প্রথম বিশ্বযুদ্ধের প্রসঙ্গ:
বিশ্বযুদ্ধ ১৯১৪ সালে শুরু হয়েছিল এবং তারপরে কেউই ধারণা করতে পারেনি যে যুদ্ধটি কতদিন চলবে। সকলেই আশা করেছিল যে যুদ্ধ দ্রুত শেষ হবে। বিশেষ করে শ্লিফেন পরিকল্পনার মাধ্যমে, জার্মানি দ্রুত ফ্রান্সকে পরাজিত করতে চেয়েছিল। তবে বাস্তবে যুদ্ধটি আরও দীর্ঘ এবং বিপজ্জনক হয়ে ওঠে, বিশেষ করে নতুন নতুন ফ্রন্ট এবং প্রযুক্তির আবির্ভাবের কারণে। নতুন নতুন যুদ্ধক্ষেত্র আফ্রিকা এবং মধ্যপ্রাচ্যে খোলা হয়েছিল এবং ১৯১৫ সালে ইতালি মিত্রপক্ষে যোগ দেওয়ার পর ইউরোপে একটি তৃতীয় ফ্রন্ট ইতালীয়-অস্ট্রিয়ান সীমান্তে তৈরি হয়।
নতুন অস্ত্রের ব্যবহার:
যুদ্ধ দীর্ঘ হওয়ার সাথে সাথে উভয় পক্ষই যুদ্ধের ধরণ পাল্টানোর নতুন উপায় খুঁজছিল। এর ফলস্বরূপ, ট্যাংক, বিমান, জেপেলিন, সাবমেরিন এবং রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার শুরু হয়। যদিও প্রথম দিকে এই অস্ত্রগুলো যুদ্ধের ফলাফল পরিবর্তনের আশা জাগিয়েছিল, বাস্তবে তারা যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ আরও বাড়িয়ে তুলেছিল। এগুলো যুদ্ধের কৌশল বদল করলেও, প্রায়ই অসহায় সাধারণ মানুষের উপরেও প্রভাব ফেলেছিল।
ট্যাংকের প্রাথমিক ব্যবহার:
যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ট্যাংকের গুরুত্ব অনেক বেড়েছিল, প্রথম বিশ্বযুদ্ধে তারা তুলনামূলকভাবে কম ভূমিকা পালন করেছিল। ১৯১৬ সালে সোম যুদ্ধক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো ট্যাংক ব্যবহার করা হয়। ব্রিটিশ এবং ফরাসিরা ধারণা করেছিল যে ট্যাংকগুলি ট্রেঞ্চের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়ে সৈন্যদের রক্ষা করতে পারবে। তবে বাস্তবে ট্যাংকগুলি খুব ধীরে চলে এবং কৌশলগত ভাবে খুব বেশি কার্যকর ছিল না।
বিমান এবং জেপেলিনের ভূমিকা:
প্রথম বিশ্বযুদ্ধে বিমান এবং জেপেলিন যুদ্ধের কৌশলে একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছিল। প্রথম দিকে তারা কেবল পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যবহার করা হলেও, পরে তারা আক্রমণাত্মক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হতে শুরু করে। যুদ্ধে প্লেনগুলির মধ্যে প্রথমে কোনো বন্দুক ছিল না, ফলে পাইলটদের মাঝে মাঝে বিমান থেকে একে অপরের দিকে গুলি চালানোর চেষ্টা করতে হত। পরে সিঙ্ক্রোনাইজড বন্দুকের উদ্ভাবন ঘটলে বিমান যুদ্ধে একটি নতুন যুগের সূচনা হয়।
রাসায়নিক অস্ত্রের ব্যবহার:
বিশ্বযুদ্ধে রাসায়নিক অস্ত্র একটি ভয়াবহ অধ্যায় হয়ে ওঠে। ফ্রিটজ হ্যাবার এবং ওয়ালথার নের্নস্টের মতো বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মতো ক্লোরিন গ্যাস ব্যবহার করে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুদের দুর্বল করার চেষ্টা করেন। যদিও রাসায়নিক অস্ত্রের প্রভাব ভয়ানক ছিল, তবুও তার কার্যকারিতা সীমিত ছিল। বাতাসের দিক পরিবর্তন করলে কখনও কখনও সৈন্যরা নিজেদের গ্যাস আক্রমণের শিকার হতো।