বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪): ইতিহাস, কারণ, ফলাফল ও আল্লাহাবাদ চুক্তির সম্পূর্ণ বিশ্লেষণ

ভূমিকা: ভারতীয় ভাগ্যের মোড় ঘোরানো যুদ্ধ

British artillery and infantry in Buxar war

১৭৬৪ সালের ২২–২৩ অক্টোবর গঙ্গার তীরে ছোট্ট শহর বক্সারের কাছে সংঘটিত বক্সারের যুদ্ধ শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ ছিল না—এটি ছিল ভারতীয় ইতিহাসের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট, যেখানে ভারতীয় উপমহাদেশের রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ এক ধাক্কায় স্থানান্তরিত হয় ভারতীয় শক্তিশালী নবাব ও সম্রাটদের কাছ থেকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে।

এই যুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছিল—

  • ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সেনাবাহিনী, নেতৃত্বে মেজর হেক্টর মনরো
  • এবং ভারতীয় তিন প্রধান শক্তির জোট:
    • মীরকাশিম (নবাব, বাংলা)
    • শুজাউদ্দৌলা (নবাব, আওধ/অযোধ্যা)
    • শাহ আলম–দ্বিতীয় (মুঘল সম্রাট)

সংখ্যায় ব্যাপক পিছিয়ে থাকলেও—প্রায় ৭০০০ ব্রিটিশ সৈন্য বনাম ৪০,০০০–৬০,০০০ ভারতীয় সেনা—ব্রিটিশরা জয়লাভ করে।
এই বিজয় শুধু সামরিক নয়; এটি ব্রিটিশদের হাতে বঙ্গ, বিহার ও ওড়িশার করআদায় (দেওয়ানি) অধিকার তুলে দেয়, এবং ভারতীয় ভূখণ্ডে ব্রিটিশ উপনিবেশ স্থাপনের মজবুত ভিত্তি তৈরি করে।

🔍 Featured Snippet: বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪) – মূল তথ্য এক নজরে

বক্সারের যুদ্ধ (Battle of Buxar 1764) অনুষ্ঠিত হয় ২২–২৩ অক্টোবর, যেখানে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি মাত্র ৭,০০০ সৈন্য নিয়ে মীরকাশিম, শুজাউদ্দৌলা ও শাহ আলম–দ্বিতীয়-এর ৪০,০০০+ যৌথ বাহিনীকে পরাজিত করে। এই বিজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশরা বঙ্গ, বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি অধিকার অর্জন করে এবং ভারতের উপর উপনিবেশিক শাসন প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়। এটি ভারতীয় ইতিহাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ Turning Point হিসেবে বিবেচিত।

  • 📅 তারিখ: ২২–২৩ অক্টোবর ১৭৬৪
  • 📍 স্থান: বক্সার, গঙ্গাতীর, বর্তমান বিহার
  • ⚔️ ব্রিটিশ বাহিনী: ৭,০০০ সৈন্য (নেতৃত্বে মেজর হেক্টর মনরো)
  • 🕌 ভারতীয় জোট বাহিনী: ৪০,০০০+ সৈন্য (মীরকাশিম, শুজাউদ্দৌলা, শাহ আলম–দ্বিতীয়)
  • 🏆 ফলাফল: ব্রিটিশ বিজয় ও দেওয়ানি অধিকার লাভ
  • 📜 পরবর্তী ঘটনা: ১৭৬৫ সালের আল্লাহাবাদ চুক্তি – British Colonial Rule-এর সূচনা

এই যুদ্ধের মাধ্যমে ভারতের প্রশাসন, অর্থনীতি ও রাজনীতির উপর ব্রিটিশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান থেকে সামরিক-রাজনৈতিক শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।


১. সংঘর্ষের পূর্বাভাস: কীভাবে শুরু হলো উত্তেজনার আগুন

১৭৫৭: পলাশীর যুদ্ধ ও মীরজাফরের উত্থান

পলাশীর যুদ্ধের পর বাংলার নবাব হিসেবে মীরজাফরকে বসিয়ে ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলা শাসনের অঘোষিত মালিক বনে যায়। কিন্তু মীরজাফর ধীরে ধীরে ব্রিটিশ নিয়ন্ত্রণকে চ্যালেঞ্জ করতে শুরু করেন।

তিনি ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক জোরদার করতে চেষ্টা করেন—যা ব্রিটিশদের জন্য ছিল স্পষ্ট হুমকি।
পরিণতিতে, ১৭৬০ সালে ব্রিটিশরা মীরজাফরকে সিংহাসনচ্যুত করে মীরকাশিমকে নবাব বানায়, মনে করে সে হবে তাঁদের পুতুল শাসক।


২. মীরকাশিমের উত্থান: স্বাধীনতার স্বপ্ন ও ব্রিটিশদের উদ্বেগ

মীরকাশিম: পুতুল নবাব নন, স্বনির্ভর শাসক

মীরকাশিম ক্ষমতায় আসার পরই বুঝতে পারেন—ব্রিটিশদের দাদাগিরির সামনে দাঁড়াতে হলে তাঁকে চাই শক্তিশালী সামরিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা।

রাজধানী স্থানান্তর: মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গের

  • ব্রিটিশদের নজরদারি থেকে দূরে থাকতে
  • নিজস্ব সামরিক ঘাঁটি শক্তিশালী করতে

তিনি রাজধানী সরিয়ে নেন মুঙ্গেরে। এখানে তিনি একটি শক্তিশালী দুর্গ, আধুনিক অস্ত্রাগার ও ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ করেন।

প্রশাসনিক ও সামরিক সংস্কার

তিনি:

✔ প্রশাসন পুনর্গঠন করেন
✔ নিজের প্রতি অনুগত কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেন
✔ ইউরোপীয় ধাঁচের সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন
গুরগিন খান–এর মতো বিদেশি সামরিক বিশেষজ্ঞকে নিয়োগ দেন
✔ কামান, রাইফেল ও আর্টিলারি ব্যবহারে জোর দেন

এটি ছিল ব্রিটিশদের সরাসরি চ্যালেঞ্জ।


৩. মূল সংঘর্ষের কারণ: দস্তক ও শুল্কবিষয়ক অন্যায়

দস্তক (মুক্তপত্র) নিয়ে ব্রিটিশদের বেপরোয়া সুবিধা

মুঘল সম্রাটদের দেওয়া দস্তক ব্যবহার করে ব্রিটিশরা বাংলায় শুল্ক না দিয়ে ব্যবসা করত।
কিন্তু—

  • ভারতীয় ব্যবসায়ীদের শুল্ক দিতে হতো
  • ফলে তারা প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ত
  • বাংলা রাজস্বও কমতে থাকে

মীরকাশিমের বিপ্লবী ঘোষণা: সব শুল্ক বাতিল

তিনি ঘোষণা করেন—

“ব্রিটিশ বা ভারতীয়—কেউই কোনো অভ্যন্তরীণ শুল্ক দেবে না।”

এতে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা লাভবান হলেও ব্রিটিশরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।
কারণ তারা আর একচেটিয়া সুবিধা পাচ্ছিল না।

ব্রিটিশ প্রতিক্রিয়া

কোম্পানি স্পষ্ট হুমকি দেয়—

“দস্তক পুনর্বহাল করো, না হলে যুদ্ধ হবে।”

মীরকাশিম নতি স্বীকার করেন না।
যুদ্ধ-পরিস্থিতি স্পষ্ট হয় ১৭৬৩ সালে।


৪. যুদ্ধের দিকে ধাবিত ঘটনাবলি (১৭৬৩–১৭৬৪)

এক ধারাবাহিক সংঘর্ষে মীরকাশিমের বাহিনী ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে।
নিজেকে টিকিয়ে রাখতে তিনি ভারতের বাকি শক্তিগুলোর সাথে হাত মেলান—

  • আওধের নবাব শুজাউদ্দৌলা
  • মুঘল সম্রাট শাহ আলম–দ্বিতীয়

এ তিন শক্তি একত্রিত হয়ে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শেষ বড় প্রতিরোধ গড়ে তোলেন।


৫. বক্সারের যুদ্ধ: শক্তির অনুপাত ও নেতৃত্ব

⚔️ Comparison: ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বনাম ভারতীয় জোট (বক্সারের যুদ্ধ ১৭৬৪)

বিষয় ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতীয় জোট বাহিনী
সামরিক শক্তি প্রায় ৭,০০০ সৈন্য ৪০,০০০–৬০,০০০ সৈন্য
নেতৃত্ব মেজর হেক্টর মনরো মীরকাশিম, শুজাউদ্দৌলা, শাহ আলম–দ্বিতীয়
সামরিক প্রস্তুতি উন্নত আর্টিলারি, আধুনিক ইউরোপীয় কৌশল সমন্বয়হীন কৌশল, ভিন্ন লক্ষ্য, বিভক্ত নেতৃত্ব
সংগঠন ও শৃঙ্খলা অত্যন্ত শৃঙ্খলিত ও প্রশিক্ষিত বাহিনী সংখ্যাগতভাবে বড় কিন্তু দুর্বল সমন্বয়
লক্ষ্য ভারতে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ বিস্তার ব্রিটিশ আগ্রাসন প্রতিহত করা, আঞ্চলিক ক্ষমতা বজায় রাখা
ফলাফল নির্ণায়ক বিজয়; দেওয়ানি অধিকার লাভ সম্পূর্ণ পরাজয়; জোট ভেঙে পড়ে
ঐতিহাসিক প্রভাব ভারতে ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সূচনা মুঘল ক্ষমতার পতন ও আঞ্চলিক স্বাধীনতার অবসান

ব্রিটিশ বাহিনী — ৭,০০০ সৈন্য

  • ইউরোপীয় সেনা
  • দেশীয় সিপাহি
  • শক্তিশালী আর্টিলারি
  • নেতৃত্বে মেজর হেক্টর মনরো

ভারতীয় জোট — ৪০,০০০–৬০,০০০ সৈন্য

✔ মীরকাশিমের আধুনিক সেনা
✔ আওধের নবাবের বিশাল বাহিনী
✔ মুঘল সম্রাটের বাহিনী
✔ লক্ষ্যণীয়:

  • একক নেতৃত্ব ছিল না
  • লক্ষ্য ও পরিকল্পনা আলাদা

৬. যুদ্ধের ধাপ: ২২–২৩ অক্টোবর ১৭৬৪

যুদ্ধের প্রারম্ভ

ভোরে ভারতীয় বাহিনী ব্রিটিশ শিবিরে আক্রমণ শুরু করে।
মেজর মনরো দ্রুত সেনাদের লাইন গঠনে নির্দেশ দেন।

ব্রিটিশ আর্টিলারির মারাত্মক প্রভাব

তাদের কামানের গোলা—

  • ভারতীয় সেনাদের বিক্ষিপ্ত করে
  • ঘোড়সওয়ার আক্রমণ ভেঙে দেয়
  • জোটবাহিনীর সারি ভেদ করে বিপর্যয় সৃষ্টি করে

সুসংগঠিত ব্রিটিশ কৌশল

মনরো—

✔ বাহিনীকে তিনভাগে ভাগ করেন
✔ সামনের সারিতে কামান স্থাপন করেন
✔ শুজাউদ্দৌলার শক্তি ভাঙতে আলাদা আক্রমণ চালান
✔ শত্রুর ফাঁক দেখলে দ্রুত অগ্রসর হন

এদিকে ভারতীয় সেনারা সমন্বয়হীন হয়ে পড়ে।

জোটের পতন

  • শুজাউদ্দৌলা নিজের অস্ত্রাগার ধ্বংস করে পালিয়ে যান
  • শাহ আলম দ্বিতীয় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকেন
  • মীরকাশিম প্রচুর রত্ন–সম্পদ নিয়ে পলায়ন করেন

এভাবে ভারতীয় প্রতিরোধ ভেঙে পড়ে।


৭. যুদ্ধের পরিণতি: ভারতীয় ইতিহাসের গতিপথ বদলে গেল

মীরকাশিম

  • পশ্চিমে পালিয়ে যান
  • ১৭৭৭ সালে নিঃস্ব অবস্থায় মৃত্যু

শুজাউদ্দৌলা

  • আওধের কোটি কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন
  • ব্রিটিশদের অধীনস্থ শাসক হয়ে পড়েন

শাহ আলম–দ্বিতীয়

  • ব্রিটিশদের “পেনশনভোগী সম্রাট” হয়ে পড়েন
  • নিজের সাম্রাজ্যের করভার ব্রিটিশদের দ্বারা নির্ধারিত হয়

৮. ১৭৬৫ সালের আল্লাহাবাদ চুক্তি: ব্রিটিশ শাসনের আনুষ্ঠানিক সূচনা

চুক্তির মূল শর্ত

১. ব্রিটিশদের দেওয়ানি অধিকার

বঙ্গ, বিহার, ওড়িশার কর সংগ্রহের অধিকার ব্রিটিশদের হাতে যায়।
এটি ভারতের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা হারানোর সবচেয়ে বড় ধাপ।

২. সম্রাটের জন্য ক্ষুদ্র বার্ষিক ভাতা

শাহ আলম–দ্বিতীয়কে বছরে মাত্র ২৬ লাখ টাকা ভাতা দেওয়া হতো।

৩. আওধের নবাবের আর্থিক দুর্বলতা

  • যুদ্ধক্ষতিপূরণ ৫০ লাখ টাকা
  • ব্রিটিশদের সৈন্য ব্যবহার করলে আরও টাকা দিতে হবে
    এর ফলে আওধ ব্রিটিশদের হাতে অর্থনৈতিকভাবে জিম্মি হয়ে পড়ে।

৯. বক্সারের যুদ্ধ কেন ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ?

১. ব্রিটিশরা পেল রাজস্ব–নির্ভর সামরিক শক্তি

বঙ্গের বিপুল সম্পদ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে—

✔ ব্রিটিশ শাসনের অর্থভাণ্ডার
✔ ভবিষ্যৎ যুদ্ধ পরিচালনা
✔ উপনিবেশ বিস্তারের মূল শক্তি

দিয়ে দিল।

২. ভারতীয় সামরিক দুর্বলতার বাস্তবতা প্রকাশ

সংখ্যায় বড় হলেও—

  • সমন্বয়হীন নেতৃত্ব
  • আধুনিক আর্টিলারির ঘাটতি
  • ভিন্ন লক্ষ্য
  • দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অভাব

ভারতীয় শক্তিকে ব্যর্থ করে দেয়।

৩. মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের আনুষ্ঠানিক মুহূর্ত

বক্সারের পর মুঘল সম্রাট কার্যত ব্রিটিশদের বেতনভোগী প্রশাসক হয়ে পড়েন।

৪. ভারতের ভাগ্য নির্ধারণকারী যুদ্ধ

বক্সার না হলে—

  • বাংলা ব্রিটিশদের রাজস্বভাণ্ডার হতো না
  • ব্রিটিশ সেনাবাহিনী এত শক্তিশালী হতো না
  • উপনিবেশ স্থাপন বিলম্বিত বা ব্যর্থ হতে পারত

🔎 Fact vs Myth — বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪)

নিচে সত্য (Fact)মিথ (Myth) আলাদা করে দেওয়া হল — দ্রুত দেখুন, সামরিক ও রাজনৈতিক কনটেক্সট অনুযায়ী ব্যাখ্যাও দেয়া আছে।

✅ FACTS (সত্য)

১. ব্রিটিশরা সংখ্যায় কম হলেও জিতেছিল।

ব্রিটিশ বাহিনী প্রায় ৭,০০০, আর ভারতীয় জোট ৪০,০০০–৬০,০০০—তবুও ব্রিটিশ কৌশল, শৃঙ্খলা ও আর্টিলারি বিজয় নিশ্চিত করেছিল।

২. আল্লাহাবাদ চুক্তি (১৭৬৫) দেওয়ানি অধিকার আনল।

চুক্তির ফলে কোম্পানিকে বঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা থেকে আয় সংগ্রহের স্বীকৃতি মিলল—এটি উপনিবেশিক ভিত্তি তৈরির মূল পদক্ষেপ।

৩. মীরকাশিম আধুনিকায়ন করছিলেন।

তিনি ইউরোপীয় কৌশল ও আর্টিলারি গ্রহণ করছিলেন—কিন্তু ঐক্যহীনতার কারণে ব্যর্থতা এড়ানো যায়নি।

৪. অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণই রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণে রূপ নেয়।

দস্তক ও শুল্ক-নীতি নিয়ে সংঘাত সাম্রাজ্যিক বৃদ্ধির সরাসরি কারণ ছিল।

❌ MYTHS (মিথ)

১. মিথ: সংখ্যায় বড় হওয়ায় ভারতের জোট নিশ্চিত জিতত।

সত্য: সংখ্যাগরিষ্ঠতা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু নেতৃত্ব, সমন্বয় ও প্রযুক্তি (আর্টিলারি) আরও স্থায়ী ভূমিকা রাখে।

২. মিথ: বক্সার যুদ্ধই একমাত্র কারণ ছিল ব্রিটিশ শাসনের উদয়।

সত্য: বক্সার যুদ্ধ নির্ণায়ক হলেও রাজনৈতিক কৌশল, অর্থনৈতিক শোষণ ও পরবর্তী নীতিই পুরো উপনিবেশিক কাঠামো গঠন করেছে।

৩. মিথ: মীরকাশিমের সাফল্য হলে ব্রিটিশরা অবশ্যই হেরে যেত।

সত্য: মীরকাশিমের সংস্কার ছিল কার্যকর কিন্তু জোটের অমিল ও সময়োপযোগী সমন্বয়ের অভাব থাকায় পরিবর্তন সীমাবদ্ধ ছিল।

৪. মিথ: সামরিক প্রযুক্তিই একমাত্র নির্ধারক।

সত্য: সামরিক প্রযুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কূটনীতি, অর্থনৈতিক শক্তি ও প্রশাসনিক দক্ষতাও মিলিয়ে সিদ্ধান্ত গঠন করে।


১০. উপসংহার: বক্সারের যুদ্ধ ভারতীয় ইতিহাসে মোড় ঘোরানো মুহূর্ত

বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪) শুধু একটি সামরিক সংঘর্ষ নয়—এটি ছিল ভারতীয় উপমহাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণকারী ঘটনা।
এই যুদ্ধে ভারতীয় শক্তির পরাজয় মানে ছিল—

  • রাজনৈতিক সার্বভৌমত্বের ক্ষতি
  • অর্থনৈতিক সম্পদের নিয়ন্ত্রণ ব্রিটিশদের হাতে যাওয়া
  • মুঘল ক্ষমতার অপসারণ
  • ব্রিটিশ রাজের ভিত্তি স্থাপন

এ যুদ্ধের ফলেই পরবর্তী ১৮৩ বছর ভারত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ছিল।

বক্সারের যুদ্ধ আমাদের শেখায়:

✔ সংখ্যায় বড় হওয়া যথেষ্ট নয়
✔ ঐক্য, পরিকল্পনা, আধুনিক কৌশল ও নেতৃত্ব—এসবই যুদ্ধে বিজয়ী করে
✔ ভারতীয় দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ব্রিটিশরা সামরিক থেকে প্রশাসনিক শক্তি হয়ে ওঠে

বক্সারের যুদ্ধ না হলে ভারতীয় ইতিহাস সম্পূর্ণ ভিন্ন হতে পারত।

NCERT / Government sources

❓ People Also Ask — বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪)

১. বক্সারের যুদ্ধ কেন গুরুত্বপূর্ণ ছিল?

বক্সারের যুদ্ধ (Battle of Buxar 1764) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে বঙ্গ, বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি অধিকার দেয়। এর মাধ্যমে ব্রিটিশরা ভারতের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়—যা উপনিবেশিক শাসনের মূল ভিত্তি।

২. বক্সারের যুদ্ধে কোন কোন শক্তি অংশ নেয়?

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিপক্ষে যৌথ জোটে ছিল—মীরকাশিম (বাংলার নবাব), শুজাউদ্দৌলা (অওধ), এবং মুঘল সম্রাট শাহ আলম–দ্বিতীয়। সংখ্যায় বড় হলেও জোটের সমন্বয়হীনতাই পরাজয়ের মূল কারণ।

৩. বক্সারের যুদ্ধের প্রধান কারণ কী ছিল?

মূল কারণ ছিল দস্তক ও শুল্ক-বিষয়ক বিরোধ। ব্রিটিশরা করমুক্ত বাণিজ্য সুবিধা (Dastak) অপব্যবহার করছিল, যা মীরকাশিম সমান শুল্ক নীতির মাধ্যমে বন্ধ করে দেন। এতে সংঘর্ষ তীব্র হয়ে যুদ্ধ শুরু হয়।

৪. আল্লাহাবাদ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশরা কী পেল?

আল্লাহাবাদ চুক্তি (Treaty of Allahabad 1765) অনুযায়ী ব্রিটিশরা বাংলা, বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি অধিকার লাভ করে। এটি ভারতের সম্পদ ও রাজস্ব কোম্পানির হাতে তুলে দেয়।

৫. মীরকাশিম কেন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিলেন?

মীরকাশিম রাজনৈতিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে চেয়েছিলেন। তিনি প্রশাসন ও সেনাবাহিনী আধুনিক করেন এবং শুল্ক সমতা নীতি গ্রহণ করে ব্রিটিশ বিশেষ সুবিধা বাতিল করেন—যা সরাসরি সংঘর্ষ ডেকে আনে।

📘 Glossary / Important Terms — বক্সারের যুদ্ধ (১৭৬৪)

১. বক্সারের যুদ্ধ (Battle of Buxar 1764): ২২–২৩ অক্টোবর ১৭৬৪ সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বনাম মীরকাশিম, শুজাউদ্দৌলা ও শাহ আলম–দ্বিতীয়ের যৌথ বাহিনীর মধ্যে সংঘটিত নির্ণায়ক যুদ্ধ। ব্রিটিশ বিজয়ের ফলে দেওয়ানি অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।

২. ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (British East India Company): একটি বাণিজ্যিক সংস্থা যা বক্সারের পর রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক শক্তিতে পরিণত হয়ে ভারতের বিশাল অংশে শাসন প্রতিষ্ঠা করে।

৩. মীরকাশিম (Mir Qasim): বাংলার নবাব (১৭৬০–৬৩)। তিনি শুল্ক ব্যবস্থা বাতিল ও আধুনিক সেনাবাহিনী গঠনের মাধ্যমে ব্রিটিশ আধিপত্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন।

৪. দস্তক (Dastak): ব্রিটিশদের শুল্কমুক্ত বাণিজ্যের বিশেষ অনুমতি। ভারতীয় ব্যবসায়ীদের শুল্ক দিতে হলেও ব্রিটিশরা দস্তক দেখিয়ে কর এড়াতো—এটি মীরকাশিম-ব্রিটিশ সংঘর্ষের মূল কারণ।

৫. দেওয়ানি অধিকার (Diwani Rights): বাংলার (বিহার ও ওড়িশাসহ) রাজস্ব আদায়ের অধিকার। ১৭৬৫ সালে আল্লাহাবাদ চুক্তির মাধ্যমে ব্রিটিশদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। উপনিবেশিক শাসনের অর্থনৈতিক ভিত্তি তৈরি হয়।

৬. আল্লাহাবাদ চুক্তি (Treaty of Allahabad 1765): মুঘল সম্রাট শাহ আলম–দ্বিতীয়, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ও শুজাউদ্দৌলার মধ্যে স্বাক্ষরিত ত্রিপক্ষীয় চুক্তি। এর ফলেই কোম্পানি বাংলা, বিহার ও ওড়িশার দেওয়ানি অধিকার পায়।

৭. হেক্টর মনরো (Major Hector Munro): ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর প্রধান কমান্ডার যিনি বক্সারের যুদ্ধে কৌশলগত দক্ষতার মাধ্যমে জোট বাহিনীকে পরাজিত করেন।

৮. শুজাউদ্দৌলা (Shuja-ud-Daula): আওধের নবাব। বক্সারের যুদ্ধে বড় বাহিনী নিয়েও পরাজিত হন; পরবর্তীতে ব্রিটিশদের অত্যন্ত দামী ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য হন।

৯. শাহ আলম–দ্বিতীয় (Shah Alam II): মুঘল সম্রাট যিনি ব্রিটিশদের পরাস্ত করতে জোটে যোগ দেন, কিন্তু পরাজয়ের পর

📣 Stay Updated With More Historical Insights!

আপনি যদি ভারতের ইতিহাস, যুদ্ধ-বিশ্লেষণ, ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন, সামরিক কৌশল–এ আগ্রহী হন, তাহলে আমাদের ব্লগটি নিয়মিত পড়ে যান। নতুন পোস্ট, ব্যাখ্যা, ইনফোগ্রাফিক ও বিশ্লেষণ পেতে নিচে ক্লিক করুন।

🔔 Follow Now 📚 Read More Articles

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যদি আপনার কোনও বিষয়ে ডাউট থাকে বা কোনও বিষয় suggest করতে চান তাহলে মেল করুন!

নবীনতর পূর্বতন

banglafacts 4