১. প্রাচীনতম সাম্রাজ্য: খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ অব্দ থেকে খ্রিস্টাব্দ ৮০০ অব্দ পর্যন্ত চেরা সাম্রাজ্য দক্ষিণ ভারতে রাজত্ব করে। এটি তামিলনাডু ও কেরলের বেশিরভাগ অংশ নিয়ে গঠিত ছিল।
২. ব্যবসায়িক শক্তি: চেরা সাম্রাজ্য ভারতের রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে মসলা ও মূল্যবান পাথরের ব্যবসায়ের জন্য বিখ্যাত ছিল। তাদের রাজধানী করুরুবন, রোমান সাম্রাজ্যের সঙ্গে বাণিজ্য কেন্দ্র হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
৩. নৌবাহিনীর শক্তি: চেরা সাম্রাজ্য একটি শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তুলেছিল, যা তাদের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত সমুদ্রপথে বাণিজ্য ও অভিযান পরিচালনা করতে সহায়তা করেছিল। তাদের নৌবাহিনী রোমানদের সাথেও যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল।
৪. বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক: চেরা রাজারা শৈব ও বৌদ্ধ ধর্ম উভয়কেই পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। মহাবলীপুরমের কৈলাসনাথ মন্দির এবং পাল্লাবীর শৈব মন্দিরগুলি চেরা সাম্রাজ্যের শৈব শিল্পকলার উজ্জ্বল নিদর্শন। বৌদ্ধ ধর্মের প্রভাবও তাদের মুদ্রা ও শিল্পকলায় দেখা যায়। তাদের রাজত্বকালে অনেক বৌদ্ধ মন্দির ও বিহার নির্মিত হয়েছিল। কাঞ্চিপুরমের পল্লবরাম মন্দির এবং নাগপট্টনমের ধর্মরাজ মন্দির চেরা সাম্রাজ্যের বৌদ্ধ শিল্পকলার উজ্জ্বল নিদর্শন।
৫. শিল্পকলা ও সাহিত্য: চেরা সাম্রাজ্য শিল্পকলা ও সাহিত্যের জন্যও বিখ্যাত ছিল। মহাবলীপুরমের গুহা মন্দির ও পল্লব মন্দিরগুলি চেরা শিল্পকলার উজ্জ্বল নিদর্শন।
৬. সংগম সাহিত্য: চেরা রাজাদের আমলে সংগম সাহিত্য বিকশিত হয়। এই সাহিত্যে তামিল জীবনযাত্রা, প্রেম, যুদ্ধ, প্রকৃতি, এবং রাজাদের বীরত্বের বর্ণনা পাওয়া যায়।
৭. দ্রাবিড় ভাষার উন্নয়ন: চেরা রাজারা দ্রাবিড় ভাষার উন্নয়নেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাদের আমলেই তামিল ভাষার প্রাচীনতম সাহিত্য রচিত হয়। চেরা রাজাদের পৃষ্ঠপোষ্কতা কেরল মালয়ালম ভাষার বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৮. চাষাবাদ ও কৃষি: চেরা রাজারা চাষাবাদ ও কৃষিকাজকে উৎসাহিত করতেন। তাদের রাজত্বকালে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পায় এবং অর্থনীতি সমৃদ্ধ হয়।
৯. রাজনৈতিক কৌশল: চেরা রাজারা অন্যান্য রাজ্যের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় রাখত এবং কৌশলগতভাবে বিদেশী আক্রমণ প্রতিহত করত।
১০. ঐতিহ্যের ধারা: চেরা সাম্রাজ্যের অবসানের পরেও তাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি দক্ষিণ ভারতে টিকে থাকে। তামিলনাডু ও কেরলের শিল্পকলা, সাহিত্য এবং লোকজ কাহিনীগুলিতে চেরা সাম্রাজ্যের প্রভাব এখনও দেখা যায়।
ভারতের চারটি মহামৃত্যের মধ্যে একটি: চেরা সাম্রাজ্য পল্লব, চোল এবং পাণ্ড্য সাম্রাজ্যের সাথে ভারতের চারটি মহামৃত্যের মধ্যে অন্যতম ছিল। এই সাম্রাজ্যগুলি দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
চোল রাজাদের উত্থান: খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দীতে চোল রাজারা ক্রমশক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং চেরা সাম্রাজ্যের অধিকাংশ অঞ্চল দখল করে নেয়।
পাল্লব রাজাদের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা: চেরা সাম্রাজ্য পাল্লব রাজাদের সাথে কয়েক শতাব্দী ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে। দুই রাজ্যের মধ্যে কয়েকটি যুদ্ধও হয়।
রোমান সম্রাট অগাস্টাসের সাথে সম্পর্ক: খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে রোমান সম্রাট অগাস্টাসের সাথে চেরা সাম্রাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য ও দূতাবাদল চলত।