২০২৫ সালের ২২ জুন, যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে চালানো বিমান হামলাকে প্রথমে ‘সম্পূর্ণ ধ্বংসাত্মক’ হিসেবে তুলে ধরেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। কিন্তু সাম্প্রতিক মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ এই দাবিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে।
🔍 কী বলছে গোয়েন্দা প্রতিবেদন?
মার্কিন প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থা (DIA)-র প্রাথমিক মূল্যায়ন অনুযায়ী, এই হামলাগুলি ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে মাত্র কয়েক মাসের জন্য পিছিয়ে দিয়েছে, বছরের পর বছর নয়। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি ছিল যে, ইরানের পারমাণবিক শক্তি “ধ্বংসপ্রাপ্ত” হয়েছে — কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি অনেকটাই আলাদা।
📍 কোন কোন জায়গায় হামলা হয়েছে?
-
নাতাঞ্জ, ফোর্দো ও ইসফাহান: এই গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনাগুলিতে হামলা চালানো হয়। হামলায় কিছু প্রবেশদ্বার বন্ধ হয়ে গেলেও, ভূগর্ভস্থ কেন্দ্রগুলি আসলে অক্ষতই রয়ে গেছে।
-
ইউরেনিয়াম মজুদ অক্ষত: হামলার আগে ইরান তার উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম মজুদের একটি অংশ গোপন স্থানে সরিয়ে ফেলেছিল, ফলে সেগুলোর উপর ক্ষতি হয়নি।
-
সেন্ট্রিফিউজের ক্ষতি হয়নি পুরোপুরি: ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের জন্য ব্যবহৃত অনেক সেন্ট্রিফিউজও অক্ষত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
🇺🇸 হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়া
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এই মূল্যায়নকে হোয়াইট হাউস “সম্পূর্ণ ভুল” বলে অভিহিত করেছে এবং এটিকে “ট্রাম্প ও সামরিক অভিযানকে হেয় করার চেষ্টা” বলে অভিযোগ করেছে।
🇮🇷 ইরানের পারমাণবিক অবস্থান এখন কোথায়?
-
চলমান সমৃদ্ধকরণ: ইরান JCPOA (২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি) অনুযায়ী সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে এখনও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে।
-
ব্রেকআউট টাইম মাত্র এক সপ্তাহ?: কিছু মার্কিন গোয়েন্দা বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ইরান মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির মতো পরিমাণে উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম প্রস্তুত করতে পারে।
-
তবে অস্ত্র বানানোর পথে এখনই নয়: মার্কিন তথ্য মতে, ইরান এখনো পরীক্ষাযোগ্য পারমাণবিক বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় চূড়ান্ত পদক্ষেপ নেয়নি।
-
নতুন কেন্দ্র ও আধুনিক সেন্ট্রিফিউজ: ইরান সম্প্রতি একটি তৃতীয় পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ কেন্দ্র নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছে এবং এতে উন্নত প্রযুক্তির সেন্ট্রিফিউজ বসানো হচ্ছে।
⚠️ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষণ ও IAEA
- IAEA-এর সঙ্গে দ্বন্দ্ব: আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA) সম্প্রতি ইরানকে চুক্তিভঙ্গকারী হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এর পাল্টা হিসেবে ইরানের সংসদ IAEA-এর সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধের প্রস্তাব পাস করেছে, যদিও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে ইরানের সর্বোচ্চ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ।
🗣️ বিভিন্ন পক্ষের মতভেদ
-
মার্কিন প্রশাসন: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এখনও জোর দিয়ে বলছেন, এই হামলা ইরানের পরমাণু কর্মসূচিকে “সম্পূর্ণ ধ্বংস” করেছে।
-
ইসরায়েলি বিশ্লেষণ: ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্র দাবি করেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি “বছরের পর বছর পিছিয়ে গেছে”।
-
ইরানের প্রতিক্রিয়া: ইরান নিজের পরমাণু কর্মসূচিকে “শান্তিপূর্ণ ও বেসামরিক” বলে দাবি করেছে এবং বলেছে, তারা এই কর্মসূচি থেকে পিছিয়ে আসবে না।
-
আন্তর্জাতিক দৃষ্টিভঙ্গি: ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলো এবং পরমাণু বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধুমাত্র সামরিক অভিযান ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা শেষ করতে পারবে না — দরকার রাজনৈতিক সংলাপ ও কূটনৈতিক সমাধান।
📝 উপসংহার
মার্কিন বিমান হামলা ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলিতে তাৎক্ষণিক কিছু ক্ষতি করলেও, তা ইরানের মৌলিক পারমাণবিক ক্ষমতা ধ্বংস করতে পারেনি। ভূগর্ভস্থ গোপন স্থাপনা ও ইউরেনিয়াম মজুদ এখনও অক্ষত রয়েছে। ফলে এই ইস্যুতে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ বহাল রয়েছে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্যকর ও কূটনৈতিক সমাধানের প্রয়োজনীয়তা আরও স্পষ্ট হয়েছে।
বিশ্ব এখন তাকিয়ে আছে – সংঘাত নাকি সমঝোতা?