![]() |
| Israel–Iran escalation reshaping Middle East geopolitics |
Why This Matters for India
দুই হাজার পঁচিশ সালের ডিসেম্বর মাসে আবারও নতুন করে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে ইসরায়েল ও ইরানের সংঘাত। এই উত্তেজনা শুধুমাত্র মধ্যপ্রাচ্যের সমস্যা নয়—এর সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে ভারতের অর্থনীতি, জ্বালানি নিরাপত্তা এবং দীর্ঘমেয়াদি ভূরাজনৈতিক কৌশলের উপর।
বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই সংঘাত পূর্ণমাত্রার যুদ্ধে রূপ নেয় এবং যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিক হস্তক্ষেপ করে, তবে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি একশো পঞ্চাশ থেকে তিনশো ডলারে পৌঁছাতে পারে। এর ফলে ভারতের মুদ্রাস্ফীতি, জিডিপি প্রবৃদ্ধি, রুপি–ডলার বিনিময় হার এবং সরকারি ভর্তুকি কাঠামো মারাত্মক চাপের মুখে পড়বে।
ইসরায়েল–ইরান সংঘাত বাড়লে ভারতের জন্য সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হলো তেলের দাম বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি, রুপির অবমূল্যায়ন এবং স্ট্রেইট অফ হরমুজ নির্ভরতা।
এই লেখায় বিশ্লেষণ করা হয়েছে—
-
কেন ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানের উপর হামলার জন্য চাপ দিচ্ছে
-
Donald Trump প্রশাসনের প্রকৃত অবস্থান কী
-
স্ট্রেইট অফ হরমুজ বন্ধ হলে ভারতের উপর কী ধরনের অর্থনৈতিক ধাক্কা আসতে পারে
-
এবং কেন এই সংঘাত ভারতের জন্য একটি “স্ট্রাকচারাল রিস্ক”
The Israel–Iran Conflict Explained in Simple Terms
ইসরায়েল ও ইরানের দ্বন্দ্ব মূলত আঞ্চলিক আধিপত্যের লড়াই। এই শত্রুতার শিকড় লুকিয়ে আছে উনিশশো ঊনআশি সালের ইরানি ইসলামি বিপ্লবে।
ইরানের শাহ শাসনের সময়ে ইসরায়েলের সঙ্গে তেহরানের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিল। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের পর ইরান নিজেকে এমন একটি রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে, যার আদর্শিক অবস্থান ইসরায়েলের অস্তিত্বের বিরোধী।
বর্তমানে এই সংঘাত তিনটি স্তরে পরিচালিত হয়—
এক. পারমাণবিক কর্মসূচি
ইসরায়েল বিশ্বাস করে, ইরান পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে চাইছে, যা তাদের অস্তিত্বের জন্য সরাসরি হুমকি। ইরান অবশ্য দাবি করে, তাদের কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং পরমাণু শক্তি চুক্তির আওতায় বৈধ।
দুই. প্রক্সি যুদ্ধ
ইরান সরাসরি যুদ্ধ না করে হামাস, হিজবুল্লাহ এবং হুথি বিদ্রোহীদের মতো গোষ্ঠীর মাধ্যমে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালায়।
তিন. আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তার
ইরাক, সিরিয়া, ইয়েমেন এবং উপসাগরীয় অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের জন্য দুই দেশ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আসছে।
দুই হাজার পঁচিশ সালের মাঝামাঝি এসে এই সমীকরণ বদলে যায়। হিজবুল্লাহ দুর্বল হয়, সিরিয়ায় আসাদ সরকারের পতন ঘটে, এবং ইসরায়েল মনে করে—এটাই ইরানের মূল সক্ষমতার উপর আঘাত হানার সেরা সময়।
Why Israel Is Pressuring the US to Strike Iran
ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো—তারা একা ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস করতে পারবে না।
ইরানের ফোরদো ইউরেনিয়াম এনরিচমেন্ট ফ্যাসিলিটি পাহাড়ের গভীরে অবস্থিত। এই স্থাপনাটি ধ্বংস করতে প্রয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের হাতে থাকা বিশেষ বাঙ্কার-বাস্টার বোমা, যা কেবলমাত্র আমেরিকার বি-টু স্টেলথ বোমারু বিমান বহন করতে পারে।
এই কারণেই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী মনে করেন—
-
সময় দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে
-
ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আবার শক্তিশালী হচ্ছে
-
কূটনীতি শুধুমাত্র তখনই কাজ করবে, যখন সামরিক হুমকি বিশ্বাসযোগ্য হবে
ইসরায়েলের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য শুধু পারমাণবিক কর্মসূচি থামানো নয়, বরং ইরানি শাসনব্যবস্থাকে এমনভাবে দুর্বল করা, যাতে ভেতর থেকে বিদ্রোহ দানা বাঁধে।
Trump’s Iran Policy: Victory Claimed, Risk Remains
United States-এর বর্তমান অবস্থান অত্যন্ত জটিল।
একদিকে ট্রাম্প প্রকাশ্যে বলেছেন—ইরান কখনও পারমাণবিক অস্ত্র পাবে না। অন্যদিকে, ডিসেম্বর দুই হাজার পঁচিশে প্রকাশিত নতুন ন্যাশনাল সিকিউরিটি স্ট্র্যাটেজিতে ইরানকে তুলনামূলকভাবে কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এই নথিতে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে—
-
চীনের সঙ্গে প্রতিযোগিতা
-
মধ্যপ্রাচ্য থেকে ধীরে ধীরে সরে আসা
-
মার্কিন জ্বালানি স্বয়ংসম্পূর্ণতা
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে জুন দুই হাজার পঁচিশের হামলায় ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু একই সঙ্গে নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখা হয়েছে, যা ভবিষ্যৎ সংঘাতের সম্ভাবনা পুরোপুরি দূর করে না।
June 2025 War: What Actually Happened?
দুই হাজার পঁচিশ সালের তেরোই জুন শুরু হয় Operation Rising Lion।
এই অভিযানে—
-
দুইশোর বেশি ইসরায়েলি বিমান অংশ নেয়
-
নাতাঞ্জ, ইসফাহান এবং ফোরদোর মতো পারমাণবিক স্থাপনা লক্ষ্যবস্তু হয়
-
একাধিক ইরানি জেনারেল ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হন
ইরান পাল্টা হামলায় শতাধিক ব্যালিস্টিক মিসাইল ছোড়ে ইসরায়েলের শহরগুলোর দিকে। যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তায় বেশিরভাগ হামলা প্রতিহত হয়।
বাইশে জুন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে এবং বি-টু বোমারু বিমানের মাধ্যমে ইরানের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় হামলা চালায়।
চব্বিশে জুন যুদ্ধবিরতি ঘোষণা হলেও গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়—ইরানের কর্মসূচি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়নি।
Oil Market Shock & Strait of Hormuz Risk
Strait of Hormuz বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি চোকপয়েন্ট।
এই সরু জলপথ দিয়ে—
-
বিশ্বের প্রায় এক-চতুর্থাংশ সামুদ্রিক তেল
-
মোট এলএনজির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ
-
এবং বৈশ্বিক তেল ব্যবহারের প্রায় বিশ শতাংশ পরিবাহিত হয়
জুন যুদ্ধের সময় তেলের দাম একাত্তর ডলার থেকে একাশি ডলারের উপরে উঠে যায়। যুদ্ধবিরতির পর দাম নামলেও বিশ্লেষকরা সতর্ক—নতুন সংঘাত হলে দাম সহজেই একশো পঞ্চাশ ডলার ছুঁতে পারে।
Impact on India’s Economy: A Perfect Storm
India’s Oil Dependency Crisis
ভারত তার মোট অপরিশোধিত তেলের প্রায় পঁচাশি শতাংশ আমদানি করে। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক আসে হরমুজ প্রণালী দিয়ে।
এর অর্থ—
-
উৎস বদলালেও দাম বাড়বে
-
রাশিয়া থেকে তেল নিলেও গ্লোবাল প্রাইস শক এড়ানো যাবে না
Macroeconomic Fallout
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং অর্থনৈতিক গবেষণা সংস্থাগুলির হিসাব অনুযায়ী—
| Oil Price Increase | Impact on India |
|---|---|
| প্রতি দশ ডলার বৃদ্ধি | জিডিপি − শূন্য দশমিক তিন শতাংশ |
| প্রতি দশ ডলার বৃদ্ধি | মুদ্রাস্ফীতি + শূন্য দশমিক চার শতাংশ |
তেলের দাম পঁচাত্তর থেকে পঁচানব্বই ডলারে গেলে—
-
প্রবৃদ্ধি কমবে
-
মুদ্রাস্ফীতি বাড়বে
-
সুদের হার বাড়ানোর চাপ তৈরি হবে
এটাই হলো ক্লাসিক Stagflation Trap।
Geopolitical Cost for India
Chabahar Port Under Threat
ভারত ইরানের চাবাহার বন্দরে সাতশো মিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। এই বন্দর পাকিস্তানকে বাইপাস করে মধ্য এশিয়ায় পৌঁছানোর একমাত্র বাস্তব রাস্তা।
ইরান দুর্বল হলে—
-
প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়বে
-
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপ বাড়বে
-
ভারতের মধ্য এশিয়া কৌশল ক্ষতিগ্রস্ত হবে
Pakistan’s Strategic Gain
একটি দুর্বল ইরান মানে—
-
পাকিস্তানের উপর চাপ কম
-
আফগানিস্তানে ভারতের প্রভাব আরও দুর্বল
-
চীন-পাকিস্তান জোট আরও শক্তিশালী
Strategic Recommendations for India
Short Term Strategy for India (0–6 Months)
-
Expand Strategic Petroleum Reserves
-
Secure alternative LNG contracts
-
Naval protection for oil shipping
Medium Term Strategy for India (6–18 Months)
-
Diversify energy import geography
-
Accelerate INSTC connectivity
-
Protect Chabahar through diplomacy
-
Strengthen Israel–India tech cooperation
Final Conclusion: Why India Must Prepare Now
ইসরায়েল–ইরান সংঘাত ভারতের জন্য তাৎক্ষণিক যুদ্ধের ঝুঁকি নয়, কিন্তু এটি ভারতের অর্থনৈতিক দুর্বলতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করে।
ভারতের সমস্যাটি সাময়িক নয়—এটি কাঠামোগত। যতদিন পর্যন্ত তেলের উপর নির্ভরতা পঁচাশি শতাংশ থাকবে এবং হরমুজ প্রণালীর উপর অর্ধেক আমদানি নির্ভর করবে, ততদিন মধ্যপ্রাচ্যের যেকোনো আগুন ভারতের অর্থনীতিকে পুড়িয়ে দিতে পারে।
এই কারণেই ভারতের নীতিনির্ধারকদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে—যুদ্ধের জন্য নয়, বরং অনিশ্চয়তার জন্য।
People Also Ask
- ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধ হলে ভারতের তেলের দাম কত বাড়তে পারে?
- স্ট্রেইট অফ হরমুজ বন্ধ হলে ভারতের কী হবে?
- ইসরায়েল–ইরান সংঘাতে রুপির উপর প্রভাব কী?
- চাবাহার বন্দরের ভবিষ্যৎ কী?
- ভারত কীভাবে এই সংকট থেকে রক্ষা পেতে পারে?
ইসরায়েল–ইরান যুদ্ধ ভারতের জন্য শুধুমাত্র একটি বৈদেশিক সংকট নয়—এটি ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামোর দুর্বলতা প্রকাশ করে। তেলের উপর অতিরিক্ত নির্ভরতা যতদিন থাকবে, ততদিন এই ঝুঁকি থেকেই যাবে।
