সংহতি এবং বলিদান: কিভাবে ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সহায়তা করেছে

 

1971 সালের বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ আধুনিক ইতিহাসে স্বাধীনতার জন্য সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংগ্রাম হিসেবে পরিচিত। বাংলাদেশের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানের অত্যাচারী শাসনের বিরুদ্ধে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল এবং তাদের স্বাধীনতার অন্বেষণে তারা পশ্চিমে তাদের প্রতিবেশী ভারতে একটি অবিচল মিত্র খুঁজে পেয়েছিল। এই ব্লগটি বাংলাদেশের মুক্তির লড়াইকে সমর্থন করার ক্ষেত্রে ভারতের দ্বারা পরিচালিত মুখ্য ভূমিকা অন্বেষণ করে।


**I.পটভূমি: দুই পাকিস্তানের গল্প**


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের শিকড়গুলি 1947 সালে ব্রিটিশ ভারতের বিভক্তিতে খুঁজে পাওয়া যায়, যা দুটি পৃথক দেশ তৈরি করেছিল: ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তান দুটি ভৌগোলিকভাবে দূরবর্তী উইং, পশ্চিম পাকিস্তান (বর্তমান পাকিস্তান) এবং পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) নিয়ে গঠিত। ভৌগোলিকভাবে এক হাজার মাইলেরও বেশি বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্ত্বেও, এই দুটি শাখা পশ্চিম পাকিস্তানে একটি সাধারণ প্রশাসনের অধীনে একত্রিত হয়েছিল।


**II. যুদ্ধের ভূমিকা**


বছরের পর বছর ধরে চলা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক বৈষম্য পূর্ব পাকিস্তানে অসন্তোষ বাড়ায়। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ পশ্চিম পাকিস্তানে সরকার কর্তৃক প্রান্তিক ও বৈষম্যের শিকার বোধ করে। 1970 সালে, যখন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তখন শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে বিপুল বিজয় লাভ করে। তবে, পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকরা পূর্বে নির্বাচিত নেতাদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে নারাজ।


**III. ভারতের নৈতিক ও বস্তুগত সমর্থন**


পূর্ব পাকিস্তানে পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায়, পশ্চিম পাকিস্তানি বাহিনীর নৃশংস দমন-পীড়ন থেকে বাঁচতে লক্ষাধিক উদ্বাস্তু প্রতিবেশী ভারতে পালিয়ে যায়। এমন মানবিক সংকটের মুখে ভারত নিষ্ক্রিয় পর্যবেক্ষক থাকতে পারেনি। ভারত সরকার, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে, বাঙালি জনগণকে নৈতিক সমর্থন প্রসারিত করে এবং মুক্তিবাহিনী, বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের বস্তুগত সহায়তা প্রদান শুরু করে।


** IV. 1971 সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ**


1971 সালের 3 ডিসেম্বর, পাকিস্তান ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে পূর্বনির্ধারিত বিমান হামলা শুরু করে। জবাবে ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। সংঘাত দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী মুক্তিবাহিনীর সহযোগিতায় একটি সমন্বিত সামরিক অভিযান শুরু করে। পূর্ব পাকিস্তানের মুক্তিতে মুক্তিবাহিনীর পাশাপাশি ভারতীয় বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


** V. বিজয় ও স্বাধীনতা**


1971 সালের 16 ডিসেম্বর, ঢাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী যৌথ ভারতীয় ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম উপলক্ষে। যুদ্ধের ফলে একটি নতুন দেশ সৃষ্টি হয় এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সমাপ্তি ঘটে।


**VI. বন্ধুত্বের উত্তরাধিকার**


বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের সমর্থন ও হস্তক্ষেপ দুই দেশের মধ্যে একটি দৃঢ় ও স্থায়ী বন্ধুত্বকে শক্ত করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকাকে গণতন্ত্র ও আত্মনিয়ন্ত্রণের সংহতি এবং ভাগ করা মূল্যবোধের প্রতীক হিসেবে স্মরণ করা হয়।


**VII. যুদ্ধের বাইরে**


বাংলাদেশের প্রতি ভারতের সহায়তা যুদ্ধের মাধ্যমে শেষ হয়নি। দুই দেশ তখন থেকে বাণিজ্য, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা সহ বিভিন্ন ফ্রন্টে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে।


**উপসংহার**


১৯৭১ সালের বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ ছিল দক্ষিণ এশিয়ার ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রতি ভারতের সমর্থন একটি স্বাধীন জাতির জন্মে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই সময়ে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শক্তি ও সহযোগিতার উৎস হয়ে চলেছে। ইতিহাসের এই উল্লেখযোগ্য অধ্যায়ের উত্তরাধিকার আমাদের সংহতি, ত্যাগের শক্তি এবং স্বাধীনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণের আদর্শের প্রতি অটুট অঙ্গীকারের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4