চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের টানাপোড়েন: সিপিইসি প্রকল্প কি শেষের পথে?

 

🔴 চীনে অপমানিত ফিল্ড মার্শাল মুনির? ঘটনাটির সারাংশ

সিপিইসি সংকট ২০২৫  চীন পাকিস্তান দ্বন্দ্ব  আসিম মুনির চীনে অপমান  বালুচিস্তানে চীনা প্রকল্প

২০২৫ সালের ২৫ জুলাই, পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল আসিম মুনিরের বেইজিং সফর যেন পাকিস্তানের জন্য চরম বিব্রতকর এক কূটনৈতিক পর্ব হয়ে দাঁড়ায়। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই এবং অন্যান্য উচ্চপর্যায়ের নেতারা তাকে প্রকাশ্যে কড়া ভাষায় ভর্ত্সনা করেন। চীনের সরকারি সংবাদ সংস্থা Xinhua-তে প্রকাশিত বিবরণে স্পষ্ট হয়েছে এই ক্ষোভ—চীন আর নরম ভাষায় বলবে না।


🧨 আসল কারণ: চীনা নাগরিক ও সিপিইসি প্রকল্পের নিরাপত্তা নিয়ে ক্ষোভ

চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (CPEC) হচ্ছে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর অন্যতম প্রধান প্রকল্প, যার মাধ্যমে পাকিস্তানে প্রায় ৬০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে চীন। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে বারবার এই প্রকল্প এবং চীনা কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় বেইজিংয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙেছে।

উল্লেখযোগ্য হামলাগুলি:

  • ২০২১: দাসু হাইড্রো প্রজেক্টে আত্মঘাতী বোমায় ৯ জন চীনা প্রকৌশলী নিহত।
  • ২০২৩: করাচিতে চীনা কনভয়ের ওপর হামলা।
  • অক্টোবর ২০২৪: করাচি বিমানবন্দরের বাইরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমায় দুই চীনা নিহত।
  • মার্চ ২০২৫: আত্মঘাতী হামলায় ৫ চীনা শ্রমিক নিহত।

এসব হামলার জন্য দায়ী করা হচ্ছে বালুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী সংগঠন বালুচ লিবারেশন আর্মি (BLA)-কে, যারা CPEC-কে বালুচিস্তানের সম্পদের “শোষণ” বলে মনে করে।


🔥 মুনিরকে প্রকাশ্যে ভর্ৎসনা: চীনের কঠিন বার্তা

বেইজিংয়ে আসিম মুনিরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন:

  • পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই
  • ভাইস প্রেসিডেন্ট হান ঝেং
  • চীনা সামরিক কমিশনের ভাইস চেয়ারম্যান জেনারেল ঝাং ইউশিয়া

ওয়াং ই স্পষ্ট বলেন,

“পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে চীনা নাগরিক, প্রকল্প এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

এই বক্তব্য শুধু বৈঠকে সীমাবদ্ধ ছিল না, সরকারি মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর সামনে প্রকাশ করা হয়, যা এক ধরনের কূটনৈতিক অপমান বলেই ধরা হচ্ছে।


🕵️ কি মুনিরের ট্রাম্পের সঙ্গে লাঞ্চ দায়ী?

এই ঘটনার পেছনে আরেকটি আলোচিত সম্ভাবনা রয়েছে—সাম্প্রতিক আমেরিকা সফরে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে মুনিরের একটি “অফ-প্রটোকল” লাঞ্চ মিটিং। চীন হয়তো এটিকে “আস্থার বিশ্বাসঘাতকতা” হিসেবে দেখছে, বিশেষ করে যখন বালুচিস্তানে চীন ও আমেরিকা উভয়ের স্ট্র্যাটেজিক আগ্রহ রয়েছে।


💥 পাকিস্তানের খনিতে আমেরিকান আগ্রহ: CPEC-এর গায়ে কি শেষ পেরেক?

সম্প্রতি পাকিস্তান বালুচিস্তানে মার্কিন খনন সংস্থাগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে। বালুচিস্তান হলো CPEC-এর মূল স্তম্ভ, এবং চীনা কোম্পানিগুলিই এতদিন সেখানে খনিজ খনন করছিল।
এখন যদি মার্কিন সংস্থাগুলো প্রবেশ করে, তাহলে তা চীনের অর্থনৈতিক ও কৌশলগত স্বার্থে বড়সড় আঘাত হবে।


🔄 চীন-পাকিস্তান “আয়রন ব্রাদারহুড”: সম্পর্ক কি দুর্বল হচ্ছে?

চীন বারবার “iron-clad friendship” বললেও, এখন আর সেই সম্পর্ক আগের মতো নেই বলেই মনে হচ্ছে:

  • চীন তার ক্ষোভ গোপন না রেখে আন্তর্জাতিকভাবে প্রকাশ করছে
  • পাকিস্তানকে চাপ দেওয়া হচ্ছে "পরিস্থিতি এখনই বদলাও" বার্তা দিয়ে।
  • অথচ মুনির কেবল প্রচলিত আশ্বাস এবং সেনা টহল বাড়ানোর কথা বলেই ক্ষান্ত হয়েছেন।

🇵🇰 পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সংকট: সব সমস্যার গোড়া

  • বালুচিস্তান ও খাইবার পাখতুনখওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই বিচ্ছিন্নতাবাদী সহিংসতা চলছে।
  • CPEC-কে অনেকেই স্থানীয় সম্পদের “দখলদারিত্ব” বলে মনে করে।
  • একইসঙ্গে পাকিস্তান চরম অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে—যার ফলে চীনের মতো বিনিয়োগকারীদের “খুশি রাখা” অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

🧨 CPEC কি তবে শেষের পথে?

যদিও চীন এখনো বলছে তারা পাকিস্তানকে “কূটনৈতিক অগ্রাধিকার” দিচ্ছে, কিন্তু সিপিইসি আর “অপার বিশ্বাসে” চলবে না, সেটাই স্পষ্ট:

  • নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ছাড়া আর বিনিয়োগ নয়।
  • বালুচিস্তানে মার্কিন আগ্রহ বাড়লে চীন হয়তো ধীরে ধীরে পিছু হটবে।
  • মুনিরের নেতৃত্বে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী এই চ্যালেঞ্জ সামলাতে পারবে কি না, তা নিয়েও অনেকেই সন্দিহান।

📌 উপসংহার

আসিম মুনিরের বেইজিং সফর যেন চীন-পাকিস্তান সম্পর্কের জন্য জাগরণ ঘণ্টা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন এখন আর “ভ্রাতৃত্ব” দিয়ে নিরাপত্তার অভাব ঢাকতে রাজি নয়।
পাকিস্তান যদি বালুচিস্তানে মার্কিন কোম্পানির প্রবেশ ঘটায়, তাহলে সেটি CPEC প্রকল্পের “শেষ পেরেক” হয়ে উঠতে পারে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4