিয়ে দিতে।
অস্ট্রেলিয়ার ২৭৬ রানের রেকর্ড জয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় ঘটনা হয়ে থাকবে। আর দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য? একেবারে অমর "লজ্জার দিন"!