সবার সম্পর্কে বলা সম্ভব নয়, তবে সেই সময়কালীন একজনের জীবনকাহিনী তুলে ধরার চেষ্টা করা হলো।
একজন প্রখ্যাত চীনা পণ্ডিত ছিলেন, যিনি তার জীবনের মাঝামাঝি বয়সে পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। জি জিয়ানলিন (1911-2009), 1935 থেকে 1945 সাল পর্যন্ত জার্মানিতে দশ বছর অধ্যয়ন এবং বসবাস করে কাটিয়েছিলেন। 1935 থেকে 1942 সাল পর্যন্ত , তিনি গটিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন এবং পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি সংস্কৃত, পালি ও টোচারিয়ান ভাষায় পারদর্শী ছিলেন। 1942 থেকে 1945 সাল পর্যন্ত তিনি গটিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গাউস-ওয়েবার বিল্ডিং-এ সংস্কৃত প্রভাষক হিসেবে কাজ করেন।
যেদিন নাৎসি জার্মানি সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল, সেদিন তিনি এবং তার দুই জার্মান বন্ধু ক্যাম্পে গিয়েছিলেন। তার সংস্কৃত, পালি এবং বৌদ্ধধর্মের অধ্যাপক আর্নস্ট ওয়াল্ডশমিড্ট (1897-1985), ওয়েহরম্যাক্টে নিয়োগ পান, তাই অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এমিল সিগ (1866-1951) ওই বিষয়গুলো শেখানোর জন্য সেই অধ্যাপকের শূন্যস্থান পূরণ করেন। যেহেতু প্রফেসর সিগ টোচারিয়ানের ডিন ছিলেন, তাই তিনি প্রাচ্যের একজন ছাত্রের কাছে এই ভাষা সম্পর্কে জ্ঞান পৌঁছে দেওয়ার জন্য কোন চেষ্টাই করেননি। তবুও নিজের প্রচেষ্টায় জি জিয়ানলিন সংস্কৃত, পালি এবং টোচারিয়ান ভাষায় দক্ষ হয়ে উঠেছিলেন।
1942 সালে 7 বছর পড়াশোনার পর, তিনি ডক্টরেট ডিগ্রি পান এবং চীনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিলেন। যাইহোক তারপরে, জার্মান কর্তৃপক্ষ সেইসময় ওয়াং জিংওয়ের সহযোগী সরকারের বৈধতা স্বীকার করে। ফলস্বরূপ, চিয়াং কাই-শেকের নেতৃত্বে জাতীয়তাবাদী সরকারের কূটনৈতিক করপোরেশন সুইজারল্যান্ডে স্থানান্তরিত হয়েছিল। জি জিয়ানলিন সুইজারল্যান্ড চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন এবং পরে চীনে ফিরে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। তিনি গটিংজেন থেকে বার্লিনে যাওয়ার পরে সেখানে তিনি জানতে পারেন যে তার পরিকল্পনাটি সেই মুহূর্তে কার্যকর ছিল না। তাই তিনি রাজধানীতে(বার্লিন) কিছু দিন অবস্থান করেন এবং পরে গটিংজেনে আবার ফিরে যান।
যেহেতু তিনি ইতিমধ্যে ডিগ্রী পেয়ে গিয়েছিলেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে প্রভাষক হন। আবার ইতিমধ্যে জার্মান কর্তৃপক্ষ 1941 সালে ওয়াং জিংওয়েই এর সহযোগী সরকারের বৈধতা স্বীকার করেছিল, তাই চীনা নাগরিকদের জার্মানিতে অধ্যয়ন চালিয়ে যাওয়া এবং বসবাস করা একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। যেহেতু তিনি তার পাসপোর্টে ওয়াং জিংওয়ের সহযোগী সরকারের সীলমোহর লাগিয়ে রাখতে চাননি, তাই তিনি এবং কয়েকজন চীনা ছাত্র দেশহীন মানুষের মর্যাদার জন্য আবেদন করার সিদ্ধান্ত নেন।
তিনি একজন বিদেশী ছাত্র হিসাবে বেশ পরিচিত ছিলেন যিনি রাজনৈতিক ধারণাগুলি নিজের কাছেই রাখতেন।তাই কিছু জার্মান যারা হিটলার এবং তার শাসনের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রাখত, তারা ওনার সাথে কথা বলত এবং হিটলারের শাসন সম্পর্কে তাদের সত্যিকারের মতামত প্রকাশ করতো। তিনি আর বাকি গোটিংজেনের স্থানীয়দের মতোই, মিত্র বাহিনীর দ্বারা শহরটিতে বোমা হামলার সম্মুখীন হন। তিনি যুদ্ধের সময় খাদ্যের অভাবও দেখেছিলেন। যুদ্ধ থামার পর, তিনি মিত্র দেশগুলির নাগরিক হিসাবে, মুক্তিদাতাদের কাছ থেকে মাংস ও ভাত পেতেন এবং তিনি তার জার্মান বাড়িওয়ালার সাথে খাবার ভাগ করে নিতেন।
