১. উত্সের রহস্য: পল্লবদের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ তাদের দক্ষিণ ভারতীয়, কেউ আবার উত্তর ভারতীয় বলে মনে করেন। তবে তাদের প্রথম নৃপতি শিবস্কন্দ বর্মন খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতকের শেষদিকে রাজত্ব করতেন, এ বিষয়ে সবারই মত আছে।
২. কাঞ্চিপুরমের গৌরব: পল্লব রাজধানী কাঞ্চিপুরম ছিল দক্ষিণ ভারতের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। মহান পণ্ডিতরা এখানে জ্ঞানার্জন করতে আসতেন, এবং সংস্কৃত ও তামিল সাহিত্যের বিকাশে পল্লবদের অবদান অপরিসীম।
৩. শিলামন্দিরের কীর্তি: পল্লবরা মহাকাব্যিক ভাস্কর্যের জন্য বিখ্যাত। মামল্লাপুরমের অপূর্ব রথ মন্দির ও কৈলাসনাথ মন্দির তাদের শিল্পকলার চূড়ান্ত নিদর্শন। এসব মন্দির পাথর কেটে তৈরি, যা তাদের কারিগরি ও নিষ্ঠার প্রমাণ দেয়।
৪. পাল্লাবী শহরগুলো: পল্লবরা উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত অনেক শহর নির্মাণ করেন। তাদের রাজধানী কাঞ্চিপুরমের পাশাপাশি, পল্লবপুরম, মামল্লাপুরম, ও তঞ্জাবুরের মতো শহরগুলো এখনও ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
৫. জলচক্র ও সেচ ব্যবস্থা: পল্লবরা কৃষি উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তারা জলচক্র ও সেচ ব্যবস্থা উদ্ভাবন করেন, যা দক্ষিণ ভারতের কৃষিক্ষেত্রের বিকাশে অপরিहार্য অবদান রাখে।
৬. নৌবাহিনীর শক্তি: পল্লবরা শক্তিশালী নৌবাহিনী গড়ে তোলেন। তারা পূর্বদিকে পাল্লাবপুরম থেকে শ্রীলঙ্কার তাম্ব্রলিপি পর্যন্ত বাণিজ্যিক পথ নিয়ন্ত্রণ করতেন এবং শত্রুদের সাথে নৌযুদ্ধেও পারদর্শী ছিলেন।
৭. ধর্মীয় সহনশীলতা: পল্লব রাজারা হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেও বৌদ্ধ ধর্মকে সম্মানিত করতেন। মামল্লাপুরমের পঞ্চরথ মন্দির ও ঐতিহাসিক গুহা মন্দির বৌদ্ধ শৈলের অন্যতম সুন্দর নিদর্শন।
৮. কলা ও নাট্যের পোষকতা: পল্লব রাজারা শিল্পকলা ও সাহিত্যের বিকাশে অবদান রাখেন। মহেন্দ্র বর্মন রচিত 'মত্ত বিলাস প্রহসন' নাটক তৎকালীন সমাজের চিত্র তুলে ধরে।
৯. চালুক্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা: পল্লবদের চালুক্য রাজাদের সাথে দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল। নরসিংহ বর্মন দ্বিতীয় চালুক্য রাজা দ্বিতীয় পুলকেশীকে পরাজিত করে বীরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন।
১০. অশ্বমেধ যজ্ঞ: প্রথম নৃপতি শিবস্কন্দ বর্মন অশ্বমেধ যজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছিলেন, যা এককালে রাজার শক্তি ও প্রতিপত্ত্ব প্রমাণের কঠিন পরীক্ষা হিসেবে বিবেচিত হত।
১১. সাহিত্যিক অবদান: পল্লবরা তামিল ও সংস্কৃত উভয় ভাষাতেই সাহিত্য রচনা করেছেন। তাদের রাজত্বকালে 'পেরুন্দেক' এবং 'মণিমেগলাই' নামক তামিল মহাকাব্য রচিত হয়।
১২. দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে গুরুত্ব: পল্লব বংশ দক্ষিণ ভারতের ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ গ্রহণ করেছে। তাদের শাসনকালে শিল্পকলা, সংস্কৃতি, বাণিজ্য এবং কৃষিক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি সাধিত হয়।